DA News: বকেয়া ডিএ নিয়ে রাজ্যের যুক্তি কি আদৌ ধোপে টিকবে? দেখুন আইনজীবীর বিশ্লেষণ

DA News: মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) মামলা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের নতুন আবেদন এবং এর ভবিষ্যৎ নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে আইনজীবী প্রবীর চ্যাটার্জি এই মামলার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন, যা রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন, এই আলোচনার মূল বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
ডিএ কি সাংবিধানিক অধিকার?
প্রবীর বাবুর মতে, মহার্ঘ ভাতা কর্মচারীদের একটি সাংবিধানিক অধিকার। বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের রায়কে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন যে, ডিএ প্রদান রাজ্য সরকারের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে না। এটি কর্মচারীদের প্রাপ্য এবং তা দিতে রাজ্য সরকার বাধ্য। তাঁর মতে, রাজ্য সরকার ডিএ আটকে রাখার যে চেষ্টা করছে, তা আইনত ভিত্তিহীন এবং এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য।
রাজ্যের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন
আইনজীবী প্রবীর চ্যাটার্জি আরও বলেন যে, ভারতের বেশিরভাগ রাজ্য ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় হারে ডিএ প্রদান করছে, যা সংবিধানের ৩০৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী সঠিক। পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে বকেয়া ডিএ মেটানোর ক্ষেত্রে গড়িমসি করছে, তা কেবল সময় নষ্ট করার এবং কর্মচারীদের হতাশ করার একটি কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। তাঁর অভিযোগ, রাজ্য সরকার এই বিষয়ে “ফালতু আবেদন” করে প্রক্রিয়াটিকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করছে।
পূর্ববর্তী পে কমিশনের প্রাসঙ্গিকতা
রাজ্য সরকার পঞ্চম পে কমিশন এবং রোপা ২০০৯-এর সঙ্গে যুক্ত ২৫% ডিএ-র বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এলেও, প্রবীর বাবু স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে রোপা ২০১৯ এবং ২০২২ সালের একটি নির্দেশিকা অনুযায়ী এই বিষয়টি এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। বর্তমানে বকেয়া এবং চলতি ডিএ নিয়ে যে নির্দেশিকা রয়েছে, সেটাই কার্যকর। তাঁর মতে, পে কমিশনের সুপারিশ ঐচ্ছিক, এই যুক্তি দেখিয়ে রাজ্য সরকার আসলে নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চাইছে।
ডিএ নীতি তৈরিতে ব্যর্থতা
রাজ্য সরকার ডিএ নীতি তৈরির জন্য আরও ছয় মাস সময় চেয়েছে, যদিও ২০১৯ সালের স্যাট (SAT) রায়ের পর ছয় বছর কেটে গেলেও তারা কোনও নীতি তৈরি করতে পারেনি। প্রবীর বাবু রাজ্য সরকারের এই “নীতিহীন” মনোভাবের তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং ভবিষ্যতেও আরও দেরি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
রাজ্যের আর্থিক দাবি সত্যি কি?
রাজ্য সরকার দাবি করেছে যে, বকেয়া মেটানোর জন্য তাদের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে ঋণ নিতে হবে। কিন্তু প্রবীর বাবু জানিয়েছেন যে, তাঁরা আদালতে এমন নথি জমা দিয়েছেন যা প্রমাণ করে যে রাজ্যের কাছে পর্যাপ্ত তহবিল রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের আর্থিক দুরবস্থার দাবি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আদালতের অবমাননা
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল যে, কোনওরকম পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই বকেয়া মিটিয়ে দিতে হবে। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই নির্দেশ অমান্য করে টাকা সুপ্রিম কোর্টের অ্যাকাউন্টে রাখার প্রস্তাব দিয়েছে, যা সরাসরি আদালতের অবমাননা। প্রবীর বাবু জোর দিয়ে বলেছেন যে, সুপ্রিম কোর্ট এমন কোনও নির্দেশ দেয়নি।
কর্মীদের জন্য বার্তা
প্রবীর বাবু রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর মতে, রাজ্য সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে এবং যা অবশ্যম্ভাবী, তা বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে। তিনি মনে করেন যে, আইনি পথই সবচেয়ে কার্যকর এবং এর মাধ্যমেই কর্মচারীরা তাঁদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবেন। এই আইনি লড়াইয়ে সত্যের জয় হবেই, এমনটাই তাঁর বিশ্বাস।