SLST Experience Marks: অভিজ্ঞতার ১০ নম্বর ইন্টারভিউয়ের আগে না পরে? হাইকোর্টে জোর সওয়াল, দেখুন বিস্তারিত
SLST Experience Marks: পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের (WBSSC) এসএলএসটি (SLST) নিয়োগ দুর্নীতি ও আইনি জটিলতার মাঝেই উঠে এল এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খবর। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে সম্প্রতি এই মামলার শুনানি সম্পন্ন হয়েছে, যেখানে মূল আলোচ্য বিষয় ছিল অভিজ্ঞতার জন্য বরাদ্দ ১০ নম্বর। এই নম্বর ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ার আগে যুক্ত হওয়া উচিত, নাকি পরে—এই নিয়েই চলল দীর্ঘ আইনি তর্জা। ইন-সার্ভিস শিক্ষক বা কর্মরত শিক্ষকদের হয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী মেনকা গুরুস্বামী যে যুক্তিজাল বিস্তার করেছেন, তা এই মামলায় নতুন মোড় আনতে পারে।
অভিজ্ঞতার ১০ নম্বর ও ইন-সার্ভিস শিক্ষকদের দাবি
বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে শুনানিপর্বে আইনজীবী মেনকা গুরুস্বামী জোর দিয়ে বলেন যে, ইন-সার্ভিস শিক্ষকদের অভিজ্ঞতার নম্বর ইন্টারভিউয়ের আগেই যোগ করা বাঞ্ছনীয়। তাঁর মতে, বর্তমানে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে প্রায় ১৮,৬১৭ জন শিক্ষক গত সাত বছর ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে শিক্ষাদান করছেন। তিনি উল্লেখ করেন, এই শিক্ষকরা রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার মেরুদণ্ড এবং তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই (Untainted)।
একজন সদ্য পাস করা প্রার্থী (Fresher) এবং সাত বছর ধরে ক্লাসরুমে পড়ানো শিক্ষকের দক্ষতায় যে আকাশ-পাতাল তফাত রয়েছে, তা আদালতকে বুঝিয়ে বলেন আইনজীবী। তাঁর যুক্তি, ইন-সার্ভিস শিক্ষকরা ইতিমধ্যেই ক্লাসরুম পরিস্থিতি সামলাতে দক্ষ এবং তাঁদের কাজের গুণমান পরীক্ষিত।
পরিসংখ্যান ও বঞ্চনার অভিযোগ
এসএসসির ইন্টারভিউ লিস্ট বিশ্লেষণ করে এদিন আদালতে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। অভিযোগ করা হয়, অভিজ্ঞতার নিরিখে ইন-সার্ভিস শিক্ষকদের প্রাপ্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিষয়টি স্পষ্ট করতে নিচে একটি পরিসংখ্যান দেওয়া হলো:
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হন| বিষয় (Subject) | ফ্রেশার পরীক্ষার্থী (%) | ইন-সার্ভিস শিক্ষক (%) |
|---|---|---|
| অ্যাকাউন্টেন্সি (Accountancy) | ৯২.৮% | ৭.১% |
| এগ্রিকালচার (Agriculture) | ৬৬% | ৩৪% |
এই পরিসংখ্যান দেখিয়ে আইনজীবী বোঝাতে চান যে, ফ্রেশারদের তুলনায় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষকরা পরবর্তী ধাপে যাওয়ার সুযোগ অনেক কম পাচ্ছেন, যা আদতে মেধার অপচয়।
অভিজ্ঞতার ব্যাপ্তি ও আইনি যুক্তি
শুনানিতে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে—নবম-দশম শ্রেণীর অভিজ্ঞতা একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর ক্ষেত্রে গ্রাহ্য হবে কি না। এর উত্তরে মেনকা গুরুস্বামী জানান, সেকেন্ডারি অ্যাক্ট অনুযায়ী নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পুরোটাই সেকেন্ডারি সেকশনের অন্তর্ভুক্ত। একজন শিক্ষক যখন ক্লাসরুম সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করতে শেখেন, তখন সেই দক্ষতা উভয় স্তরেই সমানভাবে কার্যকরী।
এছাড়া, একাডেমিক স্কোরে যেমন ভালো ফলাফলের জন্য পূর্ণ নম্বর দেওয়া হয়, তেমনই অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট হায়ারার্কি বা ক্রম থাকা উচিত। আইনজীবী ২০১৮ সালের ইউজিসি (UGC) গাইডলাইনের উদাহরণ টেনে বলেন, সেখানেও পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতাকে পরবর্তী নিয়োগে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ভেরিফিকেশন স্তরেই অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্র যাচাই করে ভুয়ো প্রার্থীদের বাদ দেওয়া সম্ভব, তাই নম্বর আগেই যোগ করা যুক্তিসঙ্গত।
পরবর্তী শুনানি কবে?
মেনকা গুরুস্বামীর দীর্ঘ সওয়াল-জবাব শেষে বিচারপতি অমৃতা সিনহা মন দিয়ে সমস্ত যুক্তি শোনেন। তবে মামলার চূড়ান্ত ফয়সালা এখনও হয়নি। আদালত সূত্রে খবর, এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৫। সেদিন অপর পক্ষের আইনজীবী প্রতীক ধর মহাশয় তাঁর অসমাপ্ত আর্গুমেন্ট পেশ করবেন। লক্ষ লক্ষ চাকরিপ্রার্থী ও কর্মরত শিক্ষকরা এখন আদালতের চূড়ান্ত রায়ের দিকে তাকিয়ে আছেন।