দেশ

H-1B Visa: আমেরিকান স্বপ্ন চুরির দায় ভারতের উপর? ট্রাম্পের নতুন ভিডিও ঘিরে তীব্র বিতর্ক!

H-1B Visa: সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রকাশিত একটি ভিডিও বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে ভারতীয়দের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে যে আমেরিকানদের কাছ থেকে তাদের বহুচর্চিত ‘আমেরিকান ড্রিম’ বা ‘আমেরিকান স্বপ্ন’ চুরি হয়ে গেছে। একটা সময় ছিল যখন এই স্বপ্নের অর্থ ছিল একটি স্থিতিশীল চাকরি, দুটি গাড়ি এবং সন্তানরা ১৮-১৯ বছর বয়সেই আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে যাবে। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমেরিকার প্রায় ৪০ শতাংশেরও বেশি যুবক-যুবতীকে তাদের বাবা-মায়ের সাথে থাকতে হচ্ছে, যা আমেরিকান সংস্কৃতির পরিপন্থী।

বিতর্কের কেন্দ্রে ভারত এবং H-1B ভিসা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার সমর্থকদের দাবি, এই ‘আমেরিকান ড্রিম’ চুরির জন্য দায়ী বিদেশিরা, যারা বিপুল সংখ্যায় আমেরিকায় এসেছেন। এই প্রচারণামূলক ভিডিওতে বিশেষভাবে ভারতের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে যে, H-1B ভিসা প্রোগ্রামের অধীনে আসা বিদেশি কর্মীরা, বিশেষ করে ভারতীয়রা, আমেরিকানদের চাকরি এবং স্বপ্ন দুটোই কেড়ে নিয়েছে।

ভিডিওতে একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হয়েছে যে, H-1B ভিসা অনুমোদনের প্রায় ৭১% ভারতীয়দের দখলে। এই তথ্যকে ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট ন্যারেটিভ তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে যে, ভারতীয়রা আমেরিকায় এসে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান নষ্ট করছে।

ক্রমবর্ধমান ভারত-বিরোধী মনোভাব

এই ধরনের প্রচারণার ফলে আমেরিকার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারত-বিরোধী মনোভাব ক্রমশ বাড়ছে। সাধারণ আমেরিকানদের মধ্যে একটি ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে যে ভারতীয়রা কীভাবে এত দ্রুত উন্নতি করছে। একসময় যারা সাধারণ কর্মী হিসেবে আমেরিকায় এসেছিলেন, তারা আজ গ্যাস স্টেশন, গ্রোসারি স্টোরের মালিক এবং এমনকি Google ও Microsoft-এর মতো বিশ্বসেরা কোম্পানির CEO পদে আসীন। এই সাফল্যকেই এখন সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প H-1B ভিসার উপর ১ লক্ষ ডলারের বিপুল ফি আরোপ করার প্রস্তাব দিয়েছেন এবং রাজ্যগুলিকে আমেরিকান কর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

সবার আগে খবরের আপডেট পান!

টেলিগ্রামে যুক্ত হন

আসল সমস্যা কি H-1B ভিসা?

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এই দাবির সাথে একমত নন। আমেরিকার মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩৩ কোটি, যেখানে H-1B ভিসার অধীনে কর্মরত মোট বিদেশি কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ, যার মধ্যে কর্মী প্রায় ১ লক্ষ। এত অল্প সংখ্যক কর্মী আমেরিকার বিশাল অর্থনীতি বা কর্মসংস্থানের উপর বড়সড় প্রভাব ফেলতে পারে না।

আসল সমস্যা লুকিয়ে আছে অন্যত্র। টেক দুনিয়ায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এবং রোবোটিক্সের ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে, যা মানুষের চাকরির সুযোগ কেড়ে নিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, Amazon সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে তারা তাদের লাভ বাড়ানোর জন্য ৫ লক্ষ কর্মীকে রোবট দিয়ে প্রতিস্থাপন করবে। শুধু Amazon নয়, General Motors, UPS এবং Paramount-এর মতো বড় কোম্পানিগুলোও ক্রমাগত কর্মী ছাঁটাই করে চলেছে।

ট্রাম্পের রাজনৈতিক কৌশল হলো, চাকরির এই আসল তথ্যকে লুকিয়ে রেখে H-1B ভিসা এবং ভারতীয়দের উপর দোষ চাপিয়ে দেওয়া। এর ফলে হয়তো সাধারণ আমেরিকানরা সাময়িকভাবে আশ্বস্ত হবেন, কিন্তু আসল সমস্যার কোনো সমাধান হবে না। এই ধরনের প্রচারণার ফলে আমেরিকায় ভারত-বিরোধী মনোভাব আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

WBPAY Team

আমাদের প্রতিবেদন গুলি WBPAY Team এর দ্বারা যাচাই করে লেখা হয়। আমরা একটি স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম যা পাঠকদের জন্য স্পষ্ট এবং সঠিক খবর পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য এবং সাংবাদিকতার মান সম্পর্কে জানতে, অনুগ্রহ করে আমাদের About us এবং Editorial Policy পৃষ্ঠাগুলি পড়ুন।
Back to top button