TET Case: TET মামলার ঐতিহাসিক রায়! চাকরি বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকদের ফিরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
TET Case: শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে টেট (TET) যোগ্যতাকে কেন্দ্র করে একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। ভারতের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে হওয়া এই মামলার পর্যবেক্ষণে, এলাহাবাদ হাইকোর্টের একটি রায়কে ভুল বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এই রায়ের ফলে দীর্ঘ দিন ধরে চাকরি থেকে বরখাস্ত থাকা উত্তরপ্রদেশের দুই শিক্ষক তাদের চাকরি ফিরে পেতে চলেছেন। সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণ আগামী দিনে এই ধরনের সমস্ত মামলার ক্ষেত্রে একটি দিশা দেখাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ঘটনাটি ৩১শে অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে প্রধান বিচারপতি বি. আর. গাভাই এবং কে. বিনোদ চন্দ্রনের বেঞ্চে শুনানি হয়। মামলাটি এলাহাবাদ হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চের ১লা মে, ২০২৪ তারিখের রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছিল।
মামলার প্রেক্ষাপট
মামলাটি উত্তরপ্রদেশের কয়েকজন সহকারী শিক্ষকের নিয়োগ সংক্রান্ত। এই শিক্ষকরা একটি বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে আবেদন করেন, যা ৩রা জুলাই, ২০১১-তে প্রকাশিত হয়েছিল এবং আবেদনের শেষ তারিখ ছিল ১৬ই জুলাই, ২০১১। সফলভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর তারা ১৩ই মার্চ, ২০১২-তে নিয়োগপত্র পান এবং ১৭ই মার্চ, ২০১২-তে চাকরিতে যোগ দেন।
কিন্তু সমস্যা তৈরি হয় তাদের টেট যোগ্যতা নিয়ে। নিয়োগের সময় তাদের কারোরই টেট পাস সার্টিফিকেট ছিল না। পরবর্তীকালে, একজন ২৫শে নভেম্বর, ২০১১-তে এবং অন্যজন ২৪শে মে, ২০১৪-তে টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হনতাদেরকে ১২ই জুলাই, ২০১৮ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত (Terminate) করা হয়। কারণ হিসেবে দেখানো হয় যে, নিয়োগের সময় তাদের ন্যূনতম যোগ্যতা অর্থাৎ টেট পাস সার্টিফিকেট ছিল না।
আইনের জটিলতা ও হাইকোর্টের রায়
এই মামলার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল শিক্ষার অধিকার আইন (RTE Act), ২০০৯-এর ২৩(২) ধারা। এই ধারা অনুযায়ী, যে সমস্ত শিক্ষক ৩১শে মার্চ, ২০১৫-এর আগে নিযুক্ত হয়েছেন, তাদের ৩১শে মার্চ, ২০১৯-এর মধ্যে প্রয়োজনীয় ন্যূনতম যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।
বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকরা যুক্তি দেন যে, তাদের বরখাস্ত করার (জুলাই ২০১৮) আগেই তারা টেট পাস করে ফেলেছিলেন এবং আইন অনুযায়ী তাদের ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময় ছিল। কিন্তু এলাহাবাদ হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ এবং ডিভিশন বেঞ্চ উভয়েই এই যুক্তিকে উপেক্ষা করে এবং তাদের বরখাস্তের আদেশকে বহাল রাখে। হাইকোর্টের মতে, নিয়োগের সময়েই টেট যোগ্যতা থাকা বাধ্যতামূলক ছিল।
সুপ্রিম কোর্টের যুগান্তকারী পর্যবেক্ষণ
প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এলাহাবাদ হাইকোর্টের এই রায়কে ভুল বলে পর্যবেক্ষণ করে। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে জানায় যে, হাইকোর্টের সিঙ্গল ও ডিভিশন বেঞ্চ শিক্ষার অধিকার আইনের ধারাটিকে সঠিকভাবে বুঝতে ভুল করেছে।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মূল অংশগুলি:
- বরখাস্তের আদেশ বাতিল: সর্বোচ্চ আদালত শিক্ষকদের বরখাস্ত করার ১২ই জুলাই, ২০১৮ তারিখের নির্দেশটিকে বাতিল (set aside) করে দিয়েছে।
- হাইকোর্টের রায় বাতিল: এলাহাবাদ হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ এবং ডিভিশন বেঞ্চের দেওয়া রায়গুলিকেও বাতিল করা হয়েছে।
- পুনরায় নিয়োগের নির্দেশ: আদালত কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে যে, কানপুর নগরের জে. পি. জুনিয়র হাই স্কুলে ওই শিক্ষকদের অবিলম্বে চাকরিতে ফিরিয়ে নিতে হবে।
- সমস্ত সুবিধা প্রদান: চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের চাকরির ধারাবাহিকতা, সিনিয়রিটি এবং অন্যান্য সমস্ত আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা (consequential benefits) দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই রায়টি প্রমাণ করে যে, আইন অনুযায়ী যোগ্যতামান অর্জনের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকলে, সেই সময়ের মধ্যে যোগ্যতা অর্জন করলে কাউকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা যায় না। সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণ দেশ জুড়ে একই ধরনের সমস্যায় জর্জরিত বহু শিক্ষকের জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে।