শিক্ষা

SSC Tainted List: এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি: ৭২৯৩ জন অযোগ্য প্রার্থীর তালিকা প্রকাশের নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের

SSC Tainted List: রাজ্যের শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ফের এক নজিরবিহীন ও কঠোর নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে এবার বড়সড় পদক্ষেপ নিলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ ওঠা মোট ৭,২৯৩ জন প্রার্থীর বিস্তারিত তালিকা অবিলম্বে কমিশনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। এই নির্দেশের ফলে রাজ্যের শিক্ষা মহলে এবং চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

মামলাকারীর অভিযোগ ও শুনানির প্রেক্ষাপট

দীর্ঘদিন ধরেই এসএসসি নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসছিল। মামলাকারীদের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানান যে, সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টের পূর্ববর্তী নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কমিশন এখনও পর্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করেনি। ইতিপূর্বে এসএসসি যে ৩,৫১২ জনের তালিকা দিয়েছিল, তা ছিল অসম্পূর্ণ। সেখানে প্রার্থীদের নাম থাকলেও, তাদের বাবার নাম, ক্যাটাগরি বা বিষয়ভিত্তিক কোনও তথ্য ছিল না। ফলে ওই নির্দিষ্ট প্রার্থীদের শনাক্ত করা সাধারণের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আইনজীবী শামিম জোরালো সওয়াল করেন যে, ওএমআর শিট বিকৃতি, র‍্যাঙ্ক জাম্প এবং প্যানেল বহির্ভূত নিয়োগের মতো একাধিক জালিয়াতির মাধ্যমে মোট ৭,২৯৩ জন অযোগ্য প্রার্থী চাকরি পেয়েছেন বা প্যানেলে স্থান করে নিয়েছেন। এই বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর পরিচয় গোপন রাখা বা তাদের আড়াল করা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।

তালিকায় আবশ্যিক যে বিষয়গুলি রাখতে হবে

বিচারপতি সিনহা কমিশনের আইনজীবীর বক্তব্য শোনার পর নির্দেশ দেন যে, শুধুমাত্র নাম প্রকাশ করলেই চলবে না। পাবলিক ডোমেইনে বা সবার দেখার জন্য যে তালিকা প্রকাশ করা হবে, তাতে যেন স্বচ্ছতার কোনও অভাব না থাকে। এই তালিকায় প্রতিটি প্রার্থীর ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত তথ্যগুলি থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে:

  • প্রার্থীর সম্পূর্ণ নাম।
  • পরীক্ষার রোল নম্বর।
  • প্রার্থীর বাবার নাম (শনাক্তকরণের সুবিধার্থে)।
  • প্রার্থীর ক্যাটাগরি এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিস্তারিত তথ্য।

দুর্নীতির ধরণ ও আদালতের কড়া অবস্থান

আদালত স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করে দিয়েছে যে ঠিক কোন কোন ক্যাটাগরির প্রার্থীদের নাম এই ‘টেইন্টেড’ বা কলঙ্কিত তালিকায় থাকবে। বিচারপতির নির্দেশ অনুযায়ী, মূলত চার ধরণের অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করতে হবে:

সবার আগে খবরের আপডেট পান!

টেলিগ্রামে যুক্ত হন

১. র‍্যাঙ্ক জাম্প (Rank Jump): মেধা তালিকায় পিছিয়ে থেকেও যারা প্রভাব খাটিয়ে বা নিয়ম ভেঙে উপরের দিকের র‍্যাঙ্কে উঠে চাকরি পেয়েছেন।
২. মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেল (Expired Panel): প্যানেলের আইনি মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও যারা রহস্যজনকভাবে নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছেন।
৩. প্যানেল বহির্ভূত (Out of Panel): মেধা তালিকায় নাম না থাকা সত্ত্বেও যারা পিছনের দরজা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন।
৪. ওএমআর গরমিল (OMR Mismatch): যাদের ওএমআর শিট বা উত্তরপত্রের নম্বরের সঙ্গে সার্ভারের নম্বরের বিস্তর ফারাক রয়েছে।

ভবিষ্যৎ নিয়োগে অংশগ্রহণ নিয়ে নিষেধাজ্ঞা

কেবল তালিকা প্রকাশই নয়, আদালত ভবিষ্যতের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। বিচারপতি অমৃতা সিনহা নির্দেশ দিয়েছেন যে, এই ৭,২৯৩ জন অযোগ্য বা কলঙ্কিত প্রার্থী যাতে ভবিষ্যতে এসএসসির কোনও নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় (Fresh Selection Process) অংশগ্রহণ করতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। আদালতের মতে, যারা একবার অসদুপায়ে চাকরি পাওয়ার চেষ্টা করেছেন, তাদের নতুন করে সুযোগ দেওয়া হলে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া বজায় রাখতেই এই কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা।

WBPAY Team

আমাদের প্রতিবেদন গুলি WBPAY Team এর দ্বারা যাচাই করে লেখা হয়। আমরা একটি স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম যা পাঠকদের জন্য স্পষ্ট এবং সঠিক খবর পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য এবং সাংবাদিকতার মান সম্পর্কে জানতে, অনুগ্রহ করে আমাদের About us এবং Editorial Policy পৃষ্ঠাগুলি পড়ুন।
Back to top button