শিক্ষা

শিক্ষকদের টেট: NCTE-এর ক্ষমতার অপব্যবহার! সুপ্রিম কোর্টের রায়ে শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ কী?

শিক্ষকদের টেট: সাম্প্রতিক একটি বিতর্কিত বিষয় শিক্ষকদের যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষা (TET) এবং ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন (NCTE)-এর ভূমিকা নিয়ে। শিক্ষকদের একাংশের মতে, NCTE-এর ক্ষমতার অপব্যবহার এবং তার ফলাফল হিসাবেই এই রায়ের পটভূমি তৈরি হয়েছে। এই প্রতিবেদনে আমরা NCTE এর ভূমিকা এবং সাম্প্রতিক কিছু তথ্য একত্রিত করে একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করব।

NCTE-এর ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অপব্যবহারের অভিযোগ

২০০২ সালে ভারতীয় সংবিধানের ৮৬তম সংশোধনীতে ২১(এ) ধারা যুক্ত হয়, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের বিনামূল্যে এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রদান করা। এই আইনকে বাস্তবায়িত করতে ২০০৯ সালে “শিক্ষার অধিকার আইন” (Right to Education Act) পাশ হয়। এই আইন অনুযায়ী, শিক্ষার পাঠ্যক্রম এবং শিক্ষকদের ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার একটি একাডেমিক কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেয়।

সেই মতো, ৩১শে মার্চ, ২০১০-এ, মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক (MHRD), যা এখন শিক্ষা মন্ত্রক নামে পরিচিত, NCTE-কে সেই একাডেমিক কর্তৃপক্ষ হিসাবে নিয়োগ করে। NCTE-কে দুটি প্রধান দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল:

  • পাঠ্যক্রম তৈরি: প্রাথমিক শিক্ষার জন্য পাঠ্যক্রম এবং মূল্যায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ করা।
  • শিক্ষকদের যোগ্যতা নির্ধারণ: শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করা।

অভিযোগ উঠেছে যে, NCTE তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমন কিছু নিয়ম তৈরি করেছে যা পূর্ববর্তী শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হয়ে যায়, যা আইনত সঠিক নয়। এর ফলেই বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায় এবং সর্বোপরি সুপ্রিম কোর্ট সকল শিক্ষকদের টেট পাশ করার রায় দেয়।

সবার আগে খবরের আপডেট পান!

টেলিগ্রামে যুক্ত হন

সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং NCTE-এর ভূমিকা

সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে, যেখানে NCTE-এর কিছু সিদ্ধান্তের উপর প্রশ্ন তোলা হয়েছে। শিক্ষকরা মনে করছেন, NCTE তার ক্ষমতার বাইরে গিয়ে পুরনো শিক্ষকদের উপর নতুন নিয়ম চাপিয়ে দিয়েছে, যা আইনত গ্রহণযোগ্য নয়। এই রায়কে সংশোধন করার জন্য এখন কেন্দ্রীয় সরকার এবং শিক্ষা মন্ত্রকের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

NCTE-এর নতুন নিয়মাবলী ২০২৫

NCTE সম্প্রতি B.Ed এবং D.El.Ed কোর্সের জন্য কিছু নতুন নিয়ম এনেছে, যা ২০২৫ সাল থেকে কার্যকর হবে। এই নিয়মগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • ডুয়াল ডিগ্রি নিষিদ্ধ: ছাত্রছাত্রীরা একই সাথে B.Ed এবং D.El.Ed কোর্স করতে পারবে না।
  • বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপ: B.Ed এবং D.El.Ed উভয় কোর্সের জন্য ৬ মাসের স্কুল ইন্টার্নশিপ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
  • অনলাইন শিক্ষার সীমাবদ্ধতা: শুধুমাত্র কিছু তাত্ত্বিক বিষয় অনলাইনে পড়ানো যাবে। মূল শিক্ষাদান এবং ইন্টার্নশিপ অফলাইনে করতে হবে।
  • সংশোধিত ভর্তি প্রক্রিয়া: ভর্তি প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা হয়েছে এবং পাঠ্যক্রমে ডিজিটাল শিক্ষা, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষণ পদ্ধতি এবং আধুনিক শিক্ষণ পদ্ধতি যুক্ত করা হয়েছে।

ভবিষ্যতের পথ

শিক্ষকদের যোগ্যতা এবং শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য NCTE-এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখা অপরিহার্য। সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং নতুন নিয়মাবলী শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এখন দেখার বিষয়, কেন্দ্রীয় সরকার এবং শিক্ষা মন্ত্রক এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয় এবং শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষায় কতটা সফল হয়।

WBPAY Team

আমাদের প্রতিবেদন গুলি WBPAY Team এর দ্বারা যাচাই করে লেখা হয়। আমরা একটি স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম যা পাঠকদের জন্য স্পষ্ট এবং সঠিক খবর পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য এবং সাংবাদিকতার মান সম্পর্কে জানতে, অনুগ্রহ করে আমাদের About us এবং Editorial Policy পৃষ্ঠাগুলি পড়ুন।
Back to top button