Zoho vs Microsoft: মাইক্রোসফটকে টেক্কা দিচ্ছে ভারতের জোহো! জানুন স্বদেশী সংস্থার উত্থানের কাহিনী

Zoho vs Microsoft: এক অভূতপূর্ব পদক্ষেপে, ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তি সংস্থা জোহো (Zoho) বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সংস্থা মাইক্রোসফটকে (Microsoft) সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। এই ঘোষণায় প্রযুক্তি বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে এবং ‘স্বদেশী’ উদ্ভাবনের প্রতি নতুন করে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। জোহোর এই আত্মবিশ্বাস শুধু কথার কথা নয়, এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের পরিশ্রম, উদ্ভাবন এবং এক অসাধারণ ব্যবসায়িক মডেল।
স্বদেশী আন্দোলনের নতুন ঢেউ
এই ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব (Ashwini Vaishnaw) টুইট করে জানান যে তিনি তাঁর সমস্ত প্রেজেন্টেশন জোহোর সফটওয়্যার ব্যবহার করে তৈরি করছেন। এই পদক্ষেপটি ছিল মূলত স্বদেশী পণ্য ব্যবহারের দিকে একটি বড় ইঙ্গিত। জোহোর প্রতিষ্ঠাতা শ্রীধর ভেম্বু (Sridhar Vembu) এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানান এবং এর পরেই জোহো বনাম মাইক্রোসফটের আলোচনাটি জাতীয় স্তরে পৌঁছে যায়।
জোহোর উত্থানের কাহিনী
জোহো কোনো নতুন বা ছোট সংস্থা নয়। হুয়ান লিস্ট (Hurun List) অনুযায়ী, এই সংস্থার বর্তমান মূল্যাঙ্ক প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা, যা প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলারের সমান। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো, জোহো একটি বুটস্ট্র্যাপড (Bootstrapped) সংস্থা, অর্থাৎ এর সমস্ত পুঁজি সংস্থার নিজস্ব, কোনো বিদেশি বিনিয়োগ ছাড়াই। এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা শ্রীধর ভেম্বু, আইআইটি মাদ্রাজ (IIT Madras) থেকে পড়াশোনা শেষ করে আমেরিকা পাড়ি দেন। কিন্তু তিনি সেখানে স্থায়ী না হয়ে দেশে ফিরে আসেন এবং তামিলনাড়ুর এক প্রত্যন্ত গ্রামে নিজের সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।
কেন জোহো মাইক্রোসফটের বিকল্প হতে পারে?
জোহো শুধুমাত্র একটি বা দুটি সফটওয়্যার তৈরি করে না, বরং মাইক্রোসফট এবং গুগলের মতো সংস্থাগুলির প্রায় সমস্ত পরিষেবার বিকল্প প্রদান করে। এর মধ্যে রয়েছে:
- জোহো শো (Zoho Show): মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্টের বিকল্প।
- জোহো মেল (Zoho Mail): জিমেইলের বিকল্প।
- জোহো ক্যালেন্ডার (Zoho Calendar): গুগল ক্যালেন্ডারের বিকল্প।
- জোহো ওয়ার্কড্রাইভ (Zoho WorkDrive): গুগল ড্রাইভের বিকল্প।
- আরাটটাই (Arattai): হোয়াটসঅ্যাপের মতো মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন। এবং আরো অনেক অ্যাপ্লিকেশন।
অবশ্যই দেখুন:
আন্তর্জাতিক বাজারে জোহোর প্রভাব
জোহোর পরিষেবা শুধুমাত্র ভারতেই সীমাবদ্ধ নয়। ৬০টিরও বেশি দেশে তাদের গ্রাহক রয়েছে। অ্যামাজন (Amazon), নেটফ্লিক্স (Netflix), মার্সিডিজ-বেঞ্জ (Mercedes-Benz), ফোর্ড (Ford) এবং এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক (HDFC Bank)-এর মতো বড় বড় সংস্থাগুলি জোহোর সিআরএম (CRM) পরিষেবা ব্যবহার করে। এর থেকে বোঝা যায় যে জোহোর প্রযুক্তি আন্তর্জাতিক মানের এবং অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য।
শ্রীধর ভেম্বুর দূরদৃষ্টি
শ্রীধর ভেম্বু শুধু একজন সফল ব্যবসায়িক (businessman) নন, তিনি একজন দেশপ্রেমিকও। যখন আমেরিকা এইচ-ওয়ান-বি ভিসা (H1-B Visa) নিয়ে ভারতীয়দের উপর চাপ সৃষ্টি করছিল, তখন তিনি ভারতীয় প্রযুক্তিবিদদের দেশে ফিরে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন যে দেশে ফিরে পাঁচ বছর কঠোর পরিশ্রম করলে ভারতকে আর কোনো দেশের উপর নির্ভর করতে হবে না। তাঁর এই বার্তাটি বহু ভারতীয়কে অনুপ্রাণিত করেছে।
ভবিষ্যতের পথ
জোহোর এই উত্থান প্রমাণ করে যে ভারতীয় সংস্থাও বিশ্বমানের পণ্য তৈরি করতে সক্ষম। সরকারের সমর্থন এবং দেশীয় প্রযুক্তির প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ যদি বাড়তে থাকে, তবে জোহোর মতো আরও অনেক সংস্থা আগামী দিনে বিশ্ব মঞ্চে ভারতের নাম উজ্জ্বল করবে। মাইক্রোসফটের মতো একচ্ছত্র বাজারে জোহোর এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা গ্রাহকদের জন্যেও অত্যন্ত লাভজনক হবে বলে আশা করা যায়।