DA Movement: শুধু ডিএ নয়, দুর্নীতি ও বেকারত্বের বিরুদ্ধেও লড়াই, কর্মীদের মহাজোট -ভাস্কর ঘোষ

DA Movement: পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মীদের মহার্ঘভাতা (DA) নিয়ে দীর্ঘদিনের লড়াই আবারো রাজপথে নামতে চলেছে। রাজ্য সরকারের গড়িমসি এবং আইনি জটিলতার জাল ভেদ করে কর্মীরা তাদের অধিকার আদায়ে ক্রমাগত আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী ২৮ সে জুলাই নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে কর্মচারীরা। সম্প্রতি, সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আহ্বাহক ভাস্কর ঘোষের একটি সাক্ষাৎকারে এই আন্দোলনের বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে, যা রাজ্যের লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং কর্মীদের অধিকার
সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়, অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্ট, ২৫ শতাংশ বকেয়া মিটিয়ে দিতে বলে রাজ্য সরকারি কর্মীদের মহার্ঘভাতা পাওয়ার অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ভাস্কর ঘোষের মতে, এই রায়ের পর রাজ্য সরকারের আর ডিএ আটকে রাখার কোনো সুযোগ নেই। কর্মীদের ভয় দেখিয়ে বা চাপ সৃষ্টি করে এই আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা করা হলেও, কর্মীরা তাদের দাবিতে অবিচল। এই লড়াই শুধুমাত্র কিছু টাকার জন্য নয়, বরং এটি কর্মীদের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার লড়াই।
সরকারের আর্থিক অস্বচ্ছতা এবং সাংবিধানিক অবমাননা
ভাস্কর ঘোষ অভিযোগ করেছেন যে, রাজ্য সরকার শুধুমাত্র কর্মীদের সাথেই নয়, রাজ্যের সমস্ত নাগরিকের সাথেই প্রতারণা করছে। একদিকে সরকার আর্থিক সংকটের কথা বলছে, অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী রাজ্যের আর্থিক অবস্থা যথেষ্ট শক্তিশালী। এই দ্বিচারিতা রাজ্যের মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। তাঁর মতে, বর্তমান সরকার দেশের সংবিধান এবং আইনি কাঠামোকে উপেক্ষা করে চলেছে, যা একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
আগামী দিনের আন্দোলন এবং আইনি পদক্ষেপ
এই আন্দোলনকে আরও জোরদার করতে একাধিক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে:
- ২১শে জুলাই: শহীদ মিনারে একটি প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
- ২৮শে জুলাই: “নবান্ন চলো” অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে। সমস্ত কর্মীদের শারীরিক ভাবে এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা যায়।
- আইনি নোটিশ: রাজ্যের মুখ্য সচিব এবং অর্থ সচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার জন্য আইনি নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ডিএ আন্দোলনের বৃহত্তর প্রেক্ষাপট
“নবান্ন চলো” অভিযানের দাবি শুধুমাত্র মহার্ঘভাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর সাথে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জড়িত:
- দুর্নীতি এবং বেকারত্ব: রাজ্যের যুব সমাজ চাকরির অভাবে ভুগছে এবং সরকারি নিয়োগে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে।
- শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি: ২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেলের শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের বরখাস্ত করার প্রতিবাদে এবং ২২ লক্ষ ওএমআর শিট প্রকাশের দাবিতে এই আন্দোলন চলবে।
- নারী সুরক্ষা: রাজ্যে মহিলাদের সুরক্ষা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
- ওবিসি সম্প্রদায়ের অধিকার: ২০১০ সালের পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ওবিসি সম্প্রদায়ের সাংবিধানিক অধিকার পুনরুদ্ধারের দাবিও এই আন্দোলনের একটি অংশ।
ভবিষ্যতের পথ
আগামী ৪ঠা আগস্ট সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি রয়েছে, যা নির্ধারণ করবে মহার্ঘ ভাতা কর্মীদের মৌলিক অধিকার কিনা। ভাস্কর ঘোষ এবং আন্দোলনরত কর্মীরা আশাবাদী যে, সুপ্রিম কোর্টের রায় তাদের পক্ষেই আসবে এবং রাজ্য সরকার কর্মীদের ১০০% মহার্ঘ্যভাতা দিতে বাধ্য হবে। এই লড়াই পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের জন্য এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে এবং আগামী দিনে রাজ্যের শাসনব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।