Shramashree Scheme: পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য “শ্রমশ্রী” প্রকল্পে কীভাবে আবেদন করবেন? দেখুন বিস্তারিত

Shramashree Scheme: পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের আর্থিক সুরক্ষা এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা প্রদানের লক্ষ্যে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ‘শ্রমশ্রী’ নামক এই নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে, যে সমস্ত শ্রমিকরা ভিন রাজ্য থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন, তাদের পাশে দাঁড়ানোই হলো মূল উদ্দেশ্য। এই প্রকল্পটি শুধুমাত্র শ্রমিকদের তাৎক্ষণিক আর্থিক সহায়তাই করবে না, বরং তাদের দীর্ঘমেয়াদী কর্মসংস্থান এবং সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টিও নিশ্চিত করবে। রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য এই উদ্যোগ এক নতুন দিগন্ত খুলে দেবে বলে আশা করা যায়।
শ্রমশ্রী প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য
এই প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য হলো পরিযায়ী শ্রমিকদের পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসার পর তাদের প্রাথমিক খরচ চালানো এবং রাজ্যে নতুন কাজ খুঁজে পেতে সহায়তা করা। অনেক সময় শ্রমিকরা ভিন রাজ্য থেকে ফিরে এসে আর্থিক সংকটে পড়েন এবং তাদের পরিবারের ভরণপোষণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার সেই সমস্ত শ্রমিকদের হাতে সরাসরি আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দেবে, যাতে তারা রাজ্যে নিজেদের নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।
কারা পাবেন এই প্রকল্পের সুবিধা?
এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে হলে আবেদনকারীকে কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ করতে হবে। সেগুলি হলো:
- আবেদনকারীকে অবশ্যই ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার স্কিম, ২০২৩’-এর অধীনে নথিভুক্ত হতে হবে।
- শুধুমাত্র যে সমস্ত শ্রমিকরা ভিন রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে ফিরে এসেছেন, তারাই এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
- আবেদনকারী শ্রমিক অথবা তাদের বাবা-মায়ের ভোটার কার্ড বা আধার কার্ড অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের হতে হবে, যা তাদের রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে প্রমাণ করবে।
প্রকল্পের আর্থিক সুবিধা
শ্রমশ্রী প্রকল্পের অধীনে নির্বাচিত শ্রমিকরা নিম্নলিখিত আর্থিক সহায়তা পাবেন:
- এককালীন সহায়তা: ভিন রাজ্য থেকে ফিরে আসার যাতায়াত খরচ হিসেবে প্রত্যেক শ্রমিককে এককালীন ৫,০০০ টাকা প্রদান করা হবে।
- মাসিক ভাতা: রাজ্যে ফিরে আসার পর নতুন কাজ পাওয়ার আগ পর্যন্ত শ্রমিকদের প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। এই ভাতা সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত পাওয়া যাবে, অথবা যতদিন না সরকার তাদের জন্য কোনো কাজের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।
আবেদন প্রক্রিয়া
শ্রমিকদের সুবিধার জন্য সরকার অনলাইন এবং অফলাইন দুইভাবেই আবেদন করার সুযোগ রেখেছে।
- অনলাইন আবেদন: শ্রমিকরা সরাসরি www.karmasathips.wblabour.gov.in ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। ভবিষ্যতে এই প্রকল্পের জন্য একটি পৃথক ওয়েব পোর্টালও চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
- অফলাইন আবেদন: যে সমস্ত শ্রমিকদের অনলাইন আবেদন করতে অসুবিধা হবে, তাদের জন্য রাজ্য সরকার রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ ক্যাম্পের আয়োজন করবে। এই ক্যাম্পগুলিতে গিয়েও অফলাইনে আবেদনপত্র জমা দেওয়া যাবে।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা
আর্থিক সহায়তা ছাড়াও, শ্রমশ্রী প্রকল্পের অধীনে শ্রমিকদের জন্য আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে:
- প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান: ‘উৎকর্ষ বাংলা’ প্রকল্পের মাধ্যমে শ্রমিকদের যোগ্যতার ভিত্তিতে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এছাড়াও, ‘উদীয়মান স্বনির্ভর কর্মসংস্থান প্রকল্প’-এর অধীনে স্বনির্ভরতার জন্য ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা এবং বিভিন্ন সরকারি নিগমের মাধ্যমে ঋণের সুবিধাও পাওয়া যাবে।
- শিক্ষা ও স্বাস্থ্য: পরিযায়ী শ্রমিকদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য স্কুলে ভর্তি এবং স্কলারশিপের ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি, যোগ্যতার ভিত্তিতে শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের জন্য স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধাও নিশ্চিত করা হবে।
এই প্রকল্পটি পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবনে এক নতুন দিশা দেখাবে এবং তাদের সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তাকে আরও শক্তিশালী করবে।