Sanchar Saathi App: নতুন ফোনে বাধ্যতামূলক ‘সঞ্চার সাথী’ অ্যাপ! নজরদারির আশঙ্কায় সরব বিরোধীরা
Sanchar Saathi App: কেন্দ্রীয় সরকারের টেলিযোগাযোগ দপ্তরের (DoT) সাম্প্রতিক একটি নির্দেশিকাকে কেন্দ্র করে প্রযুক্তি জগত এবং রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। গত ১ ডিসেম্বর, ২০২৫-এ সরকারের পক্ষ থেকে স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিকে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, এবার থেকে সমস্ত নতুন হ্যান্ডসেটে ‘সঞ্চার সাথী’ (Sanchar Saathi) অ্যাপটি আগে থেকেই ইনস্টল করা বা প্রি-ইনস্টলড থাকতে হবে। এই সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসার পরেই ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং নজরদারির প্রশ্নে সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি এবং সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
সরকারের এই পদক্ষেপকে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত পরিসরে হস্তক্ষেপ বলে মনে করছেন অনেকে। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা সাধারণত অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ডিলিট বা আনইনস্টল করতে পারেন, কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারি নির্দেশে প্রি-ইনস্টল করা এই অ্যাপটি সম্ভবত রিমুভ করা যাবে না। একে প্রযুক্তিগত ভাষায় ‘ব্লোটওয়্যার’ বলা হয়, যা ডিভাইসের স্টোরেজ দখল করে থাকে এবং সিস্টেমের গভীরে প্রবেশ করার ক্ষমতা রাখে।
‘সঞ্চার সাথী’ অ্যাপের কাজ কী?
২০২৩ সালে টেলিযোগাযোগ দপ্তর বা DoT প্রথম একটি ওয়েব পোর্টাল হিসেবে ‘সঞ্চার সাথী’ চালু করেছিল। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা প্রদান করা। এই অ্যাপের মাধ্যমে মূলত নিম্নলিখিত কাজগুলি করা সম্ভব:
- প্রতারণামূলক কল চিহ্নিতকরণ: ব্যবহারকারীরা সন্দেহজনক বা ফ্রড কল সম্পর্কে রিপোর্ট করতে পারেন।
- হারানো ফোন ব্লক করা: ফোন চুরি গেলে বা হারিয়ে গেলে, এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আইএমইআই (IMEI) নম্বর ব্যবহার করে ফোনটি ব্লক করা যায়, যাতে অন্য কেউ তা ব্যবহার করতে না পারে।
- আইএমইআই যাচাই: সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন কেনার আগে সেটির আইএমইআই নম্বরটি আসল কি না, তা যাচাই করা যায়।
বিরোধীদের কড়া সমালোচনা
সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ‘সাংবিধানিক অধিকারের লঙ্ঘন’ বলে আখ্যা দিয়েছে বিরোধী দলগুলি। কংগ্রেস নেতা কে.সি. ভেনুগোপাল এই নির্দেশিকাকে তীব্র আক্রমণ করে বলেছেন, এটি প্রতিটি ভারতীয়র ওপর নজরদারি চালানোর জন্য সরকারের একটি হাতিয়ার। তিনি একে ‘ডিস্টোপিয়ান’ বা চরম অরাজকতার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হনঅন্যদিকে, শিবসেনা (ইউবিটি) সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী এই পদক্ষেপকে রিয়েলিটি শো ‘বিগ বস’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাঁর মতে, সরকার প্রতিটি নাগরিকের পকেটে থাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাঁদের ওপর চব্বিশ ঘণ্টা নজরদারি চালাতে চাইছে। এই বাধ্যতামূলক অ্যাপ ইনস্টলেশনকে তিনি ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ওপর বড় আঘাত বলে মনে করছেন।
সাইবার নিরাপত্তা ও হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি
কেবল রাজনৈতিক মহল নয়, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা এই অ্যাপের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ডিপস্ট্র্যাটেজ-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ আনন্দ ভেঙ্কটনারায়ণের মতে, কোনো সরকারি অ্যাপ যদি অপারেটিং সিস্টেমের রুটে (Root) প্রবেশ করার অনুমতি পায়, তবে তা অত্যন্ত ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে:
- প্রি-ইনস্টল করা অ্যাপগুলির সাধারণত সিস্টেমের ‘রুট অ্যাক্সেস’ বা বিশেষ অনুমতি থাকে।
- সরকার চাইলে ‘ওভার দ্য এয়ার’ (OTA) আপডেটের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর অজান্তেই অ্যাপটির ক্ষমতা বাড়িয়ে নিতে পারে।
- যদি এই অ্যাপটির নিরাপত্তায় কোনো ত্রুটি থাকে, তবে হ্যাকাররা সহজেই পুরো ফোনের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে এবং ম্যালওয়্যার বা স্পাইওয়্যার ছড়িয়ে দিতে পারে।
হোয়াটসঅ্যাপ সংক্রান্ত কড়া নিয়ম
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহেই টেলিযোগাযোগ দপ্তর হোয়াটসঅ্যাপ এবং অন্যান্য মেসেজিং অ্যাপের জন্য নতুন নিয়ম জারি করেছিল। সেখানে বলা হয়েছে, যে সিম কার্ড দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, অ্যাপটি কেবল সেই ফোনেই কাজ করবে। পাশাপাশি, নিরাপত্তার স্বার্থে হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব বা লিঙ্ক করা ডিভাইসগুলি প্রতি ছয় ঘণ্টা অন্তর স্বয়ংক্রিয়ভাবে লগ-আউট হয়ে যাবে। টেলিকম সাইবার সিকিউরিটি রুলস, ২০২৪-এর আওতায় এই নিয়মগুলি আনা হয়েছে, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রযুক্তি মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।