WBSSC: “নতুন দুর্নীতির ব্লুপ্রিন্ট” নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জনের নিশানায় রাজ্য

WBSSC: দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে প্রকাশিত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন (WBSSC)-এর নতুন শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। কিন্তু এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই দানা বেঁধেছে নতুন বিতর্ক। আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য এই নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর মতে, এই বিজ্ঞপ্তি আসলে দুর্নীতিকে আরও সুগম করার একটি নতুন ব্লুপ্রিন্ট ছাড়া আর কিছুই নয়।
বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের মূল অভিযোগ:
এক সাক্ষাৎকারে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য স্পষ্টভাবে জানান যে, গত ৩০শে মে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী যে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে, তা আসলে নিয়োগ না করার এবং দুর্নীতিকে আরও উৎসাহিত করার একটি সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ। তাঁর কথায়, “এই পুরো বিজ্ঞপ্তিটাই হচ্ছে দুর্নীতিমূলক প্রক্রিয়াকে নতুন করে চালু করা।”
তাঁর মূল আপত্তির বিষয়গুলি হলো:
- একাডেমিক নম্বরের গুরুত্ব হ্রাস ও ইন্টারভিউয়ের ওপর জোর: ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন যে, নতুন নিয়মে একাডেমিক মার্কসের গুরুত্ব কমিয়ে ইন্টারভিউয়ের ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে, স্বজনপোষণ ও অর্থের বিনিময়ে নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। তিনি বলেন, “যে টাকা দেবে তাকে বেশি নম্বর ইন্টারভিউয়ে, যে দেবে না কম নম্বর। এ মহা দুর্নীতিবাজ পরিকল্পক।”
- পূর্ব অভিজ্ঞতার জন্য নম্বর: বিজ্ঞপ্তিতে পূর্ব অভিজ্ঞতার জন্য ১০ নম্বর ধার্য করা হয়েছে। আইনজীবীর মতে, এর মাধ্যমে সেইসব প্রার্থীদের সুবিধা করে দেওয়া হচ্ছে যাদের চাকরি অতীতে দুর্নীতির কারণে বাতিল হয়েছে।
- লিখিত পরীক্ষার নম্বর হ্রাস (একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণী): একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর ক্ষেত্রে OMR ভিত্তিক লিখিত পরীক্ষার নম্বর কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা মেধার মূল্যায়নে বাধা সৃষ্টি করবে বলে তিনি মনে করেন।
- মেধার অবমূল্যায়ন: তাঁর মতে, এই নতুন নিয়ম মেধাকে বিসর্জন দিয়ে দুর্নীতিগ্রস্তদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার একটি চক্রান্ত। “মেধাকে বিসর্জন দিয়ে যারা দুর্নীতি করে টিকে থাকতে পারবেন… তাদেরই কি করে বাঁচিয়ে রাখা যায় তারই পরিকল্পনা।”
- আইনি চ্যালেঞ্জের সম্ভাবনা: ভট্টাচার্য বিশ্বাস করেন যে, যোগ্য ও মেধাবী প্রার্থীরা এই বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে অবশ্যই আদালতে যাবেন।
নিয়োগ দুর্নীতির প্রেক্ষাপট:
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এবং মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে বহু শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টও সেই রায় বহাল রাখে। পুরনো চাকরিহারাদের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলী ও পুলিশের ভূমিকা:
আইনজীবী ভট্টাচার্য আরও অভিযোগ করেন যে, চাকরিপ্রার্থীদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকেও পুলিশ দিয়ে দমন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। শিয়ালদহ স্টেশনে চাকরিপ্রার্থীদের একটি পরিকল্পিত মিছিল শুরু হওয়ার আগেই পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং কয়েকজনকে আটক করে। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর দুর্নীতির পর্দা যত ফাঁস হচ্ছে ততই পুলিশের কৌশল পাল্টাচ্ছে।” তাঁর মতে, এটি একটি “পুলিশি রাজ্যে” পরিণত হয়েছে এবং শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বাধা দিচ্ছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বিরোধী দলগুলিকে সচরাচর কোনও কর্মসূচির জন্য পুলিশের অনুমতি দেওয়া হয় না, যার ফলে তাদের আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়। ভট্টাচার্য জোর দিয়ে বলেন যে, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের জন্য পুলিশের অনুমতির প্রয়োজন নেই, এটি একটি সাংবিধানিক অধিকার।
নতুন বিজ্ঞপ্তির খুঁটিনাটি:
- মোট শূন্যপদ: ৩৫,৭২৬ (মাধ্যমিক স্তরে ২৩,২১২ এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ১২,৫১৪)।
- বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ: ৩০শে মে, ২০২৫।
- অনলাইন রেজিস্ট্রেশন: ১৬ই জুন থেকে ১৪ই জুলাই, ২০২৫।
- পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ: সেপ্টেম্বর, ২০২৫-এর প্রথম সপ্তাহ।
- নিয়োগ প্রক্রিয়া: লিখিত পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ।
এই নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এবং আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের তোলা অভিযোগগুলি রাজ্যের শিক্ষা ও রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আগামী দিনে এই বিতর্ক কোন দিকে মোড় নেয়, সেদিকেই তাকিয়ে থাকবে রাজ্যের হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী এবং সাধারণ মানুষ।