WBSSC Supreme Court: সুপ্রিম কোর্টে বড় স্বস্তি ২৬,০০০ শিক্ষকের! চাকরির মেয়াদ বাড়ল আগস্ট ২০২৬ পর্যন্ত
WBSSC Supreme Court: পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ক্ষেত্রে আজ এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত প্রায় ২৬,০০০ শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর জন্য বড়সড় স্বস্তির খবর এল দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে। সুপ্রিম কোর্ট আজ এক ঐতিহাসিক রায়ে জানিয়ে দিল যে, যোগ্য শিক্ষকদের এখনই চাকরি হারাতে হচ্ছে না। তাঁদের চাকরির মেয়াদ আরও আট মাস বৃদ্ধি করা হয়েছে। ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, অর্থাৎ আজকের এই শুনানিতে বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি অলোক আরাধ্যর ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশিকা জারি করেছেন।
সুপ্রিম কোর্টের নতুন নির্দেশিকা
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত। কিন্তু আজকের শুনানির পর সেই সময়সীমা বাড়িয়ে ৩১ আগস্ট ২০২৬ করা হয়েছে। অর্থাৎ, আগামী বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত এই সমস্ত শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা নিশ্চিন্তে তাঁদের পদে বহাল থাকতে পারবেন। আদালতের এই সিদ্ধান্তে রাজ্যের হাজার হাজার পরিবারে সাময়িক স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়েছে।
কেন সময় বাড়ানোর প্রয়োজন হলো?
আজকের শুনানিতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের বা এসএসসির আইনজীবীরা আদালতের কাছে যুক্তি পেশ করেন যে, নিয়োগ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল এবং এটি সম্পন্ন করতে বেশ কিছুটা সময় প্রয়োজন। কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী:
- বর্তমানে প্রায় ৪০,০০০ শূন্যপদ রয়েছে।
- প্রার্থীদের ডাকার অনুপাত ১:১.৬ রাখা হয়েছে, যার ফলে ভেরিফিকেশন এবং ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
- ফাইনাল মেরিট লিস্ট প্রকাশ, কাউন্সেলিং, রেকমেন্ডেশন লেটার দেওয়া এবং পুলিশ ভেরিফিকেশন ও মেডিক্যাল টেস্ট—এই সমস্ত ধাপ শেষ করতে কমিশনের হাতে পর্যাপ্ত সময় নেই।
কমিশন আদালতের কাছে জুন ২০২৬ পর্যন্ত সময় প্রার্থনা করেছিল। তবে ডিভিশন বেঞ্চ পরিস্থিতি বিবেচনা করে আরও দুই মাস বাড়িয়ে আগস্ট ২০২৬ পর্যন্ত সময় মঞ্জুর করেছে।
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হনআদালত কক্ষে বাদানুবাদ ও ‘অতৃপ্ত আত্মা’ মন্তব্য
আজকের শুনানিতে আদালত কক্ষে বেশ উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় লক্ষ্য করা যায়। মামলাকারীদের আইনজীবী এবং বরিষ্ঠ সিপিআইএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন যে, রাজ্য সরকার এবং কমিশন ইচ্ছাকৃতভাবে সময় নষ্ট করছে। তাঁর মতে, ‘ইললিগাল অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ বা অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের সুরক্ষা দেওয়াই কমিশনের মূল উদ্দেশ্য। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যাদের নিয়োগ আগেই বাতিল বলে গণ্য হয়েছে, তাদের কেন বারবার সময় দিয়ে টিকিয়ে রাখা হচ্ছে?
এরই পাল্টা জবাবে এসএসসির হয়ে সওয়াল করা বরিষ্ঠ আইনজীবী ও সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান যে, কলকাতা হাইকোর্টে একশোরও বেশি মামলা ঝুলে থাকায় নিয়োগ প্রক্রিয়া বারবার বাধার মুখে পড়ছে। সওয়াল-জবাবের এক পর্যায়ে তিনি বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে উদ্দেশ্য করে “অতৃপ্ত আত্মা” বলে কটাক্ষ করেন, যা নিয়ে আদালত কক্ষে সাময়িক হাসির রোল ওঠে।
নিয়োগ প্রক্রিয়ার সম্ভাব্য সময়সীমা
নিচে দেওয়া তালিকাটি থেকে দেখে নিন নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপের সম্ভাব্য তারিখ ও সময়সীমা:
| কার্যক্রম | সম্ভাব্য সময়সীমা |
|---|---|
| ফাইনাল মেরিট লিস্ট প্রকাশ | ৭ জানুয়ারি ২০২৬ (সম্ভাব্য) |
| কাউন্সেলিং শুরু | ১৫ জানুয়ারি ২০২৬-এর মধ্যে |
| চাকরির বর্ধিত মেয়াদ | ৩১ আগস্ট ২০২৬ পর্যন্ত |
| সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সমাপ্তি | জুন থেকে আগস্ট ২০২৬ |
নতুন চাকরিপ্রার্থীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ
সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে কর্মরত শিক্ষকরা স্বস্তি পেলেও, নতুন চাকরিপ্রার্থীদের জন্য এটি খুব একটা সুখবর নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই সময়সীমা বৃদ্ধির ফলে বেশ কিছু নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে:
- নিয়োগে ধীরগতি: বর্তমান প্রক্রিয়াটি আগস্ট ২০২৬ পর্যন্ত চললে, নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আসতে অনেকটা দেরি হতে পারে।
- মেধাবীদের অপেক্ষা: যারা যোগ্য এবং উচ্চ নম্বর পেয়েও বসে আছেন, তাঁদের অপেক্ষার প্রহর আরও দীর্ঘ হবে।
- আইনি জট: পুরোনো জট না কাটলে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা কমিশনের পক্ষে চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়াবে।
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি ও তার পরবর্তী আইনি লড়াই যে এখনই শেষ হচ্ছে না, তা আজকের রায়ে আবারও স্পষ্ট হয়ে গেল।