SSC Supreme Court: এসএসসি নিয়োগ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের বড় রায়, হাইকোর্টের নির্দেশ খারিজ
SSC Supreme Court: পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ মামলায় ফের বড়সড় মোড় নিল সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৬ সালের এসএসসি (SSC) নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বয়সের ছাড় সংক্রান্ত বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ যে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দিয়েছিল, তাতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করল দেশের শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের ফলে আপাতত স্বস্তিতে স্কুল সার্ভিস কমিশন। বৃহস্পতিবার বিচারপতিরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন এবং মামলার বিস্তারিত শুনানির জন্য তা আবার হাইকোর্টেই ফেরত পাঠানো হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ ও শুনানির প্রেক্ষাপট
সুপ্রিম কোর্টের ১২ নম্বর কোর্টে এই গুরুত্বপূর্ণ মামলাটির শুনানি হয়। শুনানির সময় উঠে আসে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের দেওয়া নির্দেশের প্রসঙ্গ, যেখানে বয়সের ছাড় বা ‘এজ রিলাক্সেশন’ নিয়ে কমিশনকে পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছিল। শীর্ষ আদালতের বিচারপতিরা মন্তব্য করেন যে, লার্নেড সিঙ্গল বেঞ্চ সম্ভবত ‘অরুণিমা পাল’ মামলার রায়টি যথাযথভাবে অনুধাবন করতে পারেননি বা তার ভুল ব্যাখ্যা করেছেন। ডিভিশন বেঞ্চ যেখানে এই ধরণের সুযোগ প্রদান করেনি, সেখানে সিঙ্গল বেঞ্চের এমন নির্দেশ কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট।
কমিশনের যুক্তি বনাম মামলাকারীদের দাবি
শুনানিতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের হয়ে সওয়াল করেন বিশিষ্ট আইনজীবী কল্যাণ বন্দোপাধ্যায়। তিনি আদালতের সামনে জোরালো যুক্তি পেশ করে বলেন, ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রায় ২১ থেকে ২৬ লক্ষ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছিলেন। এত বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর মধ্যে কাদের বয়সের ছাড় দেওয়া সম্ভব আর কাদের নয়, তা নির্ধারণ করা কার্যত অসম্ভব। কমিশনের তরফে অভিযোগ করা হয় যে, হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ থেকে প্রতিনিয়ত এমন কিছু “ইনোভেটিভ অর্ডার” বা অভিনব নির্দেশ আসছে, যা পালন করতে গিয়ে কমিশনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে এফিডেভিট বা হলফনামা জমা দেওয়ার সুযোগ না দিয়েই রায় ঘোষণা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
অন্যদিকে, মামলাকারীদের হয়ে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য পাল্টা যুক্তি দেন। তিনি জানান, তাঁরা সমস্ত ২৬ লক্ষ পরীক্ষার্থীর জন্য বয়সের ছাড় চাইছেন না। তাঁদের দাবি শুধুমাত্র ওয়েটিং লিস্টে থাকা ‘আনটেইন্টেড’ বা যোগ্য প্রার্থীদের জন্য। বিকাশবাবু আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, কমিশন হলফনামা জমা দেওয়ার নাম করে সময় নষ্ট করতে চাইছে, যাতে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হয়।
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হনআদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
উভয় পক্ষের সওয়াল জবাব শোনার পর সুপ্রিম কোর্ট নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তগুলি জানিয়েছে:
- অন্তর্বর্তী নির্দেশে স্থগিতাদেশ: কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশে হস্তক্ষেপ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এর ফলে ৫ই ডিসেম্বরের মধ্যে আনটেইন্টেড ক্যান্ডিডেটদের তালিকা প্রকাশ করার যে নির্দেশ ছিল, তা আপাতত কার্যকর করতে হচ্ছে না।
- মামলা ফের হাইকোর্টে: বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য আবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চেই ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে এবার সব পক্ষকে বিস্তারিতভাবে শুনে এবং হলফনামা বা এফিডেভিট বিনিময় করে তবেই রায় দিতে হবে।
- ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ: আদালতের ছুটির পর, অর্থাৎ প্রায় তিন সপ্তাহ বাদে হাইকোর্টে এই মামলার বিস্তারিত শুনানি হবে। সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে যে, হাইকোর্টকে এমন একটি যুক্তিপূর্ণ (Reasonable) অর্ডার পাস করতে হবে যাতে এই একই বিষয় নিয়ে বারবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে না হয়।
কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির মধ্যে গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পর নিয়োগ প্রক্রিয়ার জট কবে খোলে, এখন সেটাই দেখার।