Pensioner

Pension Rights: অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পেনশন নিয়ে আর টালবাহানা নয়! কলকাতা হাইকোর্টের গুরুত্বপুর্ন রায়

Pension Rights: কলকাতা হাইকোর্ট এক গুরুত্বপুর্ন রায়ে অবসরপ্রাপ্ত পৌর কর্মীদের পেনশন প্রদানের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের গাফিলতি এবং উদাসীনতার তীব্র সমালোচনা করেছে। আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে যে, অবসরের পর সরকারি কর্মচারীদের পেনশন দেওয়া সরকারের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। এই রায়টি সেই সমস্ত কর্মীদের জন্য এক নতুন আশার আলো নিয়ে এসেছে, যারা বছরের পর বছর ধরে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রায় ১৪৯ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর পেনশন সংক্রান্ত মামলায় হাইকোর্টের এই পর্যবেক্ষণ এবং নির্দেশ রাজ্য প্রশাসনকে এক কঠোর বার্তা দিয়েছে। আদালত জানিয়েছে যে, প্রশাসনিক জটিলতা বা প্রযুক্তিগত কারণ দেখিয়ে কর্মীদের তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। এই রায়টি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু কর্মীর জন্য নয়, বরং সমস্ত সরকারি কর্মচারীর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা তাদের অবসরের পর আর্থিক সুরক্ষাকে আরও মজবুত করবে।

মামলার প্রেক্ষাপট

এই মামলাটি মূলত ১৪৯ জন অবসরপ্রাপ্ত পৌর কর্মীর পেনশন সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে। এই কর্মীরা তাদের কর্মজীবনের শেষে এসেও পেনশন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। বিভিন্ন সরকারি দপ্তর একে অপরের উপর দোষ চাপিয়ে নিজেদের দায়িত্ব এড়াতে চেয়েছিল, যার ফলে এই কর্মীরা চরম দুর্দশার মধ্যে পড়েন। আদালত এই পরিস্থিতিকে ‘প্রশাসনিক গাফিলতির চরম উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে। কর্মীদের দীর্ঘদিনের সার্ভিস সত্ত্বেও, তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল শুধুমাত্র প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণে। এই মামলাটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, কীভাবে লাল ফিতের ফাঁস সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে এবং ন্যায়বিচার পেতে তাদের কতটা সংগ্রাম করতে হয়।

আদালতের পর্যবেক্ষণ

আদালত এই মামলায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করেছে, যা সরকারি কর্মীদের অধিকার রক্ষায় এক নতুন দিশা দেখিয়েছে।

  • সাংবিধানিক দায়িত্ব: আদালত জোর দিয়ে বলেছে যে, কর্মীদের পেনশন দেওয়া সরকারের দয়া নয়, বরং এটি একটি সাংবিধানিক দায়িত্ব। যে কর্মীরা তাদের জীবনের মূল্যবান সময় দেশের সেবায় উৎসর্গ করেছেন, তাদের অবসরের পর সুরক্ষিত রাখা সরকারের কর্তব্য।
  • প্রশাসনিক উদাসীনতা: হাইকোর্ট বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে দায়িত্ব এড়ানোর প্রবণতার তীব্র সমালোচনা করেছে। আদালত মনে করে যে, এই ধরনের গাফিলতি শুধুমাত্র কর্মীদের প্রতি অন্যায় নয়, বরং এটি প্রশাসনের বিশ্বাসযোগ্যতাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়।
  • অধিকারের সুরক্ষা: প্রযুক্তিগত বা পদ্ধতিগত কারণ দেখিয়ে কর্মীদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। যদি কোনো কর্মী তার চাকরির প্রায় তিন দশক পর জানতে পারেন যে তার চাকরি স্থায়ী ছিল না এবং সেই কারণে তিনি পেনশন পাবেন না, তবে এক্ষেত্রেও সরকারের উচিত তাকে সমর্থন করা।

নবদ্বীপ পৌরসভার উদাহরণ

নবদ্বীপ পৌরসভার এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর মামলা এই প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রায় তিন দশক ধরে সার্ভিস দেওয়ার পর তাকে জানানো হয় যে, তার চাকরি স্থায়ী না হওয়ায় তিনি পেনশন পাওয়ার যোগ্য নন। এই প্রসঙ্গে আদালত মন্তব্য করে যে, সরকার প্রযুক্তিগত কারণ দেখিয়ে তার দায়িত্ব এড়াতে পারে না। যদি কোনো কর্মীর নিয়োগে কোনো ত্রুটি থেকেও থাকে, তার দায় কর্মীর উপর চাপানো যায় না। আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে, আট সপ্তাহের মধ্যে ওই কর্মীর সমস্ত বকেয়া পেনশন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা মিটিয়ে দিতে হবে।

আদালতের নির্দেশ ও তার গুরুত্ব

কলকাতা হাইকোর্টের এই রায় শুধুমাত্র একটি মামলার নিষ্পত্তি নয়, এটি রাজ্য সরকারের জন্য একটি কঠোর নির্দেশিকা। আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, কর্মীদের পেনশন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সময়মতো প্রদান করতে হবে। এই রায় সেই সমস্ত অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের মনে নতুন করে আশা জাগিয়েছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছেন। এটি প্রমাণ করে যে, বিচারব্যবস্থা সর্বদা সাধারণ মানুষের পাশে আছে এবং প্রশাসনিক গাফিলতির বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। এই রায়ের ফলে আগামী দিনে সরকারি দপ্তরগুলো আরও সতর্ক হবে এবং কর্মীদের অধিকার রক্ষায় আরও সংবেদনশীল হবে বলে আশা করা যায়।

WBPAY

The site wbpay.in is a collaborative platform voluntarily monitored by a dedicated group of reporters of West Bengal. The site features insightful posts and articles authored by experts in various fields, ensuring high-quality content that informs and engages the community. With a focus on transparency and public service, wbpay.in aims to provide valuable resources and updated news relevant to the citizens and employees of West Bengal. For any query please mail us at [email protected]

Related Articles

Back to top button