SIR 2026: বিএলও-দের জন্য কমিশনের নতুন নির্দেশিকা, ‘রি-ভেরিফিকেশন’ করার কড়া নির্দেশ
SIR 2026: পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী পরিকাঠামোয় স্বচ্ছতা আনতে এবং ভোটার তালিকার নির্ভুলতা নিশ্চিত করতে ফের বড়সড় পদক্ষেপ নিল নির্বাচন কমিশন। ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ তারিখে রাজ্যের চিফ ইলেক্টোরাল অফিসারের দপ্তর থেকে SIR 2026 (Summary Revision of Electoral Rolls) বা ভোটার তালিকা সংশোধন সংক্রান্ত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। এই নির্দেশিকায় একদিকে যেমন এনুমারেশন বা তথ্য সংগ্রহের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে, অন্যদিকে তথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে বুথ লেভেল অফিসার বা বিএলও-দের (BLO) ওপর নজিরবিহীন কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
কমিশনের নতুন এই নির্দেশিকা অনুযায়ী, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ বা এনুমারেশন প্রক্রিয়ার সময়সীমা বাড়িয়ে ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে এই বর্ধিত সময়সীমার মধ্যে কাজের গতি এবং গুণমান বজায় রাখতে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ডেটা এন্ট্রি এবং ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে কোনোওরকম গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তথ্য আপলোড ও সময়সীমার কড়াকড়ি
নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, কাজের কোনোও ‘ব্যাকলগ’ বা বকেয়া রাখা যাবে না। বিএলও-দের কাজের সুবিধার্থে এবং পোর্টালের ওপর চাপ সামলাতে নিচের সময়সূচী এবং নিয়মগুলি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে:
- ব্যাকলগ ক্লিয়ারেন্স: ২রা ডিসেম্বর, ২০২৫-এর মধ্যে সমস্ত সংগৃহীত ফর্ম এবং যেগুলি বিতরণ করা সম্ভব হয়নি, সেই সংক্রান্ত তথ্য পোর্টালে আপলোড করা বাধ্যতামূলক ছিল।
- দৈনিক কাজের হিসাব: ২রা ডিসেম্বরের পর থেকে আর কাজ জমিয়ে রাখা যাবে না। যেদিন যে তথ্য বা ফর্ম সংগ্রহ করা হবে, সেদিনই তা পোর্টালে আপলোড করতে হবে।
- আনকালেক্টেবল ফর্ম: যদি কোনো পরিবার ১১ই ডিসেম্বরের মধ্যে ফর্ম পূরণ করে জমা না দেয়, তবে সেই ফর্মগুলিকে অ্যাপের মাধ্যমে ‘Uncollectable’ হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।
তথ্যের সত্যতা যাচাই ও ভেরিফিকেশন
এবারের নির্দেশিকার মূল ফোকাস হলো ‘রি-ভেরিফিকেশন’ বা পুনরায় যাচাইকরণ। কমিশন লক্ষ্য করেছে যে, অনেক ক্ষেত্রে এজেন্সি বা অস্থায়ী কর্মীদের দিয়ে ডেটা এন্ট্রি করানো হয়। তাই বিএলও-দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন ব্যক্তিগতভাবে প্রতিটি এন্ট্রি খতিয়ে দেখেন। বিশেষ করে বয়স্ক ভোটার এবং আত্মীয়দের সঙ্গে লিঙ্ক করা ভোটারদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হনযে বিষয়গুলিতে বিশেষ নজর দিতে হবে:
১. প্রজিনি ম্যাপিং ও বয়সের ফারাক: বর্তমানে যাদের বয়স ৫০ বছর বা তার বেশি এবং যারা নিজেরা ম্যাপ না হয়ে বাবা-মা বা বয়োজ্যেষ্ঠ আত্মীয়ের সঙ্গে ম্যাপ (Progeny Mapping) হয়েছেন, তাঁদের তথ্য স্ক্যানারের তলায় থাকছে। প্রশ্ন উঠছে, ২০০২ সালে যখন তাঁদের বয়স ২৫-এর বেশি ছিল, তখন কেন তাঁদের নাম ভোটার তালিকায় ছিল না? এটি খতিয়ে দেখতে হবে।
২. বয়স্ক ভোটার (৬০+): ২০০২ সালের ভোটার তালিকার নিরিখে যাঁদের বয়স ৬০-এর বেশি এবং যাঁরা ‘সেলফ ম্যাপিং’ করেছেন, তাঁদের তথ্যও পুনরায় যাচাই করতে হবে।
৩. বাবা-মায়ের বয়সের ব্যবধান: আবেদনকারীর সঙ্গে বাবা-মায়ের বয়সের ব্যবধান যদি ৪৫ বছরের বেশি অথবা ১৮ বছরের কম হয়, তবে তা সন্দেহের তালিকায় পড়বে এবং বিস্তারিত তদন্ত করতে হবে।
৪. অনুপস্থিত সদস্য: পরিবারের কোনো সদস্য অনুপস্থিত থাকলে তাঁর হয়ে অন্য কেউ সই করলে নিশ্চিত করতে হবে যে ওই ব্যক্তি দেশের অন্য কোথাও ভোটার নন। প্রয়োজনে বিএলও-কে সেই বাড়িতে গিয়ে বা ফোন করে নিশ্চিত হতে হবে।
একনজরে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশাবলী
| বিষয় | নির্দেশিকা |
|---|---|
| সময়সীমা বৃদ্ধি | এনুমারেশন চলবে ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত। |
| স্পর্শকাতর বুথ | ২০২১ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের নিরিখে চিহ্নিত সেনসিটিভ বুথগুলিতে বিশেষ নজরদারি। |
| মৃত ভোটার শনাক্তকরণ | জন্ম-মৃত্যু রেজিস্টার এবং বাতিল রেশন কার্ডের তথ্য মিলিয়ে দেখতে হবে। |
| রোলব্যাক সুবিধা | ভুল এন্ট্রি সংশোধনের জন্য অ্যাপে রোলব্যাক অপশন ব্যবহার করা যাবে। |
কমিশন হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, এই নির্দেশিকাগুলি অমান্য করলে বা কাজে অসঙ্গতি পাওয়া গেলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের কৈফিয়ত তলব করা হবে এবং প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।