WB School Holiday: শিক্ষকদের কি স্কুলে যেতেই হবে? জানুন হাইকোর্টের পুরনো রায় ও বর্তমান নির্দেশ

WB School Holiday: প্রচণ্ড গরমে রাজ্যে আবার স্কুল ছুটির ঘোষণা হয়েছে, আর তার সাথেই ফিরে এসেছে পুরনো প্রশ্ন— ছাত্রছাত্রীদের ছুটি থাকলেও শিক্ষকদের কি স্কুলে যেতে হবে? এই বিষয়ে শিক্ষা দপ্তরের বর্তমান নির্দেশিকার পাশাপাশি একটি পুরনো মামলার হাইকোর্টের রায়ও রয়েছে, যা এই বিভ্রান্তিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। আসুন, পুরো বিষয়টি বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
বর্তমান পরিস্থিতি: শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশ
তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যের সমস্ত সরকারি এবং সরকার-পোষিত স্কুলে ১৩ এবং ১৪ জুন, ২০২৫, পঠন-পাঠন (teaching-learning activities) স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলের স্কুলগুলি এই নির্দেশের বাইরে থাকবে।
এই ঘোষণার পরেই শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে স্কুলে উপস্থিতি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। সেই বিভ্রান্তি দূর করতে শিক্ষা দপ্তর স্পষ্ট জানিয়েছে যে, শুধুমাত্র ছাত্রছাত্রীদের জন্য পঠন-পাঠন বন্ধ থাকছে। কিন্তু ভর্তি প্রক্রিয়া, ফলাফল তৈরি এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কাজ চালু রাখার জন্য শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের স্কুলে উপস্থিত থাকতে হবে।
ঐতিহাসিক রায়: কী বলেছিল কলকাতা হাইকোর্ট?
বর্তমান পরিস্থিতি বোঝার জন্য আমাদের ২০১৫ সালের একটি মামলার দিকে ফিরে তাকাতে হবে।
- ঘটনা: ২০১৫ সালের ৮ থেকে ১৩ জুন, তাপপ্রবাহের কারণে রাজ্য সরকার স্কুলগুলিতে ক্লাস সাসপেন্ড করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু একটি স্কুলের কর্তৃপক্ষ সেই সময় অনুপস্থিত থাকার জন্য শিক্ষকদের শো-কজ নোটিস দেয় এবং তাদের অনুপস্থিত হিসেবে চিহ্নিত করে।
- মামলা: শিক্ষকরা এর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন (W.P. 25831 (W) OF 2015)।
- হাইকোর্টের রায়: ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর, বিচারপতি দেবাংশু বসাক এই মামলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দেন। রায়ে বলা হয়, সরকারি নির্দেশিকায় ক্লাস সাসপেন্ড করার অর্থ হল ওই সময়টা ছুটি থাকবে। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের অনুপস্থিত হিসেবে গণ্য করতে পারে না। আদালত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে জারি করা সেই নোটিসটি বাতিল করে দেয়।
বর্তমান নির্দেশ বনাম পুরনো রায়
তাহলে প্রশ্ন হল, হাইকোর্টের পুরনো রায় থাকা সত্ত্বেও কেন এবার শিক্ষকদের স্কুলে যেতে হচ্ছে?
এর প্রধান কারণ হল সরকারি নির্দেশিকার ভাষার পরিবর্তন এবং শিক্ষা দপ্তরের তৎপরতা। ২০১৫ সালের বিজ্ঞপ্তিতে শুধুমাত্র “ক্লাস সাসপেন্ড” করার কথা বলা হয়েছিল, যার ব্যাখ্যা আদালত ‘ছুটি’ হিসেবে করেছিল। কিন্তু এবার “পঠন-পাঠন” বা “teaching-learning activities” বন্ধের কথা বলা হয়েছে, যা শুধুমাত্র ক্লাসরুমের শিক্ষাদানকে বোঝায়।
সম্ভবত পুরনো অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, এবার কোনো আইনি বিভ্রান্তির সুযোগ না রেখেই শিক্ষা দপ্তর আগে থেকে জানিয়ে দিয়েছে যে প্রশাসনিক কাজ চলবে এবং তার জন্য শিক্ষকদের স্কুলে আসতেই হবে।
সুতরাং, কলকাতা হাইকোর্টের একটি পুরনো রায় শিক্ষকদের পক্ষে থাকা সত্ত্বেও, এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। শিক্ষা দপ্তরের বর্তমান নির্দেশিকা অত্যন্ত স্পষ্ট। সেই অনুযায়ী, ছাত্রছাত্রীদের পঠন পাঠন বন্ধ থাকলেও স্কুলের প্রশাসনিক কাজকর্ম চালু রাখার জন্য শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের স্কুলে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক।