Download WB Holiday Calendar App 2026

Download Now!
দেশ

কন্যাদানের সাথে সাথেই কি মেয়ের নামের সম্পত্তির উত্তরাধিকার হারায় বাপের বাড়ি? সুপ্রিম কোর্টের যুগান্তকারী পর্যবেক্ষণ

সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট হিন্দু উত্তরাধিকার আইন সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিতে এক যুগান্তকারী পর্যবেক্ষণ করেছে। আদালত বলেছে যে বিয়ের পর একজন মহিলার গোত্র তাঁর স্বামীর গোত্রে পরিবর্তিত হয়ে যায়। এই পর্যবেক্ষণটি শুধুমাত্র একটি সামাজিক রীতির আইনি স্বীকৃতি নয়, এটি সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকারের অধিকার নিয়েও নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে নিঃসন্তান বিধবারা এই পর্যবেক্ষণের ফলে কীভাবে প্রভাবিত হবেন, তা নিয়ে আইন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

মামলার প্রেক্ষাপট

এই মামলার সূত্রপাত হয় কোভিড-১৯ মহামারীর সময়। এক নিঃসন্তান দম্পতির মৃত্যুর পর তাঁদের রেখে যাওয়া সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। একদিকে ছিলেন মৃত স্বামীর মা এবং অন্যদিকে মৃত স্ত্রীর মা। স্বামীর মা দাবি করেন যে তিনি তাঁর ছেলে এবং বৌমা উভয়ের সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী। অপরদিকে মৃত স্ত্রীর মায়ের দাবি তাঁর নিজের মেয়ের নামের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী তিনি। এই জটিল পরিস্থিতিতে মামলাটি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। বিচারপতি বি.ভি. নাগরত্নের বেঞ্চ এই মামলার শুনানিতে হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে।

সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ

শুনানি চলাকালীন, সুপ্রিম কোর্ট হিন্দু বিবাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি ‘কন্যাদান’-এর কথা উল্লেখ করে। আদালত জানায় যে ‘কন্যাদান’ শুধুমাত্র কন্যাসন্তানকে দান করা নয়, এর সাথে ‘গোত্র-দান’-এর রীতিও জড়িত। এর মাধ্যমে একজন মহিলা তাঁর পৈতৃক গোত্র ত্যাগ করে স্বামীর গোত্র গ্রহণ করেন। আদালত মনে করিয়ে দেয় যে এই প্রথা হাজার হাজার বছর ধরে হিন্দু সমাজে প্রচলিত।

আদালতের মতে, এই গোত্র পরিবর্তনের বিষয়টি শুধুমাত্র একটি সামাজিক প্রথা নয়, এর একটি গভীর আইনি তাৎপর্যও রয়েছে। এর মাধ্যমে একজন মহিলার দায়দায়িত্ব তাঁর পৈতৃক পরিবার থেকে স্বামী এবং তাঁর পরিবারের উপর বর্তায়। এই প্রসঙ্গে আদালত আরও কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেছে:

সবার আগে খবরের আপডেট পান!

টেলিগ্রামে যুক্ত হন
  • ভরণপোষণের দায়িত্ব: বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে একজন মহিলা তাঁর স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ দাবি করেন, তাঁর বাবার পরিবারের কাছ থেকে নয়। এটি প্রমাণ করে যে বিয়ের পর তাঁর দায়িত্ব স্বামীর পরিবারের উপরই থাকে।
  • পারিবারিক পরিচয়: বিয়ের পর একজন মহিলার পরিচয় তাঁর স্বামীর পরিবারের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত হয়ে পড়ে। সামাজিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তিনি স্বামীর পরিবারের একজন সদস্য হিসেবেই গণ্য হন।
  • উত্তরাধিকারের প্রশ্ন: নিঃসন্তান অবস্থায় যদি কোনো হিন্দু বিধবার উইল ছাড়া মৃত্যু হয়, তবে তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকার কে পাবেন, তা নিয়ে হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, যেহেতু বিয়ের পর মহিলার গোত্র এবং পরিবার পরিবর্তিত হয়ে যায়, তাই তাঁর সম্পত্তির উপর শ্বশুরবাড়ির অধিকারই আইনত বেশি যুক্তিযুক্ত।

ভবিষ্যতের প্রভাব

যদিও এই মামলায় এখনও চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয়নি এবং নভেম্বরে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে, তবে সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এটি নিঃসন্তান বিধবাদের সম্পত্তির অধিকারের বিষয়টি নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। যদি আদালত তার পর্যবেক্ষণে অটল থাকে, তবে হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে এর একটি বড় প্রভাব পড়তে পারে। এর ফলে, ভবিষ্যতে এই ধরনের মামলায় শ্বশুরবাড়ির দাবি আরও মজবুত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, এই পর্যবেক্ষণ নারীর ব্যক্তিগত পরিচয় এবং তাঁর পৈতৃক পরিবারের সাথে সম্পর্কের উপর কতটা প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে। আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই মামলার চূড়ান্ত রায় ভারতের পারিবারিক আইন এবং নারীর অধিকারের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

WBPAY Team

আমাদের প্রতিবেদন গুলি WBPAY Team এর দ্বারা যাচাই করে লেখা হয়। আমরা একটি স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম যা পাঠকদের জন্য স্পষ্ট এবং সঠিক খবর পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য এবং সাংবাদিকতার মান সম্পর্কে জানতে, অনুগ্রহ করে আমাদের About us এবং Editorial Policy পৃষ্ঠাগুলি পড়ুন।
Back to top button