মাধ্যমিক পাশেই বাৎসরিক ১০০০০ টাকা! এখনই আবেদন করুন নবান্ন স্কলারশিপ ২০২৫-এর, জানুন বিস্তারিত

নবান্ন স্কলারশিপ ২০২৫: পশ্চিমবঙ্গের মেধাবী অথচ আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল নবান্ন স্কলারশিপ। এই স্কলারশিপের মাধ্যমে মাধ্যমিক পাশ করা যোগ্য পড়ুয়ারা তাদের পড়াশোনার খরচ চালাতে আর্থিক সহায়তা পায়। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্যও এই স্কলারশিপের আবেদন শুরু হল। আসুন, এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
নবান্ন স্কলারশিপ কী?
নবান্ন স্কলারশিপ, যা উত্তরকন্যা স্কলারশিপ নামেও পরিচিত, পশ্চিমবঙ্গ মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল (CMRF) থেকে প্রদান করা হয়। যে সমস্ত পড়ুয়ারা মাধ্যমিকে ভালো ফল করেছে কিন্তু আর্থিক দুরবস্থার কারণে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে সমস্যায় পড়ছে, তাদের জন্য এই স্কলারশিপ একটি বড় ভরসা।
যোগ্যতার মানদণ্ড
নবান্ন স্কলারশিপ ২০২৫-এর জন্য আবেদন করতে হলে নিম্নলিখিত যোগ্যতাগুলি পূরণ করতে হবে:
- স্থায়ী বাসিন্দা: আবেদনকারীকে পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা: আবেদনকারীকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ বা অন্য কোনো স্বীকৃত বোর্ড থেকে ন্যূনতম ৫০% নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করতে হবে।
- পারিবারিক আয়: আবেদনকারীর পরিবারের বার্ষিক আয় ১,৬০,০০০ টাকার মধ্যে হতে হবে।
- বর্তমান শিক্ষাবর্ষ: আবেদনকারীকে অবশ্যই ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে হবে।
বৃত্তির পরিমাণ
সাধারণত, এই স্কলারশিপের অধীনে মাধ্যমিক পাশ পড়ুয়ারা বার্ষিক ১০,০০০ টাকা আর্থিক সহায়তা পায়। এই টাকা তাদের বইপত্র কেনা, পরীক্ষার ফি জমা দেওয়া এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক পড়াশোনার খরচ চালাতে সাহায্য করে।
আবেদন প্রক্রিয়া
নবান্ন স্কলারশিপের জন্য অনলাইন এবং অফলাইন – দুটি মাধ্যমেই আবেদন করা যায়:
অনলাইন আবেদন:
- পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট cmrf.wb.gov.in -এ যান।
- স্কলারশিপ বিভাগে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করুন।
- আবেদনপত্র সঠিকভাবে পূরণ করুন এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র আপলোড করুন।
- সাবমিট করার আগে সমস্ত তথ্য ভালোভাবে মিলিয়ে নিন।
অফলাইন আবেদন:
- অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে আবেদনপত্র ডাউনলোড করুন।
- আবেদনপত্রটি সঠিকভাবে পূরণ করুন।
- প্রয়োজনীয় নথিপত্রের স্ব-প্রত্যয়িত (self-attested) কপি সংযুক্ত করুন।
- পূরণ করা আবেদনপত্র এবং সংযুক্ত নথিগুলি কলকাতার নবান্ন অফিসে গিয়ে জমা দিন অথবা নির্দিষ্ট ঠিকানায় ডাকযোগে পাঠান।
প্রয়োজনীয় নথিপত্র
আবেদনের সময় নিম্নলিখিত নথিপত্রগুলি জমা দিতে হবে:
- আধার কার্ডের কপি।
- পারিবারিক আয়ের শংসাপত্র (ইনকাম সার্টিফিকেট)।
- জন্মের প্রমাণপত্র (বার্থ সার্টিফিকেট বা অ্যাডমিট কার্ড)।
- মাধ্যমিকের মার্কশিটের কপি।
- বয়সের প্রমাণপত্র।
- রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- বিধায়কের সুপারিশপত্র (MLA Recommendation Letter) – এটি অফলাইন আবেদনের ক্ষেত্রে সাধারণত বেশি গুরুত্ব পায়।
- বর্তমান কোর্সে ভর্তির প্রমাণ (যেমন – ভর্তির রশিদ)।
- ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিশদ (পাসবুকের প্রথম পাতার কপি)।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
- এই স্কলারশিপটি কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য।
- আবেদন করার সময় সমস্ত তথ্য নির্ভুলভাবে পূরণ করা জরুরি। কোনো ভুল তথ্য দিলে আবেদন বাতিল হয়ে যেতে পারে।
- একই পড়ুয়া যদি অন্য কোনো সরকারি স্কলারশিপ পায়, তবে সেক্ষেত্রে নবান্ন স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা যাবে কিনা, তা নির্দিষ্ট নিয়মাবলী অনুযায়ী যাচাই করে নেওয়া উচিত।
- সাধারণত, এই স্কলারশিপের টাকা সরাসরি পড়ুয়ার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়।
নবান্ন স্কলারশিপ পশ্চিমবঙ্গের বহু দুঃস্থ ও মেধাবী পড়ুয়ার কাছে আশীর্বাদের মতো। সঠিক সময়ে আবেদন করে এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করলে অনেক পড়ুয়াই তাদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে। তাই, যোগ্য পড়ুয়াদের উচিত এই স্কলারশিপের বিষয়ে অবগত থাকা এবং দ্রুত আবেদন করা।