SIR Hearing: রাজ্যে শুরু হচ্ছে বড়সড় স্ক্রুটিনি, নোটিশ যাচ্ছে ৩২ লক্ষ মানুষের কাছে
SIR Hearing: রাজ্যের ভোটার তালিকায় আপনার নাম কি সুরক্ষিত? নাকি অজান্তেই বাতিলের খাতায় চলে গিয়েছে আপনার পরিচয়? এই মুহূর্তে রাজ্যজুড়ে ভোটারদের মনে এমনই এক আশঙ্কার মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে বিন্দুমাত্র ঢিলেমি দিতে নারাজ কমিশন। ইতিমধ্যেই রাজ্যজুড়ে প্রায় ৩২ লক্ষ ভোটারের কাছে শুনানির জন্য চিঠি বা নোটিস পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।
আগামী ২৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে চলেছে এই মেগা হিয়ারিং প্রক্রিয়া। যদিও প্রাথমিকভাবে ১৭ ডিসেম্বর থেকে নোটিস পাঠানোর কথা ছিল, কিন্তু কিছু প্রশাসনিক কারণে তা সামান্য পিছিয়ে শনিবার থেকে পুরোদমে শুরু হয়েছে। সিইও (CEO) দপ্তর সূত্রে খবর, এই যাচাইকরণ প্রক্রিয়া অত্যন্ত কড়াকড়িভাবে পালন করা হবে যাতে কোনও ভুয়ো ভোটার তালিকায় স্থান না পায় এবং কোনও প্রকৃত নাগরিকের নাম বাদ না যায়।
মাইক্রো অবজ়ার্ভারদের কড়া নজরদারি
নির্বাচন কমিশন এবার ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা বজায় রাখতে নজিরবিহীন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শুনানির প্রক্রিয়ায় নজরদারি চালানোর জন্য নিয়োগ করা হচ্ছে প্রায় ৩,৫০০ মাইক্রো অবজ়ার্ভার। এই পর্যবেক্ষকরা মূলত কেন্দ্রীয় সরকারি দপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিক। রেল, ব্যাঙ্ক, কোল ইন্ডিয়া এবং ডিভিসি-র মতো সংস্থা থেকে এই আধিকারিকদের বেছে নেওয়া হয়েছে।
আগামী ২৪ ডিসেম্বর নজরুল মঞ্চে এই মাইক্রো অবজ়ার্ভারদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে গড়ে ১১ জন করে পর্যবেক্ষক থাকবেন। তাঁদের মূল কাজ হবে ইআরও (ERO) এবং এইআরও (AERO)-দের কাজের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখা এবং প্রতিদিনের শুনানির রিপোর্ট তৈরি করা।
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হনকেন পাঠানো হচ্ছে নোটিস?
আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, খসড়া তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও কেন আবার শুনানির জন্য ডাকা হচ্ছে? কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, মূলত তিনটি প্রধান কারণে এই নোটিস পাঠানো হচ্ছে:
- ম্যাপিং সমস্যা: ২০০২ সালের পুরনো ভোটার তালিকার তথ্যের সঙ্গে বর্তমান তথ্যের মিল বা ‘ম্যাপিং’ না পাওয়া গেলে সেই ভোটারকে তলব করা হচ্ছে।
- তথ্যগত গরমিল: ভোটার ফর্মে দেওয়া তথ্যে কোনও ভুলভ্রান্তি বা অসঙ্গতি থাকলে।
- লিঙ্গ পরিচয় সমস্যা: জেন্ডার মিসম্যাচ বা লিঙ্গ সংক্রান্ত তথ্যে সন্দেহ থাকলে।
কমিশন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, আপাতত নোটিসগুলি ইংরেজি ভাষায় পাঠানো হচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে আঞ্চলিক ভাষায় নোটিস পাঠানোর জন্য দিল্লির কাছে আবেদন জানিয়েছে রাজ্যের সিইও দপ্তর।
শুনানিতে প্রয়োজনীয় নথিপত্র
আপনি যদি শুনানির নোটিস পেয়ে থাকেন, তবে আতঙ্কিত না হয়ে নিচের তালিকাভুক্ত ১৩টি নথির মধ্যে যে কোনও একটি সঙ্গে নিয়ে নির্দিষ্ট দিনে উপস্থিত হন। প্রয়োজনীয় নথির তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
- পাসপোর্ট।
- ড্রাইভিং লাইসেন্স।
- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার অথবা পিএসইউ (PSU) দ্বারা ইস্যু করা সচিত্র পরিচয়পত্র।
- ব্য়াঙ্ক বা পোস্ট অফিসের পাসবুক (ছবি সহ)।
- প্যান কার্ড।
- এনপিআর (NPR)-এর অধীনে আরজিআই (RGI) দ্বারা ইস্যু করা স্মার্ট কার্ড।
- এমএনরেগা (MNREGA) জব কার্ড।
- শ্রম মন্ত্রকের অধীনে স্বাস্থ্য বিমা স্মার্ট কার্ড।
- পেনশন পেমেন্ট অর্ডার (ছবি সহ)।
- সাংসদ বা বিধায়কদের ইস্যু করা সরকারি পরিচয়পত্র।
- প্রতিবন্ধী শংসাপত্র (UDID কার্ড)।
- জমির দলিল বা পর্চা (প্রয়োজন সাপেক্ষে)।
- আধার কার্ড। (কেবল পরিচয় পত্র হিসাবে গ্রাহ্য)
বিশেষ সুবিধা ও নিয়মাবলী
কমিশন মানবিক দিকটি বিবেচনা করে বেশ কিছু শিথিলতাও রেখেছে। যদি কোনও ভোটার নির্দিষ্ট দিনে শুনানিতে উপস্থিত হতে না পারেন এবং তার উপযুক্ত কারণ দর্শাতে পারেন, তবে তাঁকে ‘গ্রেস পিরিয়ড’ বা অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে। অন্যদিকে, ৮৫ বছরের বেশি বয়সি প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে কমিশন বাড়িতে গিয়ে শুনানি বা ভেরিফিকেশন করার প্রস্তাব রেখেছে, যাতে তাঁদের কোনও শারীরিক কষ্ট না হয়।
ভোটার তালিকা নির্ভুল করতে কমিশনের এই তৎপড়তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তাই নোটিস পেলে অবহেলা না করে নির্দিষ্ট নথিপত্র সহ যোগাযোগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।