চাকরি

SSC Protest: ৬০-এ ৬০ পেয়েও ব্রাত্য! ১০ নম্বরের ‘কালো পর্দা’ সরাতে রাজপথে নতুন চাকরিপ্রার্থীরা

SSC Protest: রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে ফের জটিলতা ও বিক্ষোভের চিত্র প্রকাশ্যে এল। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলেও, নতুন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মূল অভিযোগ, লিখিত পরীক্ষায় পূর্ণমান বা তার কাছাকাছি নম্বর পাওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র অভিজ্ঞতার জন্য বরাদ্দ অতিরিক্ত নম্বরের কারণে তাঁরা ইন্টারভিউয়ের ডাক পাচ্ছেন না। এই ঘটনাকে তাঁরা সরাসরি ‘সরকারি বঞ্চনা’ হিসেবেই দেখছেন।

যোগ্যতমানে এগিয়ে থেকেও অভিজ্ঞতার কাছে হার?

নতুন পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, মেধা ও যোগ্যতায় তাঁরা কোনো অংশে কম নন। এমনকী লিখিত পরীক্ষায় কেউ ৬০-এর মধ্যে ৬০, আবার কেউ ৫৯ পেয়েছেন। কিন্তু এত ভালো নম্বর থাকা সত্ত্বেও ইন্টারভিউ বোর্ডে ডাক পাননি তাঁরা। এর মূল কারণ হিসেবে তাঁরা চিহ্নিত করেছেন অভিজ্ঞতার জন্য দেওয়া অতিরিক্ত ১০ নম্বরকে। তাঁদের মতে, এই ১০ নম্বরই আসলে নতুনদের মেধাকে অভিজ্ঞতার কাছে হারিয়ে দিচ্ছে।

বিক্ষোভকারী চাকরিপ্রার্থী সায়রাবানু আহমেদ ক্ষোভের সুরে বলেন, “দশ বছর বাদে পরীক্ষা নিয়েছে কমিশন। আর তার পরও নতুনদের সঙ্গে বঞ্চনা করা হচ্ছে। এই দশ নম্বর আসলে এক কালো পর্দা। যা সরকার তার দুর্নীতিকে ঢাকতে ‘যোগ্য’দের সুবিধা করে দিচ্ছে।”

আদালতের দ্বারস্থ ও রাজপথে আন্দোলন

ইতিমধ্যেই নিজেদের দাবি আদায়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন নতুন চাকরিপ্রার্থীরা। তবে বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতার কথা ভেবে তাঁরা রাজপথেও নামতে বাধ্য হয়েছেন। এর আগে ১৭ ও ১৮ নভেম্বর করুণাময়ী এবং বিকাশ ভবন অভিযানের চেষ্টা করলে পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় তাঁদের। বর্তমানে বিধাননগর কমিশনারেট ও বিধাননগর উত্তর থানায় মিছিলের অনুমতি চাওয়া হলেও পুলিশ এখনও অনুমোদন দেয়নি।

সবার আগে খবরের আপডেট পান!

টেলিগ্রামে যুক্ত হন

এক চাকরিপ্রার্থী, যিনি ইন্টারভিউতে ডাক পাননি, বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই আইনের দ্বারস্থ হয়েছি। কিন্তু কবে আদালত অনুমোদন দেবে তার জন্য তো আমরা বসে থাকতে পারি না। একবার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে গেলে আমরা বঞ্চিত হব। আমাদের ন্যায্য দাবি আমরা আন্দোলনের মাধ্যমেই ছিনিয়ে নেব।”

চাকরিপ্রার্থীদের প্রধান ৩টি দাবি

বিক্ষোভকারী নতুন চাকরিপ্রার্থীরা মূলত তিনটি সুনির্দিষ্ট দাবি সামনে রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন:

  • অভিজ্ঞতার নম্বর বাতিল: অভিজ্ঞতার জন্য বরাদ্দ ১০ নম্বর কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কোনোভাবেই দেওয়া যাবে না।
  • শূন্যপদ বৃদ্ধি: অবিলম্বে প্রায় ১৩ হাজার অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করে নিয়োগ করতে হবে।
  • স্বচ্ছতা: নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সমস্ত প্রার্থীর ওএমআর (OMR) শিট জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে।

আন্দোলনের ঘটনাক্রম

নতুন চাকরিপ্রার্থীদের সাম্প্রতিক আন্দোলনের একটি সময়রেখা নিচে দেওয়া হলো:

তারিখঘটনা
১৭ নভেম্বরকরুণাময়ী থেকে বিকাশ ভবন অভিযান। সেন্ট্রাল পার্কের সামনে প্রায় সাত ঘণ্টা অবরোধ। পুলিশ সরিয়ে দেয়।
১৮ নভেম্বরসার্ভিস কমিশন অভিযানের জন্য করুণাময়ীতে জমায়েত, পুলিশ আটক করে।
বর্তমান পরিস্থিতিবিধাননগর কমিশনারেটে মিছিলের অনুমতি চাওয়া হয়েছে, তবে এখনও মেলেনি।

সংবিধানের দোহাই ও বঞ্চনার অভিযোগ

আন্দোলনকারীরা সংবিধানের মৌলিক অধিকারের প্রসঙ্গও তুলে ধরেছেন। চাকরিপ্রার্থী সাইফুল হাসান বলেন, “সংবিধানের মৌলিক অধিকারের অনুচ্ছেদ ১৬ নম্বর ধারা অনুসারে সকলকে সমান অধিকার দেওয়ার কথা বলা আছে। আর সরকার এখানে ‘যোগ্য’দের সুবিধা করিয়ে দেওয়ার জন্য নতুনদের অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে।”

নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেলে তাঁরা চিরতরে বঞ্চিত হবেন, এই আশঙ্কায় আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষা না করে লাগাতার আন্দোলনের পথেই হাঁটতে চাইছেন রাজ্যের এই নতুন চাকরিপ্রার্থীরা।

WBPAY Team

আমাদের প্রতিবেদন গুলি WBPAY Team এর দ্বারা যাচাই করে লেখা হয়। আমরা একটি স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম যা পাঠকদের জন্য স্পষ্ট এবং সঠিক খবর পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য এবং সাংবাদিকতার মান সম্পর্কে জানতে, অনুগ্রহ করে আমাদের About us এবং Editorial Policy পৃষ্ঠাগুলি পড়ুন।
Back to top button