টেট পরীক্ষা দিতে হবেনা পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষকদের? রাজ্যের ৩ লক্ষ শিক্ষকের জন্য বিরাট স্বস্তি

টেট বাধ্যতামূলক রায়: সাম্প্রতিক সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে বলা হয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকদের জন্য টেট (Teacher Eligibility Test) উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক। এই রায়ের পর থেকেই রাজ্যের প্রায় তিন লক্ষ শিক্ষকের মধ্যে এক ধরণের আতঙ্ক এবং অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অনেকেই আবার নতুন করে পরীক্ষার প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন। তবে, বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের মত অনুযায়ী, শেষ পর্যন্ত এই শিক্ষকদের টেট দিতে নাও হতে পারে। এর পেছনে রয়েছে কেন্দ্রের এক বিশেষ অর্ডিন্যান্স এবং রাজ্যের রিভিউ পিটিশনের সম্ভাবনা।
কেন্দ্রীয় অর্ডিন্যান্সের রক্ষাকবচ
শিক্ষার অধিকার আইন (Right to Education Act) কার্যকর হয় ২০১০ সালে। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, এই আইনটির ‘রেট্রোসপেক্টিভ এফেক্ট’ রয়েছে, অর্থাৎ ২০১০ সালের আগে নিযুক্ত শিক্ষকদেরও এই আইনের আওতায় আনা হবে। কিন্তু, ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক পশ্চিমবঙ্গকে একটি বিশেষ ছাড় দিয়েছিল। এই ছাড় অনুযায়ী, রাজ্যের শিক্ষকদের জন্য অন্যান্য যোগ্যতার সাথে টেট পাশের ক্ষেত্রেও ৩১শে মার্চ, ২০১৪ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে, রাজ্য সরকারের আবেদনের ভিত্তিতে এই ছাড়ের মেয়াদ ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কেন্দ্রীয় অর্ডিন্যান্সটিই রাজ্যের শিক্ষকদের জন্য প্রধান রক্ষাকবচ হতে পারে।
রিভিউ পিটিশনের গুরুত্ব
আশ্চর্যের বিষয় হলো, সুপ্রিম কোর্টে যখন এই মামলাটি চলছিল, তখন এই বিশেষ ছাড়ের বিষয়টি আদালতের নজরে আনাই হয়নি। তাই, এই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য রাজ্যকে একটি রিভিউ পিটিশন দাখিল করতে হবে। এই পিটিশনে যদি সঠিকভাবে কেন্দ্রীয় অর্ডিন্যান্স এবং ছাড়ের বিষয়টি তুলে ধরা যায়, তাহলে রাজ্যের প্রায় তিন লক্ষ শিক্ষককে টেট পরীক্ষা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব হতে পারে। বর্তমানে, রাজ্যের কোনো সংগঠন বা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে রিভিউ পিটিশন দাখিল করার বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়নি। তবে, শিক্ষক মহল এবং বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন যে, শীঘ্রই এই বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ কী?
এই মুহূর্তে রাজ্যের শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে রাজ্যের পরবর্তী পদক্ষেপের উপর। কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিচে উল্লেখ করা হলো:
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হন- রিভিউ পিটিশন: পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য থেকে দ্রুত সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দাখিল করতে হবে এবং কেন্দ্রীয় ছাড়ের বিষয়টি সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
- আইনি লড়াই: যদি রিভিউ পিটিশনেও সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে আইনি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
সামগ্রিকভাবে, পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষকদের টেট সংক্রান্ত বিষয়টি একটি জটিল আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় অর্ডিন্যান্স থাকা সত্ত্বেও, সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে এই সমস্যাটি আরও গভীর হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, রাজ্যের পক্ষ থেকে কবে রিভিউ পিটিশন দাখিল করে এবং এই তিন লক্ষ শিক্ষকের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে পারে। এই বিষয়ে যেকোনো নতুন আপডেট পেলেই আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করব।