শিক্ষা

SC Enrollment Decline: পশ্চিমবঙ্গে তফসিলি জাতিভুক্ত পড়ুয়াদের ভর্তির হার কমছে, কারণ কী?

SC Enrollment Decline: সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে তফসিলি জাতিভুক্ত (SC) ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে ভর্তির হার আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। ইউনিফাইড ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন প্লাস (UDISE+)-এর রিপোর্ট এবং বিভিন্ন গবেষণায় এই উদ্বেগজনক প্রবণতা উঠে এসেছে, যা রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যৎ এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তির নীতি নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলেছে। wbpay.in-এর এই প্রতিবেদনে আমরা এই সমস্যার মূল কারণ এবং এর সম্ভাব্য প্রভাবগুলি তুলে ধরব।

মূল সমস্যাটা কোথায়?

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে, গত দশকে পশ্চিমবঙ্গে তফসিলি জাতিভুক্ত পড়ুয়াদের ভর্তির হার ধারাবাহিকভাবে কমেছে। বিশেষ করে প্রাথমিক স্তরে এই হার সবচেয়ে বেশি কমেছে। যদিও উচ্চ-মাধ্যমিক স্তরে ভর্তির হার কিছুটা বেড়েছে, তবে সার্বিকভাবে এই সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ঝরে পড়ার হার যথেষ্ট উদ্বেগজনক।

ভর্তির হার কমার প্রধান কারণ

  • সরকারি স্কুল থেকে মুখ ফেরানো: একটি বড় কারণ হলো সরকারি স্কুলগুলির প্রতি আস্থার অভাব। অনেক অভিভাবক, সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায়, বিপুল আর্থিক কষ্ট সত্ত্বেও তাদের বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করছেন। পরিকাঠামোর অভাব এবং শিক্ষার মানে ঘাটতির কারণে সরকারি স্কুল থেকে পড়ুয়ারা সরে যাচ্ছে।
  • আর্থিক চাপ: বেসরকারি স্কুলের বিপুল খরচ তফসিলি জাতিভুক্ত পরিবারগুলির উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে। স্কুলের ফি, বইপত্র, এবং প্রাইভেট টিউশনের খরচ জোগাতে গিয়ে অনেক পরিবার হিমশিম খাচ্ছে। এর ফলে, মাধ্যমিক বা উচ্চ-মাধ্যমিক স্তরে পৌঁছানোর আগেই অনেক পড়ুয়া স্কুল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে।
  • ড্রপআউটের হার বৃদ্ধি: আর্থিক দুরবস্থার কারণে অনেক ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা ছেড়ে উপার্জনের পথে নামতে বাধ্য হচ্ছে। বিশেষত, ছেলেদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা গেলেও, মেয়েদের ক্ষেত্রেও অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়া বা বাড়ির কাজে জড়িয়ে পড়ার মতো ঘটনা ঘটছে।
  • সচেতনতার অভাব: অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতার অভাব এখনও বিদ্যমান। বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না, যা ড্রপআউটের হারকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।

পরিসংখ্যান কী বলছে?

UDISE+ তথ্য অনুযায়ী, ২০১১-১২ থেকে ২০১৫-১৬ সালের মধ্যে প্রাথমিক স্তরে তফসিলি জাতিভুক্ত ছেলেদের ভর্তির হার প্রায় ২০% এবং মেয়েদের ২১% কমেছে। যদিও এই সময়ের মধ্যে উচ্চ-প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরে ভর্তি কিছুটা বেড়েছিল, কিন্তু সার্বিক চিত্রটি হতাশাজনক। ২০১৫-১৬ থেকে ২০২১-২২ সালের মধ্যে এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে এবং সরকারি স্কুলগুলিতে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ৮% হ্রাস পায়, যেখানে বেসরকারি স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ৫৬% বৃদ্ধি পায়।

ভবিষ্যৎ কী?

এই সমস্যা সমাধানে সরকারের অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সরকারি স্কুলগুলির মানোন্নয়ন, পরিকাঠামোগত উন্নয়ন এবং যোগ্য শিক্ষকের অভাব পূরণ করা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি, তফসিলি জাতিভুক্ত পড়ুয়াদের জন্য আর্থিক সহায়তামূলক প্রকল্প, যেমন স্কলারশিপ বা স্টাইপেন্ড, আরও সহজলভ্য করতে হবে। শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সামাজিক স্তরে প্রচার অভিযান চালানোও প্রয়োজন। যদি এই সমস্যাটিকে এখনই গুরুত্ব দিয়ে মোকাবিলা না করা হয়, তবে রাজ্যের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে এর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সবার আগে খবরের আপডেট পান!

টেলিগ্রামে যুক্ত হন

WBPAY Team

আমাদের প্রতিবেদন গুলি WBPAY Team এর দ্বারা যাচাই করে লেখা হয়। আমরা একটি স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম যা পাঠকদের জন্য স্পষ্ট এবং সঠিক খবর পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য এবং সাংবাদিকতার মান সম্পর্কে জানতে, অনুগ্রহ করে আমাদের About us এবং Editorial Policy পৃষ্ঠাগুলি পড়ুন।
Back to top button