OBC Reservation: ধর্ম নয়, অনগ্রসরতাই মাপকাঠি: ওবিসি মর্যাদা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করলেন মুখ্যমন্ত্রী

OBC Reservation: পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় এক গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়েছেন যে রাজ্যে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি বা ওবিসি (OBC) মর্যাদা দেওয়ার একমাত্র ভিত্তি হল সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা, ধর্ম নয়। সামাজিক মাধ্যমে চলা বিভিন্ন অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সরব হয়ে তিনি এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কিছু মহল থেকে সামাজিক মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। আমি স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, পশ্চিমবঙ্গে ওবিসি তালিকাভুক্তির সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। একমাত্র অনগ্রসরতাই হল এর মাপকাঠি।”
তিনি আরও জানান যে, বর্তমানে রাজ্য সরকারের অধীনস্থ একটি কমিশন আরও ৫০টি নতুন উপ-বিভাগকে ওবিসি তালিকার অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সমীক্ষা চালাচ্ছে। এই পদক্ষেপের ফলে রাজ্যের আরও অনেক পিছিয়ে পড়া মানুষ সংরক্ষণের আওতায় আসবেন এবং উন্নয়নের মূলস্রোতে সামিল হওয়ার সুযোগ পাবেন।
ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে রাজ্যের বর্তমান চিত্র
বিধানসভায় অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ বিভাগের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করার পর মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান:
- দুটি ভাগে বিভক্ত তালিকা: পশ্চিমবঙ্গে ওবিসি তালিকা দুটি ভাগে বিভক্ত – OBC-A এবং OBC-B।
- OBC-A: এই তালিকায় মূলত সবচেয়ে অনগ্রসর শ্রেণিগুলিকে রাখা হয়েছে। বর্তমানে এই তালিকায় ৪৯টি উপ-বিভাগ রয়েছে।
- OBC-B: তুলনামূলকভাবে কম অনগ্রসর শ্রেণিগুলিকে এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই তালিকায় ৯১টি উপ-বিভাগ রয়েছে।
- সমীক্ষার ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্তি: মুখ্যমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন যে, প্রতিটি অন্তর্ভুক্তিই ব্যাপক ক্ষেত্রসমীক্ষার (extensive field surveys) এবং অনগ্রসর শ্রেণি কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে করা হয়েছে। কোনো ক্ষেত্রেই ধর্মকে মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহার করা হয়নি।
সরকারের পদক্ষেপের তাৎপর্য
রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ধর্মের ভিত্তিতে নয়, বরং প্রকৃত অনগ্রসরতার নিরিখে সংরক্ষণ প্রদান করার এই নীতি আরও বেশি সংখ্যক যোগ্য মানুষের কাছে সুযোগ পৌঁছে দেবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে রাজ্যের পিছিয়ে পড়া শ্রেণিগুলি শিক্ষা, চাকরি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে আরও বেশি সুযোগ পাবে, যা সার্বিকভাবে রাজ্যের উন্নয়নে সহায়তা করবে।
মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা রাজ্যের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। একদিকে যখন সংরক্ষণ নীতি নিয়ে দেশজুড়ে বিভিন্ন আলোচনা চলছে, তখন পশ্চিমবঙ্গের এই অবস্থান অনগ্রসর শ্রেণির মানুষের অধিকার রক্ষায় একটি ইতিবাচক বার্তা দেয়। সরকারের এই স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি রাজ্যের সামাজিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা যায়।