Seismic Zone: ভারতের ভূমিকম্পের ম্যাপে আমূল পরিবর্তন: জোন VI-এ হিমালয়, কলকাতা ও বাংলার অবস্থান কী? বাড়ি তৈরিতে কড়া নিয়ম
Seismic Zone Map: ভারতের ভূমিকম্প সুরক্ষা ব্যবস্থায় এক ঐতিহাসিক এবং বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস (BIS)-এর সদ্য প্রকাশিত ‘আর্থকোয়েক ডিজাইন কোড’ বা ভূমিকম্প প্রতিরোধী নকশার নিয়মাবলীতে (IS 1893:2025) দেশের ভূমিকম্প মানচিত্র বা সিসমিক জোন ম্যাপকে সম্পূর্ণ ঢেলে সাজানো হয়েছে। এই নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, ভারতের প্রায় ৬১ শতাংশ ভূখণ্ডই এখন মাঝারি থেকে উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকির আওতায় চলে এসেছে।
এই আপডেটের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো প্রথমবারের মতো ‘জোন VI’ (Zone VI) বা ষষ্ঠ জোনের অন্তর্ভুক্তি, যা সর্বোচ্চ ঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়। এতদিন পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ জোন ছিল ‘জোন V’।
জোন VI-এর বিপদসীমানায় হিমালয়
নতুন মানচিত্র অনুযায়ী, সমগ্র হিমালয় পর্বতমালাকে নবগঠিত ‘জোন VI’-এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আগে এই অঞ্চলটি জোন IV এবং V-এর মধ্যে বিভক্ত ছিল। কিন্তু মাটির নিচে টেকটনিক প্লেটের চাপ এবং দীর্ঘদিনের ভূতাত্ত্বিক গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা এই পুরো এলাকাকে একই রকম উচ্চ ঝুঁকিপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। দেরাদুন থেকে শুরু করে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত এই অংশে বড়সড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান: কতটা ঝুঁকিতে আমরা?
সাধারণ মানুষের মনে এখন একটাই প্রশ্ন—কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলি কোন জোনে পড়ল? ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস-এর নতুন নিয়মাবলী এবং ভৌগোলিক অবস্থান বিশ্লেষণ করে রাজ্যের পরিস্থিতি নিচে তুলে ধরা হলো:
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হন| অঞ্চল/শহর | সিসমিক জোন (সম্ভাব্য) | ঝুঁকির মাত্রা |
|---|---|---|
| দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার (উত্তরবঙ্গ) | জোন V / VI (নয়া বিন্যাসে) | অতি মারাত্মক ঝুঁকি |
| সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা | জোন IV | উচ্চ ঝুঁকি |
| কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকা | জোন III (বর্ডার লাইন জোন IV) | মাঝারি থেকে উচ্চ ঝুঁকি |
কলকাতার জন্য বিশেষ সতর্কতা: যদিও খাতায়-কলমে কলকাতা ‘জোন III’-এর অন্তর্গত, কিন্তু শহরের মাটি (Soft Soil) এবং পলল গঠনের কারণে এর ঝুঁকি ‘জোন IV’-এর মতোই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। নতুন কোডে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম চালু করা হয়েছে—“বাউন্ডারি রুল”। যদি কোনো শহর দুটি জোনের সীমানায় অবস্থিত হয়, তবে তাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উচ্চতর ঝুঁকির জোনে ফেলা হবে। কলকাতা যেহেতু সুন্দরবন (জোন IV) এবং উত্তরবঙ্গের উচ্চ ঝুঁকিপ্রবণ এলাকার কাছাকাছি, তাই সল্টলেক, নিউ টাউনের মতো নরম মাটির এলাকায় বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে এখন ‘জোন IV’-এর সুরক্ষা মানদণ্ড মেনে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
বাড়ি তৈরিতে কড়া নিয়ম (IS 1893:2025)
নতুন এই ডিজাইন কোডে শুধুমাত্র বড় অট্টালিকা নয়, সাধারণ বাড়ি এবং অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি করা হয়েছে:
- নন-স্ট্রাকচারাল উপাদান: বাড়ির ওজনের ১ শতাংশের বেশি ভারী কোনো জিনিস (যেমন বড় জলের ট্যাঙ্ক, ফলস সিলিং, ভারী এসি ইউনিট) ঝোলানো থাকলে, সেগুলিকে বিশেষভাবে ‘অ্যাঙ্কর’ বা আটকাতে হবে। যাতে ভূমিকম্পের সময় সেগুলি খসে পড়ে প্রাণহানি না ঘটায়।
- ক্রিটিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার: হাসপাতাল, স্কুল, এবং ব্রিজের মতো জরুরি পরিকাঠামো এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে বড় ভূমিকম্পের পরেও সেগুলি সচল থাকে।
- মাটির পরীক্ষা: নতুন নিয়মে মাটির ধরণ এবং তরলীকরণ বা ‘লিকুইফ্যাকশন’ (Liquefaction) সম্ভাবনার ওপর ভিত্তি করে বাড়ির ভিত মজবুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নতুন মানচিত্র কোনো আতঙ্কের বিষয় নয়, বরং এটি আমাদের সতর্ক হওয়ার বার্তা। ২০২৫ সালের এই কোড মেনে বাড়ি বানালে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।