WBPSC Miscellaneous Result: PSC মিসলেনিয়াস পরীক্ষার ফলাফল ঘিরে তুমুল বিতর্ক, নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করল কমিশন

WBPSC Miscellaneous Result: পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (PSC) মিসলেনিয়াস পরীক্ষার প্রিলিমিনারি ২০২৩-এর ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পরেই শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। এক পরীক্ষার্থীর জাতিগত শংসাপত্র নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন, যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে জোরদার আলোচনা। এই বিতর্কের ফলে একদিকে যেমন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, তেমনই PSC-এর স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। তবে এই বিষয়ে পিএসসি যথাযথ ব্যাখ্যাও দিয়েছে। চলুন, পুরো বিষয়টি বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে কে?
বিতর্কের মূলে রয়েছেন সায়ন ব্যানার্জি নামক এক পরীক্ষার্থী। PSC দ্বারা প্রকাশিত মেধাতালিকায় তার নাম তফসিলি উপজাতি (ST) বিভাগের অধীনে দেখা গিয়েছে। ‘ব্যানার্জি’ পদবি সাধারণত ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায়, সায়নের ST তালিকায় অন্তর্ভুক্তি অনেককেই অবাক করেছে। এরপরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় একাংশ অভিযোগ করেন যে, ওই পরীক্ষার্থী সম্ভবত ভুল জাতিগত শংসাপত্র ব্যবহার করে পরীক্ষায় বসেছেন। অথবা অনলাইনে ফরম ফিলাপের সময় ভুল করে জেনারেল ক্যাটাগরির জায়গায় এসটি লিখে ফেলেছে।
কেন এই বিষয়টি এত গুরুত্বপূর্ণ?
এই বিতর্কের প্রধান কারণ হলো কাট-অফ মার্কস। সাধারণ ক্যাটাগরির (General) জন্য কাট-অফ মার্কস যেখানে ১৪৫, সেখানে ST বিভাগের জন্য কাট-অফ মার্কস অনেকটাই কম, মাত্র ১১৭। নেটিজেনদের একাংশের দাবি, সায়ন ব্যানার্জি সাধারণ ক্যাটাগরির কাট-অফ মার্কস পার করতে পারেননি এবং ST কোটার সুবিধা নিয়েই তিনি পরবর্তী পর্বের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছেন। যদি এই অভিযোগ সত্যি হয়, তবে এটি অন্যান্য যোগ্য প্রার্থীদের প্রতি অবিচার।
PSC কী বলছে?
এই ক্রমবর্ধমান বিতর্কের মুখে পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (PSC) নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। PSC-এর চেয়ারপার্সন মহুয়া ব্যানার্জি জানিয়েছেন যে, প্রিলিমিনারি পরীক্ষার স্তরে প্রার্থীদের দাখিল করা নথি যাচাই করা হয় না। অনলাইন ফর্ম পূরণের সময় প্রার্থীরা যে তথ্য দেন, তা সেই মুহূর্তে মেনে নেওয়া হয়। মূলত, মেইন পরীক্ষা পাশ করার পর ইন্টারভিউয়ের আগে সমস্ত নথি, যার মধ্যে জাতিগত শংসাপত্রও রয়েছে, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা হয়।
তার মতে, যদি কোনো প্রার্থী ভুলবশত বা ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের ক্যাটাগরি ভুল দিয়ে থাকেন, তবে তা নথি যাচাইয়ের সময় ধরা পড়বে এবং তার প্রার্থীপদ বাতিল হতে পারে। তাই এই বিষয়টি নিয়ে এখনই এত হইচই করার কোনো প্রয়োজন নেই। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে।
PSC-এর চূড়ান্ত পদক্ষেপ: প্রার্থীপদ বাতিল
সোশ্যাল মিডিয়া এবং চাকরিপ্রার্থীদের চাপের মুখে অবশেষে কড়া পদক্ষেপ নিল পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশন। ১৮ই জুলাই, ২০২৫ তারিখে একটি নতুন বিজ্ঞপ্তি (No. 131 P.S.C. / Con.) জারি করে কমিশন জানায় যে, সায়ন ব্যানার্জির (রোল নম্বর: 1800575) প্রার্থীপদ বাতিল করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে:
“সমস্ত আসল শংসাপত্র খতিয়ে দেখার পর এটা স্পষ্ট যে, উক্ত প্রার্থী তার বিভাগ এবং প্রয়োজনীয় যোগ্যতা সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন।”
এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিশন জানিয়ে দিয়েছে যে, সায়ন ব্যানার্জি ST বিভাগের অন্তর্ভুক্ত নন এবং ভুল তথ্য দেওয়ার কারণেই তার প্রার্থীপদ বাতিল করা হলো।
রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনাটি রাজনৈতিক মাত্রা পেয়েছে। বিজেপি নেতা অনুপম হাজরা এই বিষয়ে কটাক্ষ করেছেন। অন্যদিকে, তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ এবং PSC-এর প্রাক্তন সদস্য মৃগাঙ্ক মাহাতো জানিয়েছেন যে, এটি একটি সাধারণ বিষয় এবং নথি যাচাইয়ের সময়েই এর সমাধান হয়ে যাবে। তিনি এই বিষয়টিকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখার আবেদন জানিয়েছেন।
পরীক্ষার্থীদের মধ্যে এই ঘটনা মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেক পরীক্ষার্থী একটি সংশোধিত তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন, যেখানে এই ধরনের ভুলত্রুটি থাকবে না। তাদের মতে, এই ধরনের ঘটনা পরীক্ষার স্বচ্ছতার উপর প্রশ্নচিহ্ন তুলে দেয় এবং যোগ্য প্রার্থীদের মনোবল ভেঙে দেয়।
আগামী পদক্ষেপ কী?
আপাতত PSC জানিয়েছে যে, তারা তাদের নিয়ম অনুযায়ীই চলবে। অর্থাৎ, মেইন পরীক্ষার পর এবং ইন্টারভিউয়ের আগে নথি যাচাই করা হবে। যদি সায়ন ব্যানার্জির জাতিগত শংসাপত্রে কোনো গরমিল পাওয়া যায়, তবে তার বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরীক্ষার্থীদের অযথা বিভ্রান্ত না হয়ে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনাটি আমাদের সিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে। অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়ার সরলীকরণের পাশাপাশি, কীভাবে প্রাথমিক স্তরেই কিছু সাধারণ তথ্য যাচাই করা যায়, তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। আপাতত, সকল পরীক্ষার্থীদের উচিত PSC-এর সরকারি ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করা এবং কোনো গুজবে কান না দেওয়া।