Voter List Controversy: ১ জন ভোটারের নাম ৪০ জায়গায়! SIR আবহে বিস্ফোরক তথ্য, তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা
Voter List Controversy: পশ্চিমবঙ্গের পাণ্ডবেশ্বরে ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া (SIR) চলাকালীন এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে, যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। আসন্ন নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে পাণ্ডবেশ্বরের একটি ঘটনা। সেখানে একজন মাত্র মহিলার নাম রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মোট ৪০টি জায়গায় নথিভুক্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই অদ্ভুত অসঙ্গতি প্রকাশ্যে আসতেই শাসক ও বিরোধী দলের মধ্যে শুরু হয়েছে তীব্র বাদানুবাদ।
ঘটনার সূত্রপাত ও বিস্তারিত তথ্য
পাণ্ডবেশ্বরের ডিভিসি পাড়ার ৪৭ নম্বর বুথের বাসিন্দা হলেন মায়ারানী গোস্বামী। সম্প্রতি ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ বা এনুমারেশন (Enumeration) প্রক্রিয়া চলাকালীন তিনি তাঁর ফর্ম জমা দেন। নিয়ম অনুযায়ী, ফর্ম জমা নেওয়ার সময় তাঁর তথ্যের কিউআর কোড (QR Code) স্ক্যান করা হয়। আর তখনই বেরিয়ে আসে এই অবিশ্বাস্য তথ্য। সিস্টেমে দেখা যায়, মায়ারানী দেবীর নাম সারা পশ্চিমবঙ্গের মোট ৪০টি আলাদা আলাদা জায়গায় ভোটার তালিকায় রয়েছে।
এই ঘটনায় নির্বাচন ব্যবস্থার যান্ত্রিক ত্রুটি নাকি ইচ্ছাকৃত কারচুপি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অসঙ্গতিগুলি আরও স্পষ্ট করার জন্য নিচে একটি তালিকা দেওয়া হলো:
| বিবরণ | পর্যবেক্ষণ |
|---|---|
| ভোটারের নাম ও পদবী | মায়ারানী গোস্বামীর পদবী বিভিন্ন তালিকায় পরিবর্তিত হয়ে বৈদ্যনাথপুর হাইস্কুল সহ অন্যান্য ঠিকানায় ভিন্ন ভিন্ন ভাবে নথিভুক্ত হয়েছে। |
| স্বামীর নামের ভিন্নতা | সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো স্বামীর নাম ও পদবীল পরিবর্তন। কোথাও স্বামীর নাম ‘গৌর রায়’, কোথাও ‘গৌর মুর্মু’, কোথাও ‘গৌর জানা’, আবার কোথাও ‘গৌর আদক’। |
কী বলছেন মায়ারানী দেবী?
স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় হতবাক খোদ ভোটার মায়ারানী দেবী। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, ডিভিসি পাড়া এবং অন্য একটি জায়গা ছাড়া আর কোথাও তাঁর নাম থাকার কথা তিনি জানেন না। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “আমার ভোটার কার্ড তো আছেই, আমি জানি না অন্য জায়গায় নাম কীভাবে এল।” তিনি নিজে এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করেছিলেন বলে দাবি করেছেন, কিন্তু এই বিপুল সংখ্যক এন্ট্রি সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণ অন্ধকারে।
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হনরাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে
এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে।
- বিজেপির অভিযোগ: বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি এই ঘটনাকে গণতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকারক বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর অভিযোগ, “একজন মহিলার নাম সারা বাংলায় ৪০-৪৪ জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে, যা প্রমাণ করে SIR বা ভোটার তালিকা সংশোধনের কতটা প্রয়োজন।” তিনি আরও দাবি করেন, তৃণমূল কংগ্রেস ভুয়ো ভোটার তৈরি করে নির্বাচনে কারচুপি করার উদ্দেশ্যেই এসইআর প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করছে।
- তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া: অন্যদিকে, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের মতে, এটি নির্বাচন কমিশনের যান্ত্রিক বা তথ্যগত ভুল হতে পারে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে, হরিয়ানাতেও বাইরের রাজ্যের মডেলের নাম একাধিক জায়গায় পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাই অহেতুক তৃণমূলকে দোষারোপ না করে এটি নির্বাচন কমিশনের খতিয়ে দেখা উচিত বলে তারা মনে করে।
ভোটার তালিকা সংশোধনে ডিজিটাল অগ্রগতি
এই বিতর্কের মাঝেই ভোটার তালিকা সংশোধন ও ডিজিটাইজেশন প্রক্রিয়ায় কিছু ইতিবাচক খবরও পাওয়া গেছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে:
- রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ৯৯.৭৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৭ কোটি ৬৪ লক্ষ এনুমারেশন ফর্ম বিলি করা হয়েছে।
- এর মধ্যে ৩ কোটি ৭৭ লক্ষ ফর্ম ডিজিটাইজড করা সম্ভব হয়েছে, যা মোট কাজের প্রায় ৪৯.২৬ শতাংশ।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য, নদিয়ার রানাঘাট উত্তর-পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের বিএলও (BLO) ওয়াহিদ আকরাম মন্ডল এবং পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকের বিএলও বৃষকেতু কুইরি ১০০ শতাংশ ফর্ম ডিজিটাইজড করে নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃতি লাভ করেছেন। পাণ্ডবেশ্বরের ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন নাকি এর গভীরে বড় কোনো সমস্যা রয়েছে, তা সময় এবং তদন্তই বলবে।