SIR 2025: পশ্চিমবঙ্গ ভোটার তালিকা সংশোধন, দেখে নিন সকলের প্রয়োজনীয় গুরুত্বপুর্ন প্রশ্ন-উত্তর

SIR 2025: পশ্চিমবঙ্গ ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও ভুল ধারণা দূর করার জন্য এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ করে প্রয়োজনীয় নথি সংক্রান্ত বিভ্রান্তি দূর করাই এর মূল উদ্দেশ্য।
বিশেষ নিবিড় সংশোধনীর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনী নতুন কিছু নয়। এর আগেও ২০০১-২০০২ সালে এই প্রক্রিয়া চালানো হয়েছিল এবং ২০০২ সালের ১লা জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল। এই ২০০২ সালের ভোটার তালিকাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যদি আপনার নাম এই তালিকায় থাকে, তবে আপনাকে ইতিমধ্যেই ভারতের একজন বৈধ ভোটার হিসেবে গণ্য করা হয় এবং নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সাধারণত আর কোনো প্রমাণের প্রয়োজন হয় না। সেক্ষেত্রে, আপনাকে শুধুমাত্র ২০০২ সালের ভোটার তালিকার সেই পৃষ্ঠাটি জমা দিতে হবে যেখানে আপনার নাম রয়েছে।
জন্মসাল অনুযায়ী প্রয়োজনীয় নথি
জন্ম সালের উপর ভিত্তি করে নথি জমা দেওয়ার জন্য তিনটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে ভিত্তি বছর হিসেবে ১৯৮৭ সালের ১লা জানুয়ারি এবং ২০০২ সালের ১লা জানুয়ারিকে ধরা হয়েছে:
- জন্ম ১লা জানুয়ারি, ১৯৮৭ সালের আগে: যদি আপনার নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় থাকে, তবে সেই পৃষ্ঠার কপি জমা দিলেই চলবে। যদি না থাকে, তবে নির্দিষ্ট ১১টি নথির মধ্যে যেকোনো একটি জমা দিতে হবে।
- জন্ম ১লা জানুয়ারি, ১৯৮৭ থেকে ১লা জানুয়ারি, ২০০২ এর মধ্যে: আপনার নিজের জন্য ১১টি নথির মধ্যে যেকোনো একটি প্রয়োজন হবে। এছাড়াও, যদি আপনার বাবা বা মায়ের নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় থাকে, তবে সেই পৃষ্ঠার কপিই যথেষ্ট। অন্যথায়, বাবা-মায়ের যেকোনো একজনের জন্য ১১টি নথির মধ্যে একটি প্রয়োজন হবে।
- জন্ম ১লা জানুয়ারি, ২০০২ সালের পরে: আপনার নিজের জন্য ১১টি নথির মধ্যে যেকোনো একটি প্রয়োজন হবে। বাবা-মা উভয়ের নাম যদি ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় থাকে, তবে সেই পৃষ্ঠার কপি জমা দিন। যদি না থাকে, তবে উভয়ের জন্য ১১টি নথির মধ্যে যেকোনো একটি করে প্রয়োজন হবে।
যদি আপনার বাবা-মায়ের নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় থাকে, এমনকি আপনার নাম না থাকলেও, চিন্তার কারণ অনেকটাই কম।
“১১টি নথি” সংক্রান্ত বিভ্রান্তি
বর্তমানে অনলাইনে যে ১১টি নথির তালিকা ঘুরছে, তা বিহারের জন্য প্রযোজ্য। পশ্চিমবঙ্গের জন্য নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তির জন্য অপেক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, কারণ নথির তালিকায় সামান্য পরিবর্তন থাকতে পারে।
এখানে ক্লিক করে দেখে নিন এই ১১ টি নথির তালিকা।
গণনা ফর্ম (Enumeration Form)
১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রত্যেক ব্যক্তি, যারা ভোটার তালিকায় নাম তুলতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য গণনা ফর্ম পূরণ করা বাধ্যতামূলক। এই ফর্মটি বিএলও (বুথ লেভেল অফিসার) দ্বারা সরবরাহ করা হবে অথবা অনলাইনেও পূরণ করা যাবে।
সাধারণ উদ্বেগ ও সমাধান
- EPIC নম্বর পরিবর্তন: যদি ২০০২ সালের পর আপনার EPIC (ভোটার পরিচয়পত্র) নম্বর পরিবর্তিত হয়ে থাকে, তবে চিন্তার কিছু নেই। নির্বাচন কমিশন আপনার পুরনো এবং নতুন নম্বর লিঙ্ক করতে পারবে।
- বানান বা জন্মতারিখের ভুল: ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নামে বা জন্মতারিখে ছোটখাটো ভুল থাকলে তা সাধারণত কোনো সমস্যা নয়, বিশেষ করে যদি আপনার বর্তমান EPIC-তে সঠিক তথ্য থাকে। বড় ধরনের ভুলের ক্ষেত্রে, আপনি ১১টি বিকল্প নথির মধ্যে সঠিক তথ্যসহ একটি ব্যবহার করতে পারেন।
- ২০০২ সালের তালিকায় EPIC নম্বর না থাকা: যদি ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় আপনার নামের পাশে EPIC নম্বর না থাকে, কিন্তু আপনার কাছে বর্তমানে EPIC নম্বরসহ ভোটার আইডি কার্ড থাকে, তবে সেটাই যথেষ্ট।
- ঠিকানা পরিবর্তন (বিশেষ করে বিয়ের পর মহিলাদের জন্য): ঠিকানা পরিবর্তন হলেও, যদি আপনার নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় থাকে, তবে আপনি এখনও একজন বৈধ ভোটার। আপনাকে শুধুমাত্র ২০০২ সালের তালিকা থেকে সংশ্লিষ্ট পৃষ্ঠাটি সরবরাহ করতে হবে।
- মৃত বাবা-মা: যদি কারো বাবা-মা মারা গিয়ে থাকেন কিন্তু তাদের নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় ছিল, তবে আপনার আবেদনের জন্য এটি কোনো সমস্যা হবে না।
- রাজ্যের বাইরে থেকে আবেদন: পশ্চিমবঙ্গে প্রক্রিয়া শুরু হলে এনভিএসপি (ন্যাশনাল ভোটার সার্ভিস পোর্টাল) এর মাধ্যমে অনলাইনে গণনা ফর্ম পূরণ করা যাবে। নথি এবং ছবিও অনলাইনে আপলোড করা যাবে।
চূড়ান্ত পরামর্শ
আতঙ্কিত না হয়ে পশ্চিমবঙ্গের জন্য নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তির জন্য অপেক্ষা করুন। যেকোনো সমস্যার জন্য বিএলও-র সাথে পরামর্শ করুন। প্রক্রিয়াটি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলে আরও বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে যা আমরা সরাসরি আপনাদের সাথে শেয়ার করব।