Child Care Leave: পুরুষদের জন্যেও কি মিলবে ৭৩০ দিনের ছুটি? কী জানাল কলকাতা হাইকোর্ট

Child Care Leave: বর্তমান সময়ে নারী-পুরুষের সমানাধিকার নিয়ে যখন চারিদিকে এত আলোচনা, তখন এক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের রায় এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। পুরুষ সরকারি কর্মচারীরাও কি মহিলাদের মতো ৭৩০ দিনের শিশুপালন ছুটি (Child Care Leave) পাওয়ার অধিকারী? এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকার এবং বিচারব্যবস্থার মধ্যেকার টানাপোড়েনের চিত্রটিই এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো।
মামলার প্রেক্ষাপট
মামলার সূত্রপাত কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার একটি রায়কে কেন্দ্র করে। তিনি লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে পুরুষদেরও শিশুপালনের জন্য ছুটি পাওয়া উচিত বলে জানান। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই নির্দেশ না মানায়, অর্থ দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলার আবেদনকারী ছিলেন একজন ‘সিঙ্গেল ফাদার’, যিনি তাঁর সন্তানের দেখভালের জন্য এই ছুটির আবেদন করেছিলেন।
রাজ্য সরকারের যুক্তি
রাজ্য সরকার পুরুষদের জন্য ৭৩০ দিনের শিশুপালন ছুটির নীতি চালু করতে নারাজ। তাদের এই সিদ্ধান্তের পিছনে মূল কারণগুলি হলো:
- কর্মীর সংখ্যা: পশ্চিমবঙ্গে পুরুষ সরকারি কর্মীর সংখ্যা মহিলাদের তুলনায় অনেক বেশি।
- প্রশাসনিক অচলাবস্থা: এত বিপুল সংখ্যক পুরুষ কর্মীকে দীর্ঘমেয়াদী ছুটি দিলে সরকারি কাজকর্ম, বিশেষ করে স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য দপ্তরের পরিষেবা সচল রাখা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে। এর ফলে রাজ্যের উন্নয়নমূলক কাজও বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে।
- কেন্দ্রীয় নীতির সঙ্গে পার্থক্য: রাজ্য সরকার জানিয়েছে যে, কেন্দ্রীয় সরকারের পুরুষ কর্মীদের জন্য পিতৃত্বকালীন ছুটির নীতি থাকলেও, রাজ্যের পক্ষে তা অনুসরণ করা এই মুহূর্তে সম্ভব নয়।
হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ ও রায়
আদালত রাজ্য সরকারের লিঙ্গবৈষম্যমূলক যুক্তিতে সন্তুষ্ট না হলেও, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে একটি মধ্যপন্থা অবলম্বন করেছে। আদালতের পর্যবেক্ষণগুলি হলো:
- বাস্তবতার স্বীকার: আদালত স্বীকার করেছে যে, এই মুহূর্তে রাজ্যের পক্ষে সমস্ত পুরুষ কর্মীর জন্য ৭৩০ দিনের শিশুপালন ছুটির নীতি চালু করা বাস্তবিকই কঠিন।
- ভবিষ্যতের আশ্বাস: রাজ্য সরকার আদালতকে আশ্বস্ত করেছে যে, তারা ভবিষ্যতে পুরুষ কর্মীদের জন্য শিশুপালন ছুটির বিষয়ে একটি নীতি গ্রহণ করার কথা ভাববে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি অনুসরণের চেষ্টা করবে।
- আবেদনকারীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা: আদালত অবমাননার মামলাটি খারিজ করে দিলেও, মূল আবেদনকারী, যিনি একজন ‘সিঙ্গেল ফাদার’, তাঁকে বিশেষভাবে স্কুল শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিবের কাছে আবেদন করার নির্দেশ দিয়েছে। প্রধান সচিবকে দুই সপ্তাহের মধ্যে তাঁর বিষয়টি বিবেচনা করে একটি ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই রায়ের ফলে আপাতত রাজ্যের সমস্ত পুরুষ সরকারি কর্মীর জন্য ৭৩০ দিনের শিশুপালন ছুটির দরজা বন্ধই থাকছে। তবে, ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। আবেদনকারীর ক্ষেত্রে আদালত যে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এখন দেখার বিষয়, রাজ্য সরকার কবে সমস্ত পুরুষ কর্মীর জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ নীতি চালু করার পথে এগোয়। এই মামলাটি লিঙ্গসাম্য এবং কর্মক্ষেত্রের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যা আগামী দিনেও প্রাসঙ্গিক থাকবে।