SIR Voter List: ৯ই ডিসেম্বর ভোটার তালিকা প্রকাশ: কাদের নাম থাকছে আর কাদের বাদ? জেনে নিন বিস্তারিত নিয়ম

SIR Voter List: নির্বাচন কমিশন আগামী ৯ই ডিসেম্বর বহুপ্রতিক্ষিত ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করতে চলেছে। বর্তমানে রাজ্যজুড়ে এসআইআর (SIR) বা ভোটার তালিকা সংশোধন এবং যাচাইকরণ প্রক্রিয়া চলছে। এই প্রক্রিয়া নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে কৌতূহল এবং প্রশ্ন থাকা স্বাভাবিক। বিশেষ করে কাদের নাম এই নতুন খসড়া তালিকায় স্থান পাবে এবং কাদের নাম বাদ যেতে পারে, তা নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। নির্বাচন কমিশনের গাইডলাইন অনুযায়ী এই প্রক্রিয়ার খুঁটিনাটি এবং পরবর্তী পদক্ষেপগুলি সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
খসড়া তালিকায় কাদের নাম নিশ্চিতভাবে থাকছে?
কমিশনের নির্দেশিকা এবং বর্তমান যাচাইকরণ প্রক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে নিম্নলিখিত ক্যাটাগরির নাগরিকদের নাম খসড়া তালিকায় থাকার সম্ভাবনা নিশ্চিত:
- এনুমারেশন ফর্ম জমা দিয়েছেন যারা: গত ৪ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে যে সমস্ত নাগরিক এনুমারেশন ফর্ম সঠিকভাবে পূরণ করে জমা দিয়েছেন, তাদের নাম খসড়া তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই সময়ের মধ্যে জমা পড়া আবেদনগুলি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়েছে।
- ২০০২ সালের ভোটার: যে সমস্ত নাগরিকের নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নথিভুক্ত ছিল, তাদের নাম স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এই খসড়া তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। তাদের ক্ষেত্রে নতুন করে প্রমাণের প্রয়োজন নাও হতে পারে।
- পারিবারিক ম্যাপিং বা লিঙ্কেজ: যারা নতুন ভোটার হিসেবে নাম তুলেছেন (যাদের নাম ২০২৫ সালের তালিকায় প্রস্তাবিত কিন্তু ২০০২ সালে ছিল না), তাদের ক্ষেত্রে ‘ম্যাপিং’ পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। যদি আবেদনকারীর বাবা, মা, দাদু বা ঠাকুমার নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় থাকে, তবে সেই সূত্রে বা লিঙ্কেজের মাধ্যমে তাদের নামও তালিকায় স্থান পাবে। এই প্রক্রিয়ায় তাদের আলাদা করে কোনো ঝক্কি পোহাতে হবে না।
যাচাইকরণে কাদের নাম বাদ যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে?
বুথ লেভেল অফিসার বা বিএলও (BLO)-রা বাড়ি বাড়ি গিয়ে যে যাচাইকরণ (Verification) প্রক্রিয়া চালিয়েছেন, তাতে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট কারণে নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে:
- মৃত ভোটার শনাক্তকরণ: বিএলও-রা ফিল্ড ভিজিটের সময় যদি জানতে পারেন যে কোনো ভোটার মারা গেছেন, তবে সেই নামটিকে মৃত হিসেবে চিহ্নিত করে তালিকা থেকে অপসারণ বা ডিলিট করা হবে।
- ঠিকানায় অনুপস্থিত ব্যক্তি: বিএলও যদি নির্দিষ্ট ঠিকানায় গিয়ে ভোটারকে খুঁজে না পান, তবে সেই নাম বাদ যেতে পারে। অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে মূলত দুটি বিষয় দেখা হচ্ছে:
- যারা কর্মসূত্রে বা সপরিবারে বর্তমান ঠিকানা ছেড়ে সাময়িকভাবে অন্যত্র বা ভিনরাজ্যে বসবাস করছেন।
- সন্দেহভাজন বা অনুপ্রবেশকারী, যারা যাচাইকরণের ভয়ে বা আইনি জটিলতা এড়াতে পালিয়ে গেছেন এবং এনুমারেশন ফর্ম জমা দেননি।
- ডবল এন্ট্রি (Double Entry): একই ব্যক্তির নাম একাধিক স্থানে থাকলে তা সংশোধন করা হবে। উদাহরণস্বরূপ, বিয়ের পর অনেক মহিলার নাম বাবার বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি—উভয় জায়গাতেই থেকে যায়। এক্ষেত্রে যাচাই করে একটি নাম রাখা হবে এবং অন্যটি বাদ দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, একই ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে দুটি এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করলে তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
কাদের শুনানির (Hearing) জন্য ডাকা হতে পারে?
নথিপত্র যাচাইয়ের সময় কিছু অসামঞ্জস্যতা দেখা দিলে ভোটারদের শুনানির জন্য তলব করা হতে পারে:
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হন- যাদের নাম ২০২৫ সালের নতুন তালিকায় রয়েছে কিন্তু ২০০২ সালের তালিকায় নেই, এবং তাদের পরিবার বা পূর্বপুরুষের কারো নামও ২০০২ সালের তালিকায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
- এনুমারেশন ফর্মে দেওয়া তথ্যের সাথে নির্বাচন কমিশনের কাছে থাকা তথ্যের কোনো গরমিল বা অমিল পরিলক্ষিত হলে।
- নাম, বয়স বা অন্যান্য তথ্যে অসামঞ্জস্যতা থাকলে সঠিক নথিপত্র যাচাইয়ের স্বার্থে তাদের ডাকা হবে।
নাম বাদ পড়লে বা তালিকায় না থাকলে করণীয় কী?
আগামী ৯ই ডিসেম্বর প্রকাশিতব্য খসড়া তালিকায় যদি কোনো বৈধ ভোটারের নাম না থাকে বা ভুলবশত বাদ পড়ে যায়, তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। নাগরিকদের জন্য এরপরও সুযোগ থাকবে:
- সরাসরি যোগাযোগ: যে সমস্ত বৈধ ভোটার বিএলও-র ভিজিটের সময় বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন না, তারা দ্রুত বিএলও বা স্থানীয় ইআরও (ERO)-র দপ্তরে যোগাযোগ করতে পারেন।
- উপযুক্ত প্রমাণ পেশ: শুনানির সময় উপস্থিত হয়ে অনুপস্থিতির সঠিক কারণ (যেমন কর্মসূত্রে বাইরে থাকা) দর্শাতে হবে এবং নিজের দাবির স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দিতে হবে।
- সংশোধনের সুযোগ: সঠিক প্রমাণ ও নথি দেখাতে পারলে খসড়া তালিকা প্রকাশের পরেও নাম অন্তর্ভুক্ত করার বা ভুল সংশোধন করার যথেষ্ট সুযোগ নির্বাচন কমিশন প্রদান করবে।
অতএব, খসড়া তালিকা প্রকাশের পর নিজের ও পরিবারের নাম যাচাই করে নেওয়া প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের কর্তব্য।