SLST Protest: “মৃত্যুর মিছিলের সামনে আমরা দাঁড়িয়ে” ১ লক্ষ শূন্যপদ ও ১০ নম্বর বাতিলের দাবিতে রণক্ষেত্র উত্তাল কলকাতা
SLST Protest: দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ও ন্যায্য চাকরির দাবিতে আজ ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল কলকাতার রাজপথ। এসএসসির (SSC) নতুন চাকরিপ্রার্থীদের মিছিলে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল মৌলালি ও ধর্মতলা চত্বর। নিয়োগের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনরত SLST চাকরিপ্রার্থীরা আজ তাঁদের ক্ষোভ উগরে দেন রাস্তায়। শিয়ালদহ থেকে শুরু হওয়া এই মিছিলের গন্তব্য ছিল ধর্মতলা, যা পুলিশি বাধার মুখে পড়ে এবং পরবর্তীতে ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
মূল দাবি: ১ লক্ষ শূন্যপদ ও ওয়েটেজ বাতিল
আন্দোলনকারীদের প্রধান দাবি হলো রাজ্যে অবিলম্বে ১ লক্ষ শূন্যপদ পূরণ করতে হবে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, কিছুদিন আগে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং জানিয়েছিলেন যে তাঁর হাতে ১০ লক্ষ শূন্যপদ রয়েছে। সেই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতেই SLST চাকরিপ্রার্থীরা দাবি তুলেছেন, তাঁদের জন্য অন্তত ১ লক্ষ সিট বা শূন্যপদ বরাদ্দ করা হোক।
পাশাপাশি, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নম্বরের বিভাজন নিয়েও তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা। তাদের অভিযোগ, অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্যারা টিচার বা অন্যান্য ক্যাটাগরির প্রার্থীদের জন্য যে ১০ নম্বরের অতিরিক্ত সুবিধা (Weightage) রাখা হয়েছে, তা সাধারণ নতুন প্রার্থীদের (Freshers) জন্য বড় অবিচার। তাদের মতে:
- এক নম্বরের জন্য যেখানে হাজার হাজার প্রার্থীর চাকরি হয় না, সেখানে ১০ নম্বরের ব্যবধান অনেক বড়।
- এই ১০ নম্বর বাতিলের দাবিতে তাঁরা অনড়।
- কাট-অফ মার্কস নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁরা জানান, ৭০ নম্বর পেয়েও অনেকে ডাক পাচ্ছেন না, যা নিয়ে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে।
পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে লঙ্কাকাণ্ড
আজ দুপুর ১২:৫৫ মিনিট নাগাদ শিয়ালদহ থেকে মিছিল শুরু হয়। পুলিশের অনুমতি ছিল শুধুমাত্র রামলীলা ময়দান পর্যন্ত। কিন্তু সেই গণ্ডি মানতে নারাজ ছিলেন ক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থীরা। মৌলালি মোড়ে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে মিছিল আটকানোর চেষ্টা করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হনবিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মতলার দিকে এগোতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পুলিশ অকারণে তাঁদের বাধা দেয়। এরপরেই আন্দোলনকারীরা মরিয়া হয়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এবং সরিয়ে এস এন ব্যানার্জি রোড ধরে ধর্মতলার দিকে অগ্রসর হন। এই সময় পুলিশের সঙ্গে চাকরিপ্রার্থীদের ব্যাপক ধস্তাধস্তি হয়। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত মহিলা পুলিশ না থাকা সত্ত্বেও পুরুষ পুলিশকর্মীরা মহিলা আন্দোলনকারীদের গায়ে হাত দিয়েছেন এবং হেনস্থা করেছেন।
‘মৃত্যুর মিছিলের সামনে’ দাঁড়িয়ে থাকার আর্তনাদ
চাকরিপ্রার্থীরা তাঁদের বর্তমান মানসিক ও সামাজিক অবস্থাকে ‘মৃত্যুর মিছিলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা’ বলে বর্ণনা করেছেন। দীর্ঘ বঞ্চনার শিকার এই প্রার্থীদের মতে, বছরের পর বছর অপেক্ষা করেও তাঁরা যোগ্য সম্মান পাননি। বরং সামাজিকভাবে তাঁরা হেয় হচ্ছেন এবং প্রতিটি পরিবার আজ চরম হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দ্রুত বৈঠক করে সমাধান না করা হলে তাঁরা আমরণ অনশন চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।
নিচে সংক্ষেপে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ ও দাবির একটি তালিকা দেওয়া হলো:
| বিষয় | বিস্তারিত বিবরণ |
|---|---|
| শূন্যপদ বৃদ্ধি | অবিলম্বে ১ লক্ষ শূন্যপদ ঘোষণা করে নিয়োগ সম্পন্ন করতে হবে। |
| বৈষম্য দূরীকরণ | প্যারা টিচারদের জন্য ১০ নম্বরের অতিরিক্ত ওয়েটেজ বাতিল করতে হবে। |
| প্যানেল বিতর্ক | ২০১৬ সালের ক্যান্ডিডেট এবং নতুনদের জন্য আলাদা প্যানেল তৈরি করা হয়নি, যা বঞ্চনার কারণ। |
| সংবিধান লঙ্ঘন | ভারতীয় সংবিধান মেনে স্বচ্ছভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে না বলে অভিযোগ। |
মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে ক্ষোভ
আন্দোলনকারীদের একাংশ মুখ্যমন্ত্রীর পূর্ববর্তী মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাঁদের দাবি, আলাদা প্যানেলের দাবির প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেছিলেন এতে তাঁর কী “ফায়দা” হবে। আন্দোলনকারীদের মতে, একটিই পরীক্ষার মাধ্যমে বারবার একই পদে নিয়োগের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে, যাকে তাঁরা “ডবল ডবল চাকরি” বলে কটাক্ষ করেছেন। এই প্রক্রিয়ায় নতুন এবং যোগ্য প্রার্থীরা বারবার বঞ্চিত হচ্ছেন। ২০১১ সালে আন্দোলনের মাধ্যমেই বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছিল, সেই ইতিহাস মনে করিয়ে দিয়ে তাঁরাও আন্দোলনের পথেই নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার শপথ নিয়েছেন।