WB Temporary Workers: পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনে কর্মরত অস্থায়ী কর্মীদের জন্য একটি বড়সড় স্বস্তির খবর। কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে বহাল রেখে সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক আদেশে জানিয়েছে যে রাজ্যের পার্ট-টাইম ঝাড়ুদারদের (কর্মবন্ধু) সমস্ত আর্থিক সুবিধা প্রদান করতে হবে। এই রায়টি রাজ্যের হাজার হাজার অস্থায়ী কর্মীর জন্য আশার আলো নিয়ে এসেছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছেন। বিচারপতি মনোজ মিশ্র এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার বেঞ্চ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দায়ের করা স্পেশাল লিভ পিটিশন খারিজ করে দিয়েছে, যার ফলে কর্মীদের সুবিধা পাওয়ার পথ প্রশস্ত হয়েছে।
ঘটনার প্রেক্ষাপট: কলকাতা হাইকোর্টের লড়াই
এই মামলার শুরুটা হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। রাজ্যের খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরের অধীনে কর্মরত কয়েকজন অস্থায়ী সাফাইকর্মী তাদের বকেয়া আর্থিক সুবিধা এবং সমান কাজের জন্য সমান অধিকারের দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ হন।
- প্রাথমিকভাবে, ২০১৭ সালের ২৭শে জানুয়ারির একটি মেমোর্যান্ডামের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল আবেদনকারীদের পক্ষে রায় দেয় এবং তাদের সমস্ত সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
- কিন্তু পরবর্তীকালে, ২০২২ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি সেই রায়টি বাতিল হয়ে যায়, যা কর্মীদের জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল।
- তবে, কর্মীরা হাল ছাড়েননি। তারা আবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্ট ২০১১ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বরের একটি পুরোনো মেমোর্যান্ডামকে ভিত্তি করে কর্মীদের পক্ষে রায় দেয়।
- আদালত পরিষ্কারভাবে নির্দেশ দেয় যে, ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে সমস্ত বকেয়া আর্থিক সুবিধা আবেদনকারীদের ৯০ দিনের মধ্যে মিটিয়ে দিতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়
কলকাতা হাইকোর্টের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সুপ্রিম কোর্টে একটি স্পেশাল লিভ পিটিশন (SLP) দায়ের করে। কিন্তু আবেদন জানাতে দেরি হওয়ায় আদালত রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। অবশেষে, ২০২৫ সালের ১৮ই আগস্ট, দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই মামলায় তাদের চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করে।
- সুপ্রিম কোর্ট জানায় যে তারা ভারতীয় সংবিধানের ১৩৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে হস্তক্ষেপ করার কোনো সঙ্গত কারণ খুঁজে পায়নি।
- এর ফলে, হাইকোর্টের রায়ই চূড়ান্ত বলে গণ্য হয় এবং রাজ্য সরকারের আবেদন খারিজ হয়ে যায়।
- এই রায়ের ফলে, মামলাকারী কর্মীদের সমস্ত প্রকার আর্থিক সুবিধা, যেমন বকেয়া বেতন, ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা, রাজ্য সরকারকে অবিলম্বে প্রদান করতে হবে।
অস্থায়ী কর্মীদের জন্য এর প্রভাব কী?
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় শুধুমাত্র মামলাকারী কর্মীদের জন্যই নয়, পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত অস্থায়ী কর্মীদের জন্য একটি উদাহরণ স্থাপন করেছে। এটি প্রমাণ করে যে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে নিজেদের অধিকার অর্জন করা সম্ভব। তবে, এই সুবিধা আপনাআপনি সমস্ত কর্মীর কাছে পৌঁছাবে না।
যেসকল অস্থায়ী কর্মী এখনও তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত, তাদের নিজেদের উদ্যোগ নিয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এই রায় তাদের লড়াইয়ে একটি শক্তিশালী আইনি ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। ক্রমাগত প্রচেষ্টা এবং সঠিক আইনি পথের মাধ্যমেই রাজ্যের অন্যান্য অস্থায়ী কর্মীরা তাদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবেন।