চাকরি

WBSSC “আদালত অবমাননা হতে পারে,” SSC-র নতুন নিয়োগ বিধি নিয়ে কেন হুঁশিয়ারি ফিরদৌস সামিমের?

WBSSC Teacher Recruitment: ২০১৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) বিতর্কিত এবং পরবর্তীকালে বাতিল হওয়া শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে জটিলতা অব্যাহত। কলকাতা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর রাজ্য সরকার যখন নতুন করে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি (SLST 2025) প্রকাশ করেছে, ঠিক তখনই এই নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার নিয়মাবলী, বিশেষত ২০১৬ সালের বাতিল প্যানেলের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এর প্রযোজ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিশিষ্ট আইনজীবী ফিরদৌস সামিম। এক সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে তিনি এই নতুন নিয়মকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন এবং ২০১৬-র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে পুরোনো নিয়মেই পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছেন।

আইনজীবী সামিমের মতে, “২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে যদি কোনও পুনর্মূল্যায়ন বা নতুন করে প্যানেল তৈরির সুযোগ দেওয়া হয়, তবে তা অবশ্যই ২০১৬ সালের তৎকালীন নিয়ম অনুসারেই হওয়া উচিত।” তিনি স্পষ্টভাবে জানান যে, নতুন নিয়ম (২০২৫) বাতিল হওয়া ২০১৬-র প্রক্রিয়ার উপর চাপিয়ে দেওয়া কেবল আইনবিরুদ্ধই নয়, এটি আদালতের নির্দেশেরও পরিপন্থী হতে পারে এবং ফলস্বরূপ আদালত অবমাননার সামিল হতে পারে। তাঁর যুক্তি, “সাধারণত কোনও আইন বা নিয়ম ভবিষ্যতের জন্য প্রযোজ্য হয় (prospective effect), অতীতের কোনও ঘটনার উপর তার প্রভাব পড়ে না (retrospective effect)।”

ফিরদৌস সামিমের নজরে নতুন নিয়মের ‘ত্রুটি’:

আইনজীবী সামিম পুরোনো (২০১৬) ও নতুন (২০২৫) নিয়োগ বিধির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে বেশ কয়েকটি উদ্বেগজনক দিক তুলে ধরেছেন:

  1. অ্যাকাডেমিক যোগ্যতার গুরুত্ব হ্রাস:
    • পুরোনো নিয়ম (নবম-দশম): অ্যাকাডেমিক ও পেশাগত যোগ্যতায় ৩৫ নম্বর।
    • নতুন নিয়ম (২০২৫): অ্যাকাডেমিক যোগ্যতায় মাত্র ১০ নম্বর।
    ফিরদৌস সামিমের মতে, এটি অত্যন্ত মেধাবী কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় সামান্য পিছিয়ে পড়া প্রার্থীদের প্রতি অবিচার। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের ফলাফলকে কার্যত গুরুত্বহীন করে দেওয়া হচ্ছে।
  2. অভিজ্ঞতার জন্য নতুন করে নম্বর সংযোজন:
    • নতুন নিয়ম (২০২৫): পূর্ব অভিজ্ঞতার জন্য ১০ নম্বর।
    এটি ২০১৬ সালের নিয়মে ছিল না। এর ফলে সদ্য পাশ করা বা অভিজ্ঞতাহীন প্রার্থীরা সরাসরি প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বেন। সামিম প্রশ্ন তুলেছেন, যে প্রার্থীরা দুর্নীতির কারণে এতদিন বঞ্চিত ছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতার নম্বর কীভাবে প্রযোজ্য হবে?
  3. ইন্টারভিউ ও ডেমোনস্ট্রেশনের নম্বর বিভাজন ও বৃদ্ধি:
    • পুরোনো নিয়ম (নবম-দশম): ইন্টারভিউতে ১০ নম্বর।নতুন নিয়ম (২০২৫): মৌখিক ইন্টারভিউ ও লেকচার ডেমোনস্ট্রেশনে ২০ নম্বর।
    সামিমের মতে, এই ২০ নম্বর ইন্টারভিউয়ারদের হাতে অবাধ স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা (arbitrary power) তুলে দেবে, যা অস্বচ্ছতার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।
  4. লিখিত পরীক্ষার গুরুত্ব বৃদ্ধি ও ইন্টারভিউ তালিকার ভিত্তি পরিবর্তন:
    • পুরোনো নিয়ম (নবম-দশম): লিখিত পরীক্ষা ৫৫, ৯০ নম্বরের ভিত্তিতে ইন্টারভিউ তালিকা।
    • নতুন নিয়ম (২০২৫): লিখিত পরীক্ষা ৬০, ৭০ নম্বরের (লিখিত + অ্যাকাডেমিক) ভিত্তিতে ইন্টারভিউ তালিকা।
    এটি লিখিত পরীক্ষাকে অধিক গুরুত্ব দিলেও, সামগ্রিক মূল্যায়নে অ্যাকাডেমিক যোগ্যতাকে কোণঠাসা করছে।
  5. ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রার্থী ডাকার অনুপাতে বদল:
    আগে যেখানে শূন্যপদের অনুপাতে ১:৪ হারে প্রার্থী ডাকা হতো, এখন তা বাড়িয়ে ১:৬ করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এর ফলে, লিখিত পরীক্ষায় সামান্য ভালো নম্বর পেলেই অনেকে ইন্টারভিউর জন্য বিবেচিত হতে পারেন, যা সামগ্রিক মেধার বিচারে অন্তরায় হতে পারে।

