Teacher Private Tuition: শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনির বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের কড়া পদক্ষেপ, বিপাকে বহু শিক্ষক

Teacher Private Tuition: কলকাতা হাইকোর্ট সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। এই পদক্ষেপটি এমন এক সময়ে এলো যখন রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকদের ভূমিকা এবং দায়বদ্ধতা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠছে। সম্প্রতি, আদালত এই নিয়ম লঙ্ঘনকারী শিক্ষকদের একটি তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছে এবং বাঁকুড়া জেলার কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এই রায়ের ফলে রাজ্যের শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এক নতুন আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে।
মামলার প্রেক্ষাপট
সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনি করা আইনত নিষিদ্ধ। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই এই নিয়ম উপেক্ষা করে বহু শিক্ষক নিজেদের বাড়িতে বা কোচিং সেন্টারে টাকার বিনিময়ে ছাত্রছাত্রীদের পড়াচ্ছেন। এর ফলে স্কুলের পঠনপাঠনের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যে শিক্ষকরা প্রাইভেট টিউশনি করেন, তারা স্কুলেও সেই ছাত্রদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেন। এই সমস্যার সমাধান চেয়েই কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
আদালতের সাম্প্রতিক শুনানিতে, মামলাকারীর আইনজীবী আশিষ কুমার চৌধুরীকে সোমবার বা মঙ্গলবারের মধ্যে নিয়ম লঙ্ঘনকারী শিক্ষকদের একটি তালিকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, বাঁকুড়া জেলায় ইতিমধ্যে বেশ কিছু শিক্ষককে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
আদালতের কড়া মনোভাব
কলকাতা হাইকোর্ট এই বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর মনোভাব পোষণ করেছে। আদালত জানতে চেয়েছে, কোন নির্দিষ্ট দপ্তর এই নিয়মাবলীকে আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে পারে। বর্তমানে ৩২ জন ডিআই (জেলা পরিদর্শক) থাকা সত্ত্বেও এই নিয়ম কার্যকর করা যাচ্ছে না, যা নিয়ে আদালত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আগামী সোমবারের মধ্যে সেই দপ্তরের নামও জানাতে বলা হয়েছে, যাতে তাদের এই মামলায় অন্তর্ভুক্ত করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়।
আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে যে, সরকারি স্কুলের যে সমস্ত শিক্ষক প্রাইভেট টিউশনি করেন, তারা “আইন ভঙ্গকারী”। আগামী সপ্তাহে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে, এবং আশা করা হচ্ছে যে, এই বিষয়ে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা আসতে পারে।
ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের উপর প্রভাব
হাইকোর্টের এই পদক্ষেপে ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেক অভিভাবকই মনে করেন যে, স্কুলের পঠনপাঠনের মান ভালো না হওয়ায় তারা তাদের সন্তানদের প্রাইভেট টিউশনি দিতে বাধ্য হন। তাদের মতে, আগে স্কুলের শিক্ষার মান উন্নত করা উচিত, তারপর প্রাইভেট টিউশনি বন্ধ করার কথা ভাবা উচিত।
অন্যদিকে, অনেক শিক্ষাবিদ এবং অভিভাবক এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, এর ফলে শিক্ষকরা স্কুলে আরও বেশি মনোযোগ দেবেন এবং ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের উপর আরও বেশি নির্ভরশীল হবে। এটি রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
এখন দেখার বিষয়, রাজ্য সরকার এবং শিক্ষা দপ্তর এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়। হাইকোর্টের এই কড়া মনোভাবের পর, আশা করা যায় যে, প্রাইভেট টিউশনির বিরুদ্ধে একটি স্থায়ী এবং কার্যকর সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসবে। এটি রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে এবং ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল করতে সহায়ক হতে পারে।