পশ্চিমবঙ্গ

Smart Meter: বিদ্যুতের বিল কি এবার কমবে? স্মার্ট মিটার নিয়ে সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত

Smart Meter: পশ্চিমবঙ্গে সম্প্রতি স্মার্ট মিটার নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে বিভ্রান্তি ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছিল, অবশেষে রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তর তাতে হস্তক্ষেপ করেছে। সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে, আপাতত সাধারণ গ্রাহকদের বাড়িতে স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ স্থগিত রাখা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ মানুষ স্বস্তি পেলেও, প্রশ্ন উঠছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে।

কেন এই আকস্মিক স্থগিতাদেশ?

বেশ কিছুদিন ধরেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্মার্ট মিটার নিয়ে ভূরি ভূরি অভিযোগ আসছিল। বহু গ্রাহকের দাবি, নতুন মিটার বসানোর পর থেকেই তাদের বিদ্যুতের বিল অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। কোথাও বিল দ্বিগুণ, কোথাও বা তিনগুণ! এই নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভও দানা বাঁধছিল। সাধারণ মানুষের এই ভোগান্তির কথা মাথায় রেখেই রাজ্য সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আপাতত শুধুমাত্র সরকারি এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেই স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ চলবে।

স্মার্ট মিটার আসলে কী?

স্মার্ট মিটার হল একটি অত্যাধুনিক ডিজিটাল মিটার যা প্রথাগত অ্যানালগ মিটারের থেকে অনেকটাই আলাদা। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এটি রিয়েল-টাইমে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সঠিক হিসেব রাখতে পারে এবং সেই তথ্য সরাসরি বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থার কাছে পাঠিয়ে দেয়। এর ফলে মিটার রিডিং নেওয়ার জন্য আর বাড়িতে বাড়িতে লোক আসার প্রয়োজন হয় না এবং বিলও অনেক বেশি নির্ভুল হওয়ার কথা। গ্রাহকরাও নিজেদের বিদ্যুৎ ব্যবহার নিয়ে সচেতন হতে পারেন।

সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কেন এই বিরোধিতা?

তাত্ত্বিকভাবে স্মার্ট মিটারের একাধিক সুবিধা থাকলেও, বাস্তবে পশ্চিমবঙ্গের গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর হয়নি। অস্বাভাবিক বিলের পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় গ্রাহকদের চিন্তায় ফেলেছে:

সবার আগে খবরের আপডেট পান!

টেলিগ্রামে যুক্ত হন
  • প্রিপেড ব্যবস্থা: স্মার্ট মিটারগুলি মূলত প্রিপেড, অর্থাৎ মোবাইল ফোনের মতো আগে থেকে রিচার্জ করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হবে। অনেকের আশঙ্কা, এই ব্যবস্থায় হঠাৎ টাকা শেষ হয়ে গেলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে, যা চরম ভোগান্তির কারণ হবে। যদিও বিদ্যুৎ দপ্তর জানিয়েছে, ব্যালেন্স শূন্য হলেও তৎক্ষণাৎ লাইন কাটা হবে না, এমনকি ৩০০ টাকা পর্যন্ত নেগেটিভ ব্যালেন্সের সুযোগও দেওয়া হবে।
  • মিটারের খরচ: এই স্মার্ট মিটারগুলির দাম প্রচলিত মিটারের থেকে অনেক বেশি। প্রতিটি মিটারের দাম প্রায় ৭,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকা। যদিও এই খরচ সরাসরি গ্রাহকের থেকে নেওয়া হচ্ছে না, কিন্তু আশঙ্কা করা হচ্ছে যে পরোক্ষভাবে এই বিপুল খরচ গ্রাহকদের উপরই চাপানো হতে পারে।
  • “টাইম অফ ডে” ট্যারিফ: স্মার্ট মিটারের মাধ্যমে ‘টাইম অফ ডে’ (ToD) ট্যারিফ চালু হওয়ার কথা, যেখানে দিনের বিভিন্ন সময়ে বিদ্যুতের দাম বিভিন্ন হবে। যেমন, পিক আওয়ারে (সন্ধ্যা বা রাতে) বিদ্যুতের দাম বেশি হবে এবং দিনের বেলায় (সৌর ঘণ্টা) কম থাকবে। এর ফলে রাতের বেলা বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে বিল অনেকটাই বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ভবিষ্যৎ কী?

আপাতত স্মার্ট মিটার বসানো স্থগিত হওয়ায় সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে থাকলেও, বিদ্যুৎ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের এই প্রক্রিয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে কিনা, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। স্মার্ট মিটার ভবিষ্যতের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এবং এর সঠিক প্রয়োগে বিদ্যুৎ চুরি রোখা এবং সিস্টেম লস কমানো সম্ভব।

সরকার এবং বিদ্যুৎ দপ্তরকে এখন সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। কেন বিল বেশি আসছিল, সেই কারণ খুঁজে বের করে তার সমাধান করা এবং স্মার্ট মিটারের সুবিধাগুলো সহজভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই সাময়িক স্থগিতাদেশকে কাজে লাগিয়ে যদি একটি স্বচ্ছ এবং গ্রাহক-বান্ধব ব্যবস্থা তৈরি করা যায়, তবেই এই আধুনিক প্রযুক্তির সুফল সবাই পাবে।

WBPAY Team

আমাদের প্রতিবেদন গুলি WBPAY Team এর দ্বারা যাচাই করে লেখা হয়। আমরা একটি স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম যা পাঠকদের জন্য স্পষ্ট এবং সঠিক খবর পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য এবং সাংবাদিকতার মান সম্পর্কে জানতে, অনুগ্রহ করে আমাদের About us এবং Editorial Policy পৃষ্ঠাগুলি পড়ুন।
Back to top button