Zoho Mail: Google, Microsoft-কে বিদায়! ১২ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এখন দেশের Zoho Mail-এ

Zoho Mail: ভারত সরকার ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব এবং আত্মনির্ভরতার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। সাম্প্রতিক একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় ১২ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী তাদের অফিসিয়াল ইমেল পরিষেবার জন্য Google এবং Microsoft-এর মতো বিদেশি প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে চেন্নাই-ভিত্তিক সংস্থা জোহো (Zoho)-এর প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তরিত হয়েছেন। এই পদক্ষেপকে দেশের প্রযুক্তিগত ইতিহাসে একটি অন্যতম বৃহৎ পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা ডিজিটাল ইন্ডিয়া এবং মেক ইন ইন্ডিয়া মিশনের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিফলন।
কেন এই পরিবর্তন?
এই পরিবর্তনের পিছনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। সরকারের মূল উদ্দেশ্য হল বিদেশি প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা কমানো এবং দেশের নিজস্ব সফটওয়্যার ইকোসিস্টেমকে শক্তিশালী করা। এর মাধ্যমে ডেটা সুরক্ষা এবং ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
- ডেটা সুরক্ষা: বিদেশি সার্ভারে সরকারি তথ্য থাকা মানে ডেটা ফাঁসের একটা ঝুঁকি থেকেই যায়। জোহোর মতো দেশীয় প্ল্যাটফর্মে ডেটা থাকলে তা ভারতীয় আইন এবং সুরক্ষা ব্যবস্থার অধীনে থাকবে, যা তথ্যের গোপনীয়তা এবং সুরক্ষা বাড়াতে সাহায্য করবে।
- ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব: বিদেশি সংস্থাগুলির উপর নির্ভরতা দেশের তথ্য পরিকাঠামোকে দুর্বল করতে পারে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা বা অন্য কোনো সমস্যার কারণে পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেলে সরকারি কাজে বড় ধরনের বাধা আসতে পারে। এই ঝুঁকি এড়াতেই দেশীয় প্রযুক্তির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
- আত্মনির্ভর ভারত: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘আত্মনির্ভর ভারত’ অভিযানের অংশ হিসেবে সরকার দেশীয় সংস্থাগুলিকে উৎসাহ দিচ্ছে। জোহোর মতো একটি ভারতীয় সংস্থাকে বেছে নেওয়া এই অভিযানের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতারই প্রমাণ।
- খরচ কমানো: একটিমাত্র দেশীয় ভেন্ডরের উপর নির্ভর করলে আইটি ব্যবস্থাপনার খরচ অনেকটাই কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে সরকারি অর্থের সাশ্রয় হবে।
জোহো (Zoho) কেন?
জোহো কর্পোরেশন একটি চেন্নাই-ভিত্তিক সফটওয়্যার-এজ-এ-সার্ভিস (SaaS) সংস্থা, যা ১৯৯৬ সালে শ্রীধর ভেম্বু প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই সংস্থাটি সম্পূর্ণ ভারতীয় এবং এর কোনো বিদেশি বিনিয়োগকারী নেই। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজেও তাঁর অফিসিয়াল ইমেল অ্যাকাউন্ট জোহোতে স্থানান্তরিত করার কথা ঘোষণা করেছেন, যা এই প্ল্যাটফর্মের উপর সরকারের আস্থাকেই তুলে ধরে।
রূপান্তরের প্রক্রিয়া এবং চ্যালেঞ্জ
১২ লক্ষ কর্মচারীকে একটি নতুন ইমেল সিস্টেমে নিয়ে আসা নিঃসন্দেহে একটি জটিল প্রক্রিয়া। ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স সেন্টার (NIC) এবং অন্যান্য বিভাগীয় আইটি ইউনিটগুলি এই রূপান্তর প্রক্রিয়াটি মসৃণভাবে সম্পন্ন করার জন্য কাজ করছে, যাতে কোনো রকম পরিষেবা ব্যাহত না হয়। ব্যবহারকারীদের পুরনো ইমেল, কন্টাক্ট এবং অন্যান্য ডেটা নতুন সিস্টেমে মাইগ্রেট করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি, মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন এবং শক্তিশালী এনক্রিপশনের মতো সুরক্ষা প্রোটোকল প্রয়োগ করা হচ্ছে।
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হনতবে এর কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। একটিমাত্র সংস্থার উপর সম্পূর্ণ নির্ভরতা পরিষেবা বিভ্রাট বা সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। এই কারণে জোহোর ডেটা হ্যান্ডলিং এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে স্বচ্ছতার প্রয়োজন রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
সব মিলিয়ে, এই পদক্ষেপ ভারতের ডিজিটাল পরিকাঠামোকে মজবুত করার এক বলিষ্ঠ প্রয়াস। এটি কেবল বিদেশি প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা কমাবে না, বরং দেশের তথ্যকে সুরক্ষিত রেখে ডিজিটাল আত্মনির্ভরতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।