TET Mandatory: সাম্প্রতিক একটি সুপ্রিম কোর্টের রায় সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য টিচার এলিজিবিলিটি টেস্ট (TET) বাধ্যতামূলক করেছে, যা দেশব্যাপী বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এই রায়ের ভিত্তি হলো ২০০৯ সালের শিক্ষার অধিকার আইন (Right to Education Act, 2009), যা শিশুদের জন্য উন্নত মানের শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। উন্নত মানের শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য যোগ্য শিক্ষক অপরিহার্য, এবং সেই যোগ্যতা যাচাই করার একটি মাপকাঠি হলো TET। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, যে সংশোধনীর ভিত্তিতে এই রায় দেওয়া হয়েছে, সেই ২০১৭ সালের সংশোধনীটি কি আদৌ বৈধ? এই বিষয়টি নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।
বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু: ২০১৭ সালের সংশোধনী
শিক্ষার অধিকার আইন, ২০০৯ অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সরকারকে এই আইনের নিয়মকানুন পরিবর্তন বা সংশোধন করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। এই ক্ষমতার ভিত্তিতেই বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু ২০১২ সালে এই আইনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনা হয়, যেখানে বলা হয় যে, ওই সংশোধনী লাগু হওয়ার তিন বছরের পর কেন্দ্রীয় সরকার আর কোনো নতুন সংশোধনী আনতে পারবে না। ২০১২ সালের জুন মাসে লাগু হওয়া এই নিয়ম অনুযায়ী, ২০১৫ সালের জুন মাসের পর আর কোনো সংশোধনী আনার সুযোগ ছিল না।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ২০১৭ সালে কেন্দ্রীয় সরকার একটি নতুন সংশোধনী নিয়ে আসে, যেখানে বলা হয় যে, ৩১শে মার্চ, ২০১৫ বা তার আগে থেকে কর্মরত সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ন্যূনতম যোগ্যতা অর্জন করতে হবে এবং তার জন্য চার বছরের সময় দেওয়া হয়। এই সংশোধনীটি ২০১২ সালের নিয়মকে সরাসরি লঙ্ঘন করে, কারণ এটি নির্ধারিত সময়সীমার প্রায় দুই বছর পরে আনা হয়েছে। আইনজীবীদের মতে, যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকার নিজেরাই তাদের তৈরি করা নিয়ম লঙ্ঘন করেছে, তাই এই ২০১৭ সালের সংশোধনীটি অবৈধ।
পরিকাঠামো এবং প্রশিক্ষণের অভাব
শিক্ষার অধিকার আইন, ২০০৯ অনুযায়ী, উন্নত মানের শিক্ষার জন্য শুধুমাত্র যোগ্য শিক্ষকই যথেষ্ট নয়, বরং স্কুলের পরিকাঠামো, ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত, লাইব্রেরি, খেলার মাঠ ইত্যাদিও অপরিহার্য। কিন্তু সারা দেশে বহু স্কুলেই এই পরিকাঠামোগত সুবিধাগুলির অভাব রয়েছে। এছাড়াও, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য উভয় সরকারেরই দায়িত্ব ছিল শিক্ষকদের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, কিন্তু সেই উদ্যোগেও ঘাটতি দেখা গেছে। তাহলে প্রশ্ন হলো, শুধুমাত্র শিক্ষকদের যোগ্যতার উপর সমস্ত দায় চাপিয়ে দেওয়াটা কতটা যুক্তিসঙ্গত?
ভবিষ্যতের পদক্ষেপ
এই বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আইনজীবীদের মতে, ২০১৭ সালের সংশোধনীর এই আইনি ত্রুটি মামলাটিকে একটি নতুন দিশা দিতে পারে। যদি এই সংশোধনীটি অবৈধ প্রমাণিত হয়, তাহলে TET বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্তটিও প্রশ্নের মুখে পড়বে। এখন দেখার বিষয়, ভবিষ্যতে এই আইনি লড়াই কোন দিকে মোড় নেয়। এই বিষয়টি শুধুমাত্র শিক্ষকদের জন্যই নয়, বরং দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যতের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।