চাকরি

SSC Case: ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইও ফেরাতে পারল না চাকরি, এসএসসি চাকরি ফেরানোর মামলা খারিজ সুপ্রিম কোর্টে

SSC Case: পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) ২০১৬ সালের নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। ২৬,০০০ চাকরি বাতিলের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দায়ের করা আরো একটি আবেদন খারিজ করে দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত, সুপ্রিম কোর্ট। মানবিকতার খাতিরে এক ক্যান্সার আক্রান্ত আবেদনকারীর চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি জানানো হলেও, বিচারপতিরা সমগ্র নিয়োগ প্রক্রিয়াটিকেই “দুর্নীতিগ্রস্ত” বলে উল্লেখ করে এই আবেদন নাকচ করে দেন।

মামলার প্রেক্ষাপট ও শুনানির মূল বিষয়

২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে সুপ্রিম কোর্ট প্রায় ২৬,০০০ প্রার্থীর চাকরি বাতিল করে দেয়। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা হয়। আজকের মামলাটির আবেদনকারী ছিলেন সৌমি বিশ্বাস নামে একজন চাকরি প্রার্থী, যিনি বর্তমানে ক্যান্সারের সাথে লড়াই করছেন। তাঁর আইনজীবী, অমিত শর্মা, মানবিকতার যুক্তিতে তাঁর মক্কেলের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আদালতে আকুল আবেদন জানান।

কিন্তু বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ এই আবেদন গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। শুনানিতে বিচারপতিরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, যদিও আবেদনকারীর প্রতি তাদের সম্পূর্ণ সহানুভূতি রয়েছে, আইনের ঊর্ধ্বে গিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। আদালত জানায়:

  • দুর্নীতিগ্রস্ত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া: বিচারপতিদের মতে, যেহেতু সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়াটিই ত্রুটিপূর্ণ এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল, তাই একজন ব্যক্তির জন্য আলাদা করে কোনও নির্দেশ দেওয়া যায় না। যখন পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াটাই বাতিল হয়ে গেছে, তখন কোনও একক ব্যক্তিকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়।
  • শারীরিকভাবে অক্ষমদের জন্য ছাড়: আদালত মনে করিয়ে দেয় যে, শুধুমাত্র বিশেষভাবে সক্ষম বা দৃষ্টিহীন প্রার্থীদের ক্ষেত্রে কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছিল, যেমন সোমা দাসের ঘটনায়। কিন্তু সাধারণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম প্রযোজ্য নয়।
  • পরীক্ষায় বসার সুযোগ: আদালত জানায় যে, “Untainted” বা নিষ্কলঙ্ক প্রার্থীদের পুনরায় পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবং প্রয়োজনে বয়সেরও ছাড় দেওয়া হয়েছে। তাই আবেদনকারীকেও সেই পথেই এগোতে হবে।

আদালতের কঠোর মনোভাব ও মানবিকতার টানাপোড়েন

শুনানি চলাকালীন আবেদনকারীর আইনজীবী বারবার বলেন যে, তাঁর মক্কেল কেমোথেরাপি নিয়েও পরীক্ষায় বসার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। তিনি আরও দাবি করেন যে, সৌমি বিশ্বাসের নাম কোনও “Tainted” বা দুর্নীতিগ্রস্তদের তালিকায় নেই এবং তিনি কোনও আর্থিক লেনদেনের সাথেও জড়িত ছিলেন না।

এর উত্তরে বিচারপতিরা বলেন যে, আইন ভাঙা সম্ভব নয়। তবে তাঁরা একটি বিকল্প পথের পরামর্শ দেন। আদালত জানায় যে, রাজ্য সরকার চাইলে কোনও জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের (Welfare Scheme) মাধ্যমে আবেদনকারীকে আর্থিক সাহায্য করতে পারে। বিচারপতি উদাহরণ দিয়ে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প থেকে তাঁর নিজের ড্রাইভারের বোন, যিনি একজন ক্যান্সার রোগী, ৪০,০০০ টাকা আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। সেইমতো রাজ্য সরকারকেও এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

শেষ পর্যন্ত, সুপ্রিম কোর্ট চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদনটি সম্পূর্ণ খারিজ করে দেয় এবং শুধুমাত্র রাজ্য সরকারের রিলিফ ফান্ড থেকে আর্থিক সাহায্যের নির্দেশ দিয়ে মামলার নিষ্পত্তি করে। এই রায়ের ফলে এটা স্পষ্ট যে, আদালত এই দুর্নীতিগ্রস্ত নিয়োগ প্রক্রিয়াটিকে নতুন করে আর কোনও সুযোগ দিতে রাজি নয়।

WBPAY Team

আমাদের প্রতিবেদন গুলি WBPAY Team এর দ্বারা যাচাই করে লেখা হয়। আমরা একটি স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম যা পাঠকদের জন্য স্পষ্ট এবং সঠিক খবর পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য এবং সাংবাদিকতার মান সম্পর্কে জানতে, অনুগ্রহ করে আমাদের About us এবং Editorial Policy পৃষ্ঠাগুলি পড়ুন।
Back to top button