US tariffs on India: ভারতকে শাস্তি, চীনকে ছাড়: মার্কিন দ্বৈত নীতির পিছনে থাকা ভূ-রাজনৈতিক খেলাটা কী?

US tariffs on India: সাম্প্রতিক একটি পদক্ষেপে, ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার তেল আমদানির বিষয়ে একটি বিতর্কিত নীতি গ্রহণ করেছে, যা ভারত এবং চীনের প্রতি দ্বৈত আচরণের জন্য সমালোচিত হচ্ছে। এই নতুন নীতিতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উপর কঠোর শুল্ক আরোপ করেছে, অথচ একই কারণে চীনকে ছাড় দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের পিছনে থাকা জটিল ভূ-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কারণগুলো তুলে ধরাই এই প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য।
রাশিয়ান তেলের উপর নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপট
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা রাশিয়ার তেলের রাজস্ব কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ২০২২ সালে, বাইডেন প্রশাসন একটি প্রাইস ক্যাপ (মূল্যসীমা) ব্যবস্থা চালু করে, যেখানে রাশিয়ান তেলের দাম প্রতি ব্যারেল $৬০-এ সীমাবদ্ধ করা হয়েছিল। ভারত ও চীনের মতো দেশগুলো যদি এই মূল্যের চেয়ে বেশি দামে তেল কিনত, তবে তাদের উপর শিপিং এবং বীমা সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল।
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতি: শুল্কের প্রয়োগ
তবে, ট্রাম্প প্রশাসন এই নীতিতে একটি বড় পরিবর্তন এনেছে। সরাসরি তেল আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করে, তারা রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী দেশগুলোর রপ্তানির উপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই নীতির মূল লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে দেশগুলোকে রাশিয়ার তেল কেনা থেকে বিরত রাখা।
ভারত বনাম চীন: দ্বৈত নীতির শিকার
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন শুল্ক নীতিতে ভারত এবং চীনের প্রতি সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দেখা গেছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার ঝড় তুলেছে।
- ভারতের উপর কঠোর পদক্ষেপ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় রপ্তানির উপর ২৫% শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে, যা ২৭ আগস্টের মধ্যে ৫০%-এ উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে ভারতের বিপুল পরিমাণে রাশিয়ান তেল কেনার বিষয়টিকে উল্লেখ করা হয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, ভারত একটি “সহজ লক্ষ্য” এবং কৌশলগত অংশীদার হিসেবে রাশিয়ার অর্থনীতিকে সমর্থন করা উচিত নয়।
- চীনকে ছাড়: অন্যদিকে, চীনকে শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে ৯০ দিনের জন্য ছাড় দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন প্রকাশ্যে বলেছে যে, “চীনকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো অবস্থায় আমরা নেই” (“China is too big to sanction”)। চীন রাশিয়ার সবচেয়ে বড় তেল গ্রাহক, প্রতিদিন প্রায় ২ মিলিয়ন ব্যারেল তেল আমদানি করে, যা রাশিয়ার মোট অপরিশোধিত তেল রপ্তানির ৪০%।
এই দ্বৈত নীতির কারণ কী?
মার্কিন সেক্রেটারি অফ স্টেট রুবিও এই দ্বৈত নীতির পিছনে থাকা কারণগুলো ব্যাখ্যা করেছেন। তার মতে, চীনের শোধনাগারগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খল ভেঙে পড়বে, বিশেষ করে ইউরোপ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কারণ তারা চীনের শোধিত রাশিয়ান তেলের উপর নির্ভরশীল।
এছাড়াও, চীনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম প্রতি ব্যারেলে $৬-$১০ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি ঘটাবে এবং ট্রাম্পের অভ্যন্তরীণ জনপ্রিয়তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তুলনায়, ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে বিশ্বব্যাপী তেলের দামে তেমন বড় প্রভাব পড়বে না, কারণ ভারত প্রতিদিন প্রায় ১.২৫ মিলিয়ন ব্যারেল তেল আমদানি করে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতে “পরিচালনাযোগ্য” (“manageable”)।
ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব
এই নীতির সুদূরপ্রসারী ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে:
- ভারত: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। এর ফলে, ভারত রাশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের দিকে আরও ঝুঁকে পড়তে পারে এবং চীনের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বাড়াতে পারে।
- চীন: এই পরিস্থিতিতে চীন সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে। তারা অর্থনৈতিক শাস্তি এড়িয়ে সস্তায় তেল পাচ্ছে এবং রাশিয়া ও ইউরোপের উপর তাদের ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বাড়িয়েছে।
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দিলেও, ভারতকে দূরে ঠেলে দিয়ে তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। মার্কিন প্রশাসন স্বীকার করেছে যে এটি একটি দ্বৈত নীতি, তবে তারা নিজেদের কৌশলগত স্বার্থেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে।