Download WB Holiday Calendar App 2026

Download Now!
চাকরি

32000 Teacher Verdict: ৩২০০০ শিক্ষক মামলায় অর্ডার কপিতে কী নির্দেশ দিলেন? জেনে নিন বিস্তারিত

32000 Teacher Verdict: পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতির ইতিহাসে অন্যতম চর্চিত বিষয় ছিল ৩২,০০০ শিক্ষকের চাকরি বাতিলের মামলা। দীর্ঘ আইনি টানাপড়েনের পর ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৫ তারিখে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেছে। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের সেই রায়কে সম্পূর্ণভাবে খারিজ করে দিয়েছে। এর ফলে ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চাকরি পাওয়া প্রায় ৩২,০০০ অপ্রশিক্ষিত (untrained) প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বহাল থাকল। ১৪১ পাতার দীর্ঘ অর্ডার কপিতে আদালত ঠিক কী কী পর্যবেক্ষণ করেছে এবং কী নির্দেশ দিয়েছে, তা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

অর্ডার কপিতে আদালতের মূল নির্দেশ (Operative Order)

কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ তাদের রায়ের ১৯২ নম্বর প্যারাগ্রাফে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে যে, ২০২৩ সালের ১২ মে সিঙ্গল বেঞ্চের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে রায় দিয়েছিলেন, তা খারিজ (Set Aside) করা হলো।

অর্ডার কপিতে আদালত সুনির্দিষ্টভাবে জানিয়েছে:

  • সিঙ্গল বেঞ্চের চাকরি বাতিলের রায় এবং নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ বাতিল করা হয়েছে।
  • এই সংক্রান্ত সমস্ত আপিল এবং আবেদনগুলি নিষ্পত্তি (Disposed of) করা হয়েছে।
  • মামলাকারীদের পক্ষ থেকে এই রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ (Stay of operation) চাওয়া হয়েছিল, যা আদালত সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। অর্থাৎ, এই রায় অবিলম্বে কার্যকর হবে।

কেন সিঙ্গল বেঞ্চের রায় খারিজ করল ডিভিশন বেঞ্চ?

অর্ডার কপিতে বিচারপতিরা বেশ কয়েকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আইনি এবং বাস্তবিক কারণ দর্শিয়েছেন, যার ভিত্তিতে ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি রক্ষা পেল। আদালতের পর্যবেক্ষণগুলি নিম্নরূপ:

সবার আগে খবরের আপডেট পান!

টেলিগ্রামে যুক্ত হন

১. স্বাভাবিক ন্যায়বিচারের লঙ্ঘন (Violation of Natural Justice)

আদালত তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, সিঙ্গল বেঞ্চ যখন ৩২,০০০ শিক্ষকের চাকরি বাতিলের মত বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তখন এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষককে মামলায় পক্ষভুক্ত করা হয়নি। যাঁদের জীবিকা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, তাঁদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগ না দিয়েই চাকরি বাতিল করা হয়েছিল, যা প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে এই বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।

২. অ্যাপটিটিউড টেস্ট নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা

সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ে বলা হয়েছিল যে কোনও ‘অ্যাপটিটিউড টেস্ট’ (Aptitude Test) নেওয়া হয়নি। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, মাত্র ৩০ জন ইন্টারভিউয়ার বা পরীক্ষকের বয়ানের ওপর ভিত্তি করে এবং ‘অনুমান’-এর ওপর নির্ভর করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি। এটি প্রমাণিত নয় যে ঢালাওভাবে কোনও অ্যাপটিটিউড টেস্ট হয়নি। আদালত মনে করেছে, সামান্য কিছু সাক্ষ্যের ভিত্তিতে গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বাতিল করা যায় না।

৩. দুর্নীতির প্রমাণে খামতি

আদালত জানিয়েছে, সিবিআই (CBI) ও ইডি (ED)-র তদন্তে নির্দিষ্ট কিছু অনিয়ম সামনে এসেছে। যেমন ২৬৪ জন গ্রেস মার্কস পেয়েছিলেন এবং ৯৬ জন অযোগ্য প্রার্থী ছিলেন, যাঁদের চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু এই মুষ্টিমেয় কিছু প্রার্থীর দুর্নীতির দায় সব শিক্ষকের ওপর চাপানো যায় না। ঢালাওভাবে ৩২,০০০ শিক্ষকের নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বা ‘চাকরি বিক্রি’ হয়েছে—এমন কোনও অকাট্য প্রমাণ বা ‘মানি ট্রেল’ (Money trail) মামলাকারীরা দেখাতে পারেননি।

৪. মানবিক দিক ও দীর্ঘ কর্মজীবন

বিচারপতিরা তাঁদের রায়ে উল্লেখ করেছেন যে, এই শিক্ষকরা প্রায় ৮-৯ বছর ধরে চাকরি করছেন। জীবনের এই পর্যায়ে এসে, এত বছর চাকরি করার পর যদি তাঁদের চাকরি বাতিল করা হয়, তবে তা তাঁদের এবং তাঁদের পরিবারের জন্য ‘অপূরণীয় দুর্ভোগ’ (Insurmountable Inconvenience) ডেকে আনবে। শুধুমাত্র সন্দেহের বশে বা কিছু অসফল প্রার্থীর অভিযোগে এত বড় পদক্ষেপ নেওয়া যায় না।

৫. মামলা দায়েরের সময় এবং উদ্দেশ্য

২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং ২০১৭ সালের নিয়োগের বিরুদ্ধে ২০২২ সালে (প্রায় ৫ বছর পর) মামলা করা হয়েছিল, যার কোনও সদুত্তর বা ব্যাখ্যা মামলাকারীরা দিতে পারেননি। তাছাড়া, মূল রিট পিটিশনে মামলাকারীরা চাকরি বাতিলের আবেদনই জানাননি, তাঁরা চেয়েছিলেন শূন্যপদে নিজেদের নিয়োগ। আদালত যা চাওয়া হয়নি, সেই নির্দেশ দিতে পারে না বলে পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে।

এই রায়ের ফলে আপাতত বড় স্বস্তিতে রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকরা। আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, নির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া ঢালাওভাবে ‘সিস্টেমেটিক ফ্রড’-এর তত্ত্ব মেনে হাজার হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করা উচিত নয়। যাঁরা ইতিমধ্যেই চাকরি করছেন, তাঁদের অধিকার রক্ষার পক্ষেই রায় দিয়েছে আদালত।

রায়ের অর্ডার কপি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।

WBPAY Team

আমাদের প্রতিবেদন গুলি WBPAY Team এর দ্বারা যাচাই করে লেখা হয়। আমরা একটি স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম যা পাঠকদের জন্য স্পষ্ট এবং সঠিক খবর পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য এবং সাংবাদিকতার মান সম্পর্কে জানতে, অনুগ্রহ করে আমাদের About us এবং Editorial Policy পৃষ্ঠাগুলি পড়ুন।
Back to top button