দেশ

Aadhaar Mandatory: Aadhaar কার্ড কি সব জায়গায় বাধ্যতামূলক? জানুন সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং আপনার তথ্যের ঝুঁকি

Aadhaar Mandatory: গত ১৫ বছরে, ২০১০ সালে প্রথম আধার নম্বর জারি হওয়ার পর থেকে, ‘আধার’ এবং এর নিয়ন্ত্রক সংস্থা Unique Identification Authority of India (UIDAI) অনেক দূর এগিয়েছে। আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত, আধার কার্ডধারীর সংখ্যা ১৪২ কোটিরও বেশি। আধার আইন ২০১৬-এর অধীনে UIDAI একটি স্বাধীন সংস্থা হিসেবে কাজ করছে এবং এটি সরকারের ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। এই সবকিছুই এর বৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতার লক্ষণ।

তবে, পরিচয়পত্র হিসেবে আধার বাধ্যতামূলক কি না, এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক থেকেই গেছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি কে.এস. পুট্টাস্বামী (অবসরপ্রাপ্ত) বনাম ভারতীয় ইউনিয়ন (“পুট্টাস্বামী II”) মামলায় এই বিষয়ে সুস্পষ্ট রায় দিলেও, বাস্তবে এবং কখনও কখনও আইনের মাধ্যমেও এই নিয়ম লঙ্ঘন করা হচ্ছে। সম্প্রতি তাতকাল টিকিট বুকিং এবং APAAR ID-এর সাথে লিঙ্কিংয়ের মতো ঘটনাগুলো এই বিতর্ককে আরও উস্কে দিয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের রায় কী ছিল?

২০১৭ সালে, সুপ্রিম কোর্ট “পুট্টাস্বামী I” মামলায় গোপনীয়তার অধিকারকে (right to privacy) সংবিধানের ২১ নম্বর ধারার অধীনে একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এর পরে “পুট্টাস্বামী II” মামলায় আধার আইনের বৈধতা নিয়ে রায় দেওয়া হয়।

এই রায়ে আদালত আধার আইনের ৭ নম্বর ধারাকে বহাল রাখে, যেখানে বলা হয়েছে যে ভারতের একত্রিত তহবিল (Consolidated Fund of India) থেকে প্রদত্ত সরকারি “ভর্তুকি, সুবিধা এবং পরিষেবা” পাওয়ার জন্য আধার বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। তবে, পেনশন বা শিক্ষার মতো ব্যক্তিগত অধিকারকে এর আওতার বাইরে রাখা হয়েছিল।

সবার আগে খবরের আপডেট পান!

টেলিগ্রামে যুক্ত হন

আদালত স্কুল, CBSE, NEET, JEE, UGC পরীক্ষা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং সিম কার্ডের সাথে আধার লিঙ্ক করাকে বাধ্যতামূলক করার নিয়ম বাতিল করে দেয় কারণ এটি ‘ট্রিপল টেস্ট’ (আইন, বৈধ রাষ্ট্রীয় স্বার্থ এবং আনুপাতিকতা) পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল।

বাধ্যতামূলক করার প্রবণতা এবং ঝুঁকি

সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং আধার আইন থাকা সত্ত্বেও, কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলি বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধারকে বাধ্যতামূলক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কেরালায় জমি নিবন্ধন, বিহার-দিল্লি-পশ্চিমবঙ্গে স্কুলে ভর্তি, EPFO অ্যাকাউন্টে মনোনয়ন এবং ভোটার কার্ডের (EPIC) সঙ্গে আধার লিঙ্কিং-এর মতো ঘটনা ঘটছে।

আধারকে সর্বত্র বাধ্যতামূলক করার বেশ কিছু গুরুতর ঝুঁকি রয়েছে, যা আমাদের সকলের জানা প্রয়োজন:

  • তথ্যের অপব্যবহার (Lack of data minimization): যখন আধার ব্যবহার করা হয়, তখন প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি ব্যক্তিগত তথ্য (নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ, বায়োমেট্রিক) শেয়ার করা হয়। এটি Digital Personal Data Protection Act 2023 (“DPDP Act”)-এর মূল নীতির বিরোধী।
  • তথ্য ফাঁসের ঝুঁকি (Increasing risk of data breach): যত বেশি সংস্থা আধারের তথ্য পাবে, তথ্য ফাঁসের ঝুঁকি তত বাড়বে। অফলাইন ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে নিয়মকানুন তুলনামূলকভাবে শিথিল, যা সুরক্ষাকে আরও দুর্বল করে তোলে।
  • উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থতা (Expectation mismatch): অনেক সময় যে কারণে আধার চাওয়া হয়, তা পূরণ হয় না। যেমন, আধারকে বয়সের প্রমাণপত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়, কিন্তু UIDAI নিজেই বলেছে যে এটি জন্মতারিখের প্রমাণ নয়।
  • ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন (Disregard to individual autonomy): সুপ্রিম কোর্টের মতে, কোন পরিচয়পত্র ব্যবহার করা হবে, তা বেছে নেওয়ার অধিকার প্রত্যেক ব্যক্তির থাকা উচিত। বাধ্যতামূলকভাবে আধার চাপিয়ে দেওয়া এই অধিকারকে খর্ব করে।

আধার কার্ডের যাত্রা একটি স্বেচ্ছাসেবী পরিচয়পত্র থেকে প্রায় বাধ্যতামূলক নথিতে পরিণত হওয়ার বিষয়টি আইন এবং বাস্তবতার মধ্যে একটি ক্রমবর্ধমান ব্যবধান তুলে ধরে। ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং পরিচয় জালিয়াতি এড়াতে আধারের ব্যবহারকে সীমিত করা অত্যন্ত জরুরি। আইনত বাধ্যতামূলক কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া আধারের স্বেচ্ছাসেবী চরিত্র পুনরুদ্ধার করা হলে তবেই এটি ক্ষমতায়নের হাতিয়ার হয়ে উঠবে, শোষণের যন্ত্র নয়।

WBPAY Team

আমাদের প্রতিবেদন গুলি WBPAY Team এর দ্বারা যাচাই করে লেখা হয়। আমরা একটি স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম যা পাঠকদের জন্য স্পষ্ট এবং সঠিক খবর পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য এবং সাংবাদিকতার মান সম্পর্কে জানতে, অনুগ্রহ করে আমাদের About us এবং Editorial Policy পৃষ্ঠাগুলি পড়ুন।
Back to top button