SIM Box Fraud: ভারতে সাইবার জালিয়াতির নতুন আতঙ্ক! কীভাবে সুরক্ষিত থাকবেন?

SIM Box Fraud: সাইবার জালিয়াতি এখন আর ছোটখাটো কোনো কেলেঙ্কারি নয়, এটি একটি বিশাল ছায়া শিল্পে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন প্রতারণার কৌশল সামনে আসছে, যার মাধ্যমে প্রতারকরা সরকারি নিয়মকানুনকে ফাঁকি দিয়ে সাধারণ মানুষকে সর্বস্বান্ত করছে। সম্প্রতি, এমনই এক ভয়ঙ্কর প্রতারণার নাম সামনে এসেছে – সিম বক্স ফ্রড। চলুন, এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সিম বক্স ফ্রড কী এবং কীভাবে কাজ করে?
সাধারণত, আন্তর্জাতিক কল যখন আমাদের কাছে আসে, তখন তা টেলিকম নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আসে এবং আমরা নম্বর দেখেই বুঝতে পারি যে এটি একটি আন্তর্জাতিক কল। কিন্তু প্রতারকরা এখন এক নতুন কৌশল নিয়েছে। তারা ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল (VoIP) ব্যবহার করে ইন্টারনেট মারফত কল করে। এই কলটি ভারতে থাকা একটি সিম বক্স ডিভাইসের মাধ্যমে লোকাল নম্বরে রূপান্তরিত হয়ে যায়।
একটি সিম বক্সে একসঙ্গে ১০০ থেকে ৫০০টি পর্যন্ত লোকাল সিম কার্ড লাগানো থাকতে পারে। ফলে, যখন কোনো আন্তর্জাতিক নম্বর থেকে প্রতারক ফোন করে, তখন আপনার কাছে সেটি একটি সাধারণ লোকাল নম্বর হিসেবেই দেখায়। এর ফলে, আপনি সহজেই সেই ফোন রিসিভ করেন এবং প্রতারণার শিকার হন।
কেন প্রতারকরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করছে?
- পরিচয় গোপন রাখা: এই পদ্ধতিতে প্রতারকদের আসল পরিচয় এবং অবস্থান খুঁজে বের করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
- খরচ কম: সাধারণ আন্তর্জাতিক কলের তুলনায় এই পদ্ধতিতে খরচ অনেক কম।
- সরকারি নজরদারি এড়ানো: যেহেতু কলটি লোকাল নম্বর হিসেবে আসছে, তাই সরকারি নিরাপত্তা সংস্থাগুলির পক্ষে এটিকে ট্র্যাক করা কঠিন হয়ে পড়ে।
কী কী ধরনের প্রতারণা করা হচ্ছে?
সিম বক্স ব্যবহার করে প্রতারকরা বিভিন্ন ধরনের জালিয়াতি করে চলেছে, যেমন:
- ডিজিটাল অ্যারেস্ট: সিবিআই বা পুলিশ অফিসার সেজে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা।
- ব্যাঙ্কিং ফ্রড: ব্যাঙ্কের কর্মচারী সেজে ফোন করে ওটিপি, সিভিভি বা পিন নম্বর জেনে নিয়ে অ্যাকাউন্ট খালি করে দেওয়া।
- ভুয়ো অফার: লোন বা আকর্ষণীয় পুরস্কারের লোভ দেখিয়ে প্রসেসিং ফি-এর নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়া।
- কাস্টমার কেয়ার স্ক্যাম: বিভিন্ন কোম্পানির কাস্টমার কেয়ার এক্সিকিউটিভ সেজে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করা।
সরকারি পদক্ষেপ ও সুরক্ষা
ভারত সরকার এই ধরনের প্রতারণা রুখতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। “চক্ষু” (Chakshu) নামে একটি অনলাইন পোর্টাল চালু করা হয়েছে, যেখানে নাগরিকরা সন্দেহজনক মোবাইল নম্বর, এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। এছাড়া, পুলিশও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান চালিয়ে সিম বক্স হাবগুলি নষ্ট করছে।
তবে, শুধু সরকারি পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়। আমাদের নিজেদেরকেও সচেতন হতে হবে:
- অপরিচিত নম্বর থেকে আসা লোভনীয় অফার বা ভয় দেখানো কলে সাড়া দেবেন না।
- কোনো অবস্থাতেই নিজের ওটিপি, পিন বা অন্য কোনো গোপনীয় তথ্য শেয়ার করবেন না।
- সন্দেহজনক কিছু মনে হলে অবিলম্বে পুলিশ বা সাইবার ক্রাইম বিভাগে জানান।
সাইবার দুনিয়া যত উন্নত হচ্ছে, প্রতারণার কৌশলও তত জটিল হচ্ছে। তাই, আমাদের প্রত্যেককে ডিজিটালভাবে শিক্ষিত এবং সচেতন থাকতে হবে। আপনার একটি ছোট ভুল আপনাকে বড় বিপদের মুখে ফেলতে পারে। সুরক্ষিত থাকুন, সচেতন থাকুন।