Voter List: ভোটার তালিকায় ভুয়ো নথি দিলেই ৭ বছরের জেল! নির্বাচন কমিশনের কড়া হুঁশিয়ারি
Voter List: পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধনের বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর (SIR) প্রক্রিয়ার ফর্ম জমা দেওয়ার কাজ সদ্য শেষ হয়েছে। ভোটার তালিকায় নাম তোলা, সংশোধন বা স্থানান্তরের জন্য রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য আবেদন জমা পড়েছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার ঠিক পরেই নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। কমিশন পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে যে, যারা এই প্রক্রিয়ায় কোনো প্রকার জাল নথি বা ভুল তথ্য জমা দিয়ে ভোটার হওয়ার চেষ্টা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভুয়ো ভোটার এবং অনুপ্রবেশকারীদের আটকাতে এবার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে কমিশন।
শাস্তির কঠোর বিধান ও নতুন আইন
নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, ভোটার তালিকায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবার ভারতীয় ন্যায়সংহিতার (Bharatiya Nyaya Sanhita) কঠোর ধারা প্রয়োগ করা হবে। ভারতীয় ন্যায়সংহিতার ৩৩৭ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি সরকারি নথি জাল করেন বা জালিয়াতির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেন, তবে তার সর্বোচ্চ সাত বছরের জেল এবং মোটা অঙ্কের জরিমানা হতে পারে। কমিশনের এই হুঁশিয়ারি শুধুমাত্র ভোটার কার্ডের ক্ষেত্রেই নয়, বরং অন্যান্য সরকারি নথির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
যেসব নথির ক্ষেত্রে এই জালিয়াতি ধরা পড়লে শাস্তি হবে, সেগুলি হলো:
- ভোটার কার্ড (Voter ID Card)
- আধার কার্ড (Aadhaar Card)
- জন্ম, বিবাহ বা মৃত্যুর শংসাপত্র
- আদালতের কোনো নথি বা সরকারি অফিসের ডকুমেন্ট
- পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি বা কোনো সরকারি কর্মচারীর দেওয়া শংসাপত্র
জালিয়াতির ধরণ ও শনাক্তকরণের চ্যালেঞ্জ
কমিশনের নজরে এসেছে যে, মূলত অনুপ্রবেশকারী বা রাজ্যের বাইরের বাসিন্দারা স্থানীয় বাসিন্দাদের বাবা-মা সাজিয়ে ভুয়ো নথির মাধ্যমে ভোটার তালিকায় নাম তোলার চেষ্টা করছে। এই জালিয়াতির ধরণগুলি বেশ উদ্বেগজনক:
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হন- সম্পর্কের জালিয়াতি: বয়সের সামঞ্জস্য রেখে স্থানীয় কোনো বয়স্ক ব্যক্তিকে বাবা বা মা হিসেবে দেখিয়ে ফর্ম পূরণ করা হচ্ছে।
- নথির কারচুপি: বিশেষ করে বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে, যাদের ভোটার কার্ডে স্বামীর নাম থাকে কিন্তু বাবার নামের কোনো শক্ত প্রমাণ নেই, তারা অনেক সময় ভুয়ো স্কুল সার্টিফিকেট বা প্যান কার্ড ব্যবহার করছেন। প্যান কার্ডে নিজের ইচ্ছেমতো বাবার নাম বসিয়ে তা প্রুফ হিসেবে জমা দেওয়া হচ্ছে।
- যাচাইকরণের সমস্যা: বুথ লেভেল অফিসার বা বিএলও-রা (BLO) যখন যাচাই করতে যান, তখন সাপোর্টিং ডকুমেন্ট দেখেই তারা রিপোর্ট দেন। কিন্তু সেই সাপোর্টিং ডকুমেন্টই যদি নিখুঁতভাবে জাল করা হয়, তবে তা সাধারণ চোখে ধরা অত্যন্ত কঠিন।
প্রযুক্তির ব্যবহার ও পরবর্তী পদক্ষেপ
এই ধরনের জালিয়াতি রুখতে এবং ভুয়ো ভোটারদের চিহ্নিত করতে নির্বাচন কমিশন এবার আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (AI) প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোটারদের নাম, ছবি এবং অন্যান্য তথ্য স্ক্যান করা হচ্ছে। এর ফলে একই ছবি বা তথ্যের পুনরাবৃত্তি বা গরমিল খুব সহজেই ধরা পড়বে।
এসআইআর প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ ও গুরুত্বপূর্ণ তারিখগুলি নিচে দেওয়া হলো:
| তারিখ | বিবরণ |
|---|---|
| ১৬ই ডিসেম্বর | খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ |
| ১৬ই ডিসেম্বর – ১৫ই জানুয়ারি | খসড়া তালিকা সংক্রান্ত অভিযোগ ও দাবি পেশ |
| ১৬ই ডিসেম্বর – ৭ই ফেব্রুয়ারি | অভিযোগ খতিয়ে দেখা ও শুনানি (Hearing) |
| ১৪ই ফেব্রুয়ারি | এসআইআর-এর চূড়ান্ত তালিকা (Final List) প্রকাশ |
কমিশনের এই কড়া পদক্ষেপের ফলে আশা করা হচ্ছে যে, আসন্ন চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনেক বেশি স্বচ্ছ এবং ত্রুটিমুক্ত হবে। সাধারণ নাগরিকদের কাছে অনুরোধ, তারা যেন সঠিক নথি দিয়েই আবেদন করেন এবং কোনো অসাধু উপায়ের আশ্রয় না নেন।