DA Case Strategy: মৌলিক অধিকার নয়, আইনি অধিকার! ডিএ মামলায় রাজ্যের ‘ফাঁদ’ এড়াতে আজ নতুন পথে আইনজীবীরা

DA Case Strategy: অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সুপ্রিম কোর্টে শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা (DA) সংক্রান্ত মামলার শুনানি। এই শুনানিকে ঘিরে কর্মচারী মহলে যেমন আশার সঞ্চার হয়েছে, তেমনই রাজ্য সরকারের কৌশল এবং সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ সহ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আইনজীবীদের পাল্টা রণনীতি নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের প্যানেলভুক্ত আইনজীবী শ্রী বিক্রম ব্যানার্জীর বক্তব্য থেকে এই মামলার বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য গতিপথ সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেল।
শুনানির ইতিবাচক দিক
প্রথমেই বলা ভালো, দীর্ঘদিন পর এই মামলার শুনানি শুরু হওয়াটাই কর্মচারী সংগঠনগুলোর জন্য একটি বড় ইতিবাচক পদক্ষেপ। আইনজীবী বিক্রম ব্যানার্জীর মতে, শুনানি শুরু হওয়ার অর্থ হলো ন্যায় প্রক্রিয়ার দরজা খুলে যাওয়া। এখন সব পক্ষের বক্তব্য শোনা হবে এবং তার ভিত্তিতেই আদালত সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে।
রাজ্য সরকারের কৌশল বনাম যৌথ মঞ্চের রণনীতি
শুনানিতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মামলাটিকে একটি ভিন্ন খাতে বইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজ্যের আইনজীবীরা মহার্ঘ ভাতাকে ‘মৌলিক অধিকার’ (Fundamental Right) কি না, সেই বিতর্কে বেশি জোর দিচ্ছেন।
এই কৌশলের জবাবে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ এক গুরুত্বপূর্ণ রণনীতি গ্রহণ করেছে। শ্রী বিক্রম ব্যানার্জী জানান যে, প্রবীণ আইনজীবী শ্রী গোপাল সুব্রহ্মণ্যম, শ্রী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য এবং শ্রী পি.এস. পাটোয়ালিয়ার মতো শীর্ষ আইনজীবীদের সাথে আলোচনার পর আপাতত ‘মৌলিক অধিকার’-এর পরিবর্তে মহার্ঘ ভাতাকে ‘আইনত বলবৎযোগ্য অধিকার’ (Legally Enforceable Right) হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
এই কৌশলের কারণগুলি হলো:
- ঝুঁকি এড়ানো: সুপ্রিম কোর্ট যদি কোনোভাবে পর্যবেক্ষণ দেয় যে ডিএ মৌলিক অধিকার নয়, তবে তা ভবিষ্যতের সমস্ত মামলার জন্য, বিশেষ করে ২০১৯ সালের রোপা সংক্রান্ত মামলার ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
- নির্দিষ্ট লক্ষ্যে লড়াই: বর্তমান মামলাটি ২০০৯ সালের রোপা (ROPA) নিয়মের উপর ভিত্তি করে চলছে। তাই এই নিয়মের আওতায় ডিএ যে কর্মচারীদের একটি আইনগত প্রাপ্য, তা প্রতিষ্ঠা করাই মূল লক্ষ্য।
- ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: ভারতে মহার্ঘ ভাতা মৌলিক অধিকার কি না, সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কোনো সুস্পষ্ট রায় কোনোদিন আসেনি। তাই এই অনিশ্চিত পথে না হেঁটে, আইনগত অধিকারের পথেই হাঁটা হচ্ছে।
আইনি যুক্তির কেন্দ্রবিন্দু: রোপা এবং AICPI
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ২০০৯ সালের রোপা নিয়মের একটি ধারার উল্লেখ করে বলা হচ্ছে যে, সেখানে DA-এর হার একটি নির্দিষ্ট অঙ্কে (at 536 points
) বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
এর জবাবে কর্মচারী পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি হলো, রোপা নিয়মে ‘Index Average’ কথাটি উল্লেখ আছে, যা মুদ্রাস্ফীতির সাথে পরিবর্তনশীল। এটি কোনোভাবেই স্থির হতে পারে না। ইনফ্লেশন বা মুদ্রাস্ফীতির জন্যই ডিএ দেওয়া হয়, তাই তা বাজারের অবস্থার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে, এটাই স্বাভাবিক। পে কমিশনের রিপোর্টেও এই বিষয়টি স্পষ্ট করা আছে।
আগামীর আশা ও প্রস্তুতি
আইনজীবী বিক্রম ব্যানার্জী আত্মবিশ্বাসের সাথে জানিয়েছেন যে, তাঁদের আইনি দল সম্পূর্ণ প্রস্তুত। রাজ্য সরকারের সমস্ত যুক্তি খণ্ডন করে সুপ্রিম কোর্টের সামনে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে তাঁরা সক্ষম হবেন। তাঁর মতে, এই আইনি লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি সমস্ত কর্মচারীকে ঐক্যবদ্ধ থেকে এই লড়াইয়ে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। আগামী দিনেও শুনানি চলবে এবং কর্মচারী সংগঠনগুলো জয়ের বিষয়ে আশাবাদী।