শিক্ষা

Primary Teachers Transfer: প্রাথমিকে ২৩ হাজার শিক্ষকের বদলি! কী কারণে এতো বদলি? কী জানাল দপ্তর

Primary Teacher Transfer: রাজ্য জুড়ে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় এক বড় পদক্ষেপ নিল স্কুল শিক্ষা দফতর। শুক্রবার জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে, রাজ্যের বিভিন্ন স্কুল মিলিয়ে প্রায় ২৩,১৪৫ জন প্রাথমিক শিক্ষককে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই ব্যাপক বদলির প্রধান লক্ষ্য হল রাজ্যের স্কুলগুলিতে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতের (Student-Teacher Ratio) ভারসাম্যহীনতা দূর করা এবং পঠনপাঠন স্বাভাবিক রাখা। বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই বদলি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে জেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

বদলি সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ কী?

স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভিত্তি হলো ‘বাংলার শিক্ষা পোর্টাল’ (Banglar Shiksha Portal) থেকে গত সেপ্টেম্বর মাসে সংগৃহীত তথ্য। এই তথ্য বিশ্লেষণ করে দুটি উদ্বেগজনক বিষয় সামনে আসে:

  • উদ্বৃত্ত শিক্ষক: রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে পড়ুয়ার তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা বেশি। তথ্য অনুযায়ী, এমন “অতিরিক্ত” শিক্ষকের সংখ্যা ২৩,১৪৫ জন।
  • শিক্ষক ঘাটতি: ঠিক এর বিপরীতে, রাজ্যের অন্য অনেক স্কুলে পড়ুয়ার তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা কম। সব মিলিয়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ২৩,৯৬২ জন।

এই বিশাল অসামঞ্জস্য দূর করতেই শিক্ষা দফতর ২২টি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের আওতায় থাকা স্কুলগুলিতে শিক্ষকদের এই পুনর্বিন্যাসের (Rationalization) সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গোটা প্রক্রিয়াটি প্রাথমিক শিক্ষা দফতরের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হবে।

শিক্ষা মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

শিক্ষা দফতরের এই নির্দেশিকা ঘিরে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন এবং শিক্ষাবিদদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একদিকে যেমন এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানানো হয়েছে, তেমনই অন্যদিকে কিছু মৌলিক প্রশ্নও উঠে আসছে।

সবার আগে খবরের আপডেট পান!

টেলিগ্রামে যুক্ত হন
  • বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষা সমিতি: সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি এটিকে “বিলম্বিত বোধোদয়” বলে মন্তব্য করেন। তাঁর মতে, এই পদক্ষেপ অনেক আগেই নেওয়া উচিত ছিল। তিনি মনে করেন, আগে এই সিদ্ধান্ত নিলে স্কুলগুলির এমন “করুণ পরিস্থিতি” তৈরি হতো না।
  • শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ: অন্যদিকে, মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী শিক্ষা দফতরের পেশ করা পরিসংখ্যান নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর মূল আপত্তির জায়গা হলো—ঘাটতি (২৩,৯৬২) আর উদ্বৃত্ত (২৩,১৪৫) সংখ্যা প্রায় সমান দেখানো হয়েছে। এর মাধ্যমে কার্যত দাবি করা হচ্ছে যে, রাজ্যে শিক্ষকের ঘাটতি প্রায় নেই, যদিও বাস্তব চিত্রটা হলো নিয়মিত নিয়োগ দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ।

মূল সমস্যা কি অন্য কোথাও?

কিংকর অধিকারীর মতো অনেকেই মনে করছেন, এই তথ্যের আড়ালে মূল সমস্যাটি ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। তাঁদের মতে, অনেক স্কুলে পড়ুয়ার তুলনায় শিক্ষক “উদ্বৃত্ত” হওয়ার প্রধান কারণ হলো সেইসব স্কুলে ছাত্র সংখ্যা হুহু করে কমে যাওয়া।

এর জন্য তাঁরা রাজ্যের প্রাথমিক স্কুলগুলির অপর্যাপ্ত পরিকাঠামো এবং শিক্ষকদের পড়াশোনার বাইরে অন্যান্য বিভিন্ন সরকারি কাজে (শিক্ষা বহির্ভূত কাজে) লাগানোর প্রবণতাকে দায়ী করেছেন। এই কারণে অনেক অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন, যার ফলে ছাত্র সংখ্যা কমছে এবং শিক্ষকরা ‘উদ্বৃত্ত’ হয়ে পড়ছেন।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, শুধুমাত্র এক স্কুল থেকে অন্য স্কুলে বদলি করে এই সমস্যার সাময়িক সমাধান হলেও, এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। প্রাথমিক শিক্ষার সার্বিক উন্নতি ঘটানো না গেলে ছাত্র সংখ্যা কমার এই প্রবণতা রোখা যাবে না। তাই, এই বদলির পাশাপাশি তাঁরা অবিলম্বে সমস্ত শূন্যপদে নতুন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের দাবিও তুলেছেন।

WBPAY Team

আমাদের প্রতিবেদন গুলি WBPAY Team এর দ্বারা যাচাই করে লেখা হয়। আমরা একটি স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম যা পাঠকদের জন্য স্পষ্ট এবং সঠিক খবর পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য এবং সাংবাদিকতার মান সম্পর্কে জানতে, অনুগ্রহ করে আমাদের About us এবং Editorial Policy পৃষ্ঠাগুলি পড়ুন।
Back to top button