SSC Supreme Court: সুপ্রিম কোর্টে SSC মামলার বড় আপডেট: খারিজের বদলে মিলল ‘লিভ গ্রান্ট’, হাই কোর্টে ফেরার সুযোগ
SSC Supreme Court: পশ্চিমবঙ্গের স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি (SSC) নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় আজ সুপ্রিম কোর্টে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শুনানি সম্পন্ন হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে প্রধান বিচারপতি এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চে এই জনস্বার্থ মামলাটির (PIL) শুনানি চলে। ২৪ নম্বর সিরিয়ালে থাকা এই মামলাটি ঘিরে আজ এজলাসে টানটান উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। শুনানির এক পর্যায়ে মামলাটি সরাসরি খারিজ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলেও, সিনিয়র আইনজীবীদের তৎপরতায় মামলাকারীদের জন্য একটি আশার আলো জিইয়ে রইল।
আজকের এই শুনানিতে আদালতের পর্যবেক্ষণ, আইনজীবীদের যুক্তি এবং চূড়ান্ত নির্দেশনামা নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
এজলাসে ভাষার ব্যবহার ও প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ
শুনানির শুরুতেই বিচারপতিদের মধ্যে ভাষার ব্যবহার নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়। যেহেতু বেঞ্চে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী উপস্থিত ছিলেন, যিনি কলকাতা হাই কোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছেন, তাই বাংলা ভাষা বোঝার ক্ষেত্রে তার বিশেষ সুবিধা ছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত আদালতের সওয়াল-জবাব এবং মূল কথোপকথন হিন্দিতেই সম্পন্ন হয়।
শুনানির শুরুতে প্রধান বিচারপতি (CJI) বেশ কিছু কঠোর পর্যবেক্ষণ সামনে আনেন:
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হন- তিনি স্পষ্টতই উল্লেখ করেন যে, দুর্নীতির ব্যাপকতার কারণে হাই কোর্ট ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ প্যানেলটি বাতিল বা ‘Set Aside’ করেছে।
- সুপ্রিম কোর্ট এর আগেও এই সংক্রান্ত বিষয়গুলি বিস্তারিত খতিয়ে দেখেছে এবং হস্তক্ষেপের কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে না পাওয়ায় পূর্ববর্তী আবেদনগুলি খারিজ করে দিয়েছে।
- প্রধান বিচারপতির সরাসরি প্রশ্ন ছিল, “যেখানে দুর্নীতি প্রমাণিত এবং সেই কারণেই হাই কোর্ট নিয়োগ বাতিল করেছে, সেখানে সুপ্রিম কোর্টের এখন আর কী করার আছে? আপনারা ঠিক কী চাইছেন?”
মামলাকারীদের যুক্তি ও আদালতের অবস্থান
মামলাকারী পক্ষের আইনজীবী শাহেন আদিত্য আদালতের সামনে চাকরিপ্রার্থীদের অসহায়তার কথা তুলে ধরেন। তিনি বিচারপতির প্রশ্নের উত্তরে জানান যে, তারা মূল রায় বা জাজমেন্টকে চ্যালেঞ্জ করছেন না। বরং, এই রায়ের ফলে সাধারণ ও যোগ্য পরীক্ষার্থীরা যে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, সেটাই তাদের মূল বক্তব্য।
আইনজীবী আদিত্যের প্রধান যুক্তিগুলি ছিল:
- ইতিমধ্যেই অযোগ্যদের তালিকা বা ‘Tainted List’ প্রকাশিত হয়েছে।
- যেখানে অযোগ্যদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে, সেখানে যোগ্য প্রার্থীরা কেন ভুক্তভোগী হবেন?
- জনস্বার্থ মামলার মাধ্যমে এই যোগ্য প্রার্থীদের সুবিচার নিশ্চিত করা হোক।
তবে এই যুক্তির পরেও প্রধান বিচারপতি মামলায় হস্তক্ষেপ করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন এবং মন্তব্য করেন, “ধন্যবাদ, আমি কিছু করতে পারব না।”
সিনিয়র আইনজীবীর হস্তক্ষেপ ও মামলার মোড় পরিবর্তন
মামলাটি যখন প্রায় খারিজ বা ‘Dismiss’ হওয়ার মুখে, ঠিক তখনই হস্তক্ষেপ করেন বিশিষ্ট সিনিয়র অ্যাডভোকেট করুণা নন্দী। তিনি এর আগেও ডিএ (DA) মামলায় জোরালো সওয়াল করেছিলেন। করুণা নন্দী আদালতকে অনুরোধ করেন যাতে মামলাটি সরাসরি খারিজ না করা হয়। তিনি আদালতের কাছে ‘লিভ গ্রান্ট’ (Leave Grant)-এর আবেদন জানান।
তার এই আবেদনের মূল উদ্দেশ্য ছিল, যাতে মামলাকারীরা তাদের বক্তব্য নিয়ে পুনরায় হাই কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন এবং তাদের আইনি লড়াইয়ের পথটি বন্ধ না হয়ে যায়।
মামলার চূড়ান্ত ফলাফল: এক নজরে
আজকের শুনানির নির্যাস নিচে একটি টেবিলের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো:
| বিষয় | বিবরণ |
|---|---|
| মামলার ধরণ | জনস্বার্থ মামলা (PIL) – SSC নিয়োগ দুর্নীতি |
| শুনানির বেঞ্চ | প্রধান বিচারপতি ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী |
| মামলাকারীর আইনজীবী | শাহেন আদিত্য ও করুণা নন্দী |
| চূড়ান্ত নির্দেশ | লিভ গ্রান্ট (Leave Granted) ও লিবার্টি টু মেনশন |
শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি সরাসরি খারিজ করেনি। আদালত ‘লিভ গ্রান্ট’ মঞ্জুর করেছে। এর অর্থ হলো মামলাটি আইনিভাবে শেষ হয়ে যায়নি। মামলাকারীরা এখন ‘লিবার্টি টু মেনশন’ (Liberty to Mention) ব্যবহার করে কলকাতা হাই কোর্টে তাদের বক্তব্য নতুন করে পেশ করতে পারবেন বা নতুন পিটিশন দাখিল করতে পারবেন।
আগামীকাল, অর্থাৎ পরবর্তী কার্যদিবসে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চে এসএসসি সংক্রান্ত আরও একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে, যা সম্ভবত লক্ষ্মী কুমার পাত্রের দায়ের করা মামলা। চাকরিপ্রার্থীদের নজর এখন সেই দিকেই।