Teacher Transfer: রাজ্যে কোনো DPSC-র অস্তিত্বই নেই? ট্রান্সফার সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় নিয়ে কী বলছেন আইনজীবী

Teacher Transfer: এক সাম্প্রতিক প্রেস সাক্ষাৎকারে, আইনজীবী ফিরদৌস সামিম কলকাতা হাইকোর্টের একটি যুগান্তকারী রায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছেন, যা পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তাঁর মতে, মহামান্য বিচারপতি রাজশ্রী ভরদ্বাজের এজলাস থেকে আসা এই রায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে রাজ্যের কোনো জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ (DPSC)-এর বর্তমানে কোনো আইনি অস্তিত্ব নেই। এই রায়ের ফলে রাজ্যের সমস্ত প্রাথমিক শিক্ষক বদলি অবৈধ বলে গণ্য হবে এবং ২০১৫ সাল থেকে হওয়া নিয়োগ প্রক্রিয়াও প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।
মামলার প্রেক্ষাপট
আইনজীবী ফিরদৌস সামিম জানান, মামলার সূত্রপাত পূর্ব মেদিনীপুরের শিক্ষিকা নীলাঞ্জনা মাইতির বদলির আদেশকে কেন্দ্র করে। প্রথমে মহামান্য বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু তাঁর বদলিতে স্থগিতাদেশ দেন, যা পরে বাতিল হয়। এরপর, পূর্ব মেদিনীপুরের ডি পি এস সি সচিব তাকে “উদ্বৃত্ত শিক্ষক” হিসেবে একটি নতুন বদলির আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধেই মহামান্য বিচারপতি রাজশ্রী ভরদ্বাজের বেঞ্চে মামলা করা হয়।
আদালতের পর্যবেক্ষণ ও ফিরদৌস সামিমের বিশ্লেষণ
মিঃ সামিম আদালতের পর্যবেক্ষণের উপর আলোকপাত করে বলেন যে, ডি পি এস সি একটি ৪৪ সদস্যের সংস্থা, যেখানে বিধায়ক, জেলা পরিষদ সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতি সদস্য এবং পৌরসভার কাউন্সিলররা অন্তর্ভুক্ত থাকেন। তাঁর মতে, বর্তমান রাজ্য সরকার এই গণতান্ত্রিক সংস্থাগুলিকে অকেজো করে শুধুমাত্র একজন চেয়ারম্যান নিয়োগের মাধ্যমে বদলির মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যা আইনত সিদ্ধ নয়।
তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, আদালতের রায় অনুযায়ী শুধুমাত্র ডি পি এস সি-র পক্ষেই বদলির অনুমোদন দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে; তার চেয়ারম্যানের এককভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো অধিকার নেই। যেহেতু বর্তমানে রাজ্যে কোনো বৈধ ডি পি এস সি নেই, তাই সমস্ত বদলির আদেশই অবৈধ।
রায়ের প্রভাব সম্পর্কে আইনজীবীর মতামত
ফিরদৌস সামিমের মতে, এই রায়ের প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে। তিনি কিছু সম্ভাব্য প্রভাব উল্লেখ করেন:
- সমস্ত বদলি অবৈধ: রাজ্যের সমস্ত প্রাথমিক শিক্ষকের বদলি অবৈধ বলে গণ্য হবে, কারণ কোনো ডি পি এস সি বর্তমানে বৈধভাবে গঠিত নয়।
- নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রশ্নের মুখে: ২০১৫ সাল থেকে হওয়া সমস্ত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ, বিশেষ করে ২০১৬ সালের প্রায় ৬০-৬৫ হাজার শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়াও এই রায়ের ফলে প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।
- চেয়ারম্যানদের নিয়োগ অবৈধ: আইনজীবী সামিম সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেন যে, ৩৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী চেয়ারম্যানদের নিয়োগ কোনো সরকারি গেজেট বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই করা হচ্ছে, যা তাদের নিয়োগ এবং ডি পি এস সি হিসেবে তাদের কার্যকলাপকে অবৈধ করে তুলেছে।
- নিয়োগ বিধির পরিবর্তন: তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ২০০১ সালের নিয়োগ বিধি অনুযায়ী ডি পি এস সি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হলেও, ২০১৬ সালের বিধিতে এই ক্ষমতা “চেয়ারম্যান ডি পি এস সি”-কে দেওয়া হয়, যা আদালত মূল আইনকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে।
আইনজীবী ফিরদৌস সামিমের এই বিশ্লেষণ রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি বড় ঝাঁকুনি দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, রাজ্য সরকার এই আইনি চ্যালেঞ্জ কিভাবে মোকাবিলা করে এবং শিক্ষক বদলি ও নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আইনসম্মত করতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।