আদালতের রায় ও বর্তমান প্রেক্ষাপট:

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগে ওএমআর শিট বিকৃতি, র‍্যাঙ্ক জাম্পিং, টাকার বিনিময়ে চাকরি সহ ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্ট স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ বাতিল করে। সুপ্রিম কোর্টও এই রায়কে মান্যতা দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে “দুর্নীতির পাঁকে নিমজ্জিত” আখ্যা দেয় এবং রাজ্য সরকারকে ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়। সেই মতো, পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন SLST 2025-এর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, যেখানে স্বচ্ছতা বাড়াতে ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ ১০ বছর সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে।

সবার আগে খবরের আপডেট পান!

টেলিগ্রামে যুক্ত হন

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাকরি হারানো শিক্ষকদের বয়স ছাড় ও পূর্ব অভিজ্ঞতার বিষয়টি নতুন নিয়োগে বিবেচনার আশ্বাস দিলেও, আইনজীবী ফিরদৌস সামিমের বক্তব্য অনুযায়ী, এটি ২০১৬-র বঞ্চিত প্রার্থীদের জন্য যথেষ্ট নয়। তাঁর দাবি, ২০১৬-র বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যারা যোগ্য ছিলেন, তাদের ক্ষেত্রে যদি নতুন করে কোনও সুযোগ তৈরি হয়, তবে তা সেই পুরোনো নিয়ম মেনেই হওয়া উচিত, নচেৎ তা হবে “বঞ্চনার উপর আরও বঞ্চনা”।

এই পরিস্থিতিতে, ২০১৬ সালের বঞ্চনার শিকার হওয়া যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের ভবিষ্যৎ আরও একবার প্রশ্নের মুখে। একদিকে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে সরকারের আশ্বাস, অন্যদিকে পুরোনো নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম প্রয়োগের বিতর্ক – সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ জটিল। এখন দেখার, আইনি লড়াই কোন দিকে গড়ায় এবং রাজ্য সরকার এই বিষয়টি কীভাবে সমাধান করে।

WBPAY Team

আমাদের প্রতিবেদন গুলি WBPAY Team এর দ্বারা যাচাই করে লেখা হয়। আমরা একটি স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম যা পাঠকদের জন্য স্পষ্ট এবং সঠিক খবর পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য এবং সাংবাদিকতার মান সম্পর্কে জানতে, অনুগ্রহ করে আমাদের About us এবং Editorial Policy পৃষ্ঠাগুলি পড়ুন।
Back to top button