Arrear DA: কীভাবে আটকে দেওয়া হবে ২৫% DA? পরিকল্পনা ফাঁস করলেন আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য

Arrear DA: পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের বিতর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় এসেছে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারকে বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ অবিলম্বে মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য এই মামলায় কর্মচারীদের আইনি লড়াই এবং রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন। তাঁর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ডিএ কর্মচারীদের অধিকার এবং সরকারের এই দায় এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের বক্তব্য:
আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে ডিএ মামলা নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন। তাঁর বক্তব্যের মূল বিষয়গুলি হল:
- ডিএ অধিকার, ভিক্ষা নয়: তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে ডিএ সরকারি কর্মচারীদের বৈধ অধিকার, এটি সরকারের দয়া বা ভিক্ষা নয়।
- সরকারের প্রাথমিক দায়িত্ব: কর্মচারীদের ডিএ প্রদান করা রাজ্য সরকারের প্রাথমিক এবং নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
- আর্থিক অসঙ্গতির অজুহাত: রাজ্য সরকার যে আর্থিক সঙ্কটের কথা বলছে, তা ডিএ না দেওয়ার একটি অজুহাত মাত্র। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, সরকার যদি উৎসব বা অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় খাতে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে পারে, তবে কর্মচারীদের ন্যায্য পাওনা দিতে অপারগতা কেন?
- বাজেট পরিচালনায় গাফিলতি: শ্রী ভট্টাচার্য অভিযোগ করেছেন যে রাজ্য সরকার বাজেট সঠিকভাবে পরিচালনা করছে না এবং ডিএ-র মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে এড়িয়ে যাচ্ছে।
- কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন: রাজ্য সরকার প্রায়শই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তোলে, কিন্তু এই বিষয়গুলি তারা সঠিক মঞ্চে, যেমন নীতি আয়োগের বৈঠকে, উত্থাপন করে না। এটি শুধুমাত্র জনদৃষ্টি ঘোরানোর কৌশল বলে তিনি মনে করেন।
- আইনি লড়াইয়ের বিপুল খরচ: ডিএ মামলা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই আইনি লড়াইয়ে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছে, সেই বিষয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন।
- প্রতিবাদের প্রয়োজনীয়তা: আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও, কর্মচারীদের তাঁদের বকেয়া ডিএ আদায়ে সম্ভবত বৃহত্তর এবং শক্তিশালী গণ-আন্দোলনের পথে হাঁটতে হতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ও বর্তমান পরিস্থিতি:
সুপ্রিম কোর্ট গত ১৬ই মে, ২০২৫ তারিখে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশ অনুযায়ী, রাজ্যকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে, যার মধ্যে ২ সপ্তাহের বেশি অতিবাহিত হয়ে গেছে, কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ মিটিয়ে দিতে হবে। এর ফলে প্রায় ১০ লক্ষ সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগী উপকৃত হবেন এবং এর জন্য রাজ্য সরকারের প্রায় ১০,০০০ থেকে ১১,০০০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে।
এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগস্ট ২০২৫-এ ধার্য করা হয়েছে। উল্লেখ্য, কলকাতা হাইকোর্ট ২০২২ সালের মে মাসে রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। রাজ্য সরকার সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায়। কর্মচারীদের দাবি, কেন্দ্র সরকারি কর্মচারীদের তুলনায় তাঁরা অনেকটাই কম ডিএ পাচ্ছেন।
বকেয়া ডিএ নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের এই লড়াই এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশ কিছুটা হলেও আশার আলো দেখাচ্ছে। আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের মতে, ডিএ কর্মচারীদের অধিকার এবং সরকারের উচিত সমস্ত অজুহাত ত্যাগ করে অবিলম্বে এই পাওনা মিটিয়ে দেওয়া। আগামী দিনে রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ নেয় এবং আগস্ট মাসে সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায় কী হয়, সেদিকেই তাকিয়ে সকলে।