WBCHSE Exam Rules: উচ্চ মাধ্যমিকে খাতা দেখা ও গার্ড ডিউটি নিয়ে শিক্ষকদের জন্য কড়া নির্দেশিকা সংসদের, দেখুন বিস্তারিত
WBCHSE Exam Rules: পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ (WBCHSE) রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে এবং পরীক্ষা পরিচালনা পদ্ধতিকে আরও নিখুঁত করতে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আসন্ন উচ্চ মাধ্যমিকের সেমিস্টার পদ্ধতির পরীক্ষার জন্য খাতা দেখা এবং গার্ড দেওয়ার নিয়মে বড়সড় রদবদল আনা হয়েছে। বিশেষ করে ইনভিজিলেটর বা পরীক্ষক হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের জন্য জারি করা হয়েছে এক বিশেষ নির্দেশিকা। সংসদের এই নতুন সিদ্ধান্ত রাজ্যের শিক্ষক মহলে এবং ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
লুজ শিট বা অতিরিক্ত উত্তরপত্র নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত
এতদিন পর্যন্ত মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় মূল খাতার পাতা শেষ হয়ে গেলে পরীক্ষার্থীরা অতিরিক্ত পাতা বা ‘লুজ শিট’ (Loose Sheet) নিতে পারতেন। কিন্তু সংসদের নতুন নিয়মে এই প্রথা সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে।
- লুজ শিট নিষিদ্ধ: উচ্চ মাধ্যমিকের চতুর্থ সেমিস্টারের পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের আর কোনোভাবেই লুজ শিট দেওয়া হবে না।
- বিকল্প ব্যবস্থা: পরীক্ষার্থীদের যাতে লিখতে কোনো অসুবিধা না হয়, তার জন্য মূল খাতার বা উত্তরপত্রের আয়তন বা ভলিউম বাড়ানো হবে। অর্থাৎ, খাতায় পাতার সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেশি থাকবে।
- প্রশ্নের ধরণ: প্রশ্নপত্র এমনভাবেই সেট করা হবে যাতে পরীক্ষার্থীরা নির্ধারিত পাতার মধ্যেই তাদের উত্তর সম্পন্ন করতে পারেন।
ইনভিজিলেটরদের জন্য ‘লাস্ট এন্ট্রি’র কড়াকড়ি
নির্বাচনী ডিউটির ধাঁচে এবার পরীক্ষার হলেও কড়া নিয়ম চালু করতে চলেছে সংসদ। বিধানসভা বা লোকসভা ভোটে যেমন ‘ফর্ম ১৭এ’ বা ভোটারস রেজিস্টারে শেষ ভোটের পর প্রিসাইডিং অফিসারকে দাগ টেনে সই করে ‘লাস্ট এন্ট্রি’ নিশ্চিত করতে হয়, ঠিক তেমনই নিয়ম চালু হচ্ছে পরীক্ষার খাতায়।
পরীক্ষার্থী তার উত্তরপত্রের ঠিক যে লাইনে বা যে স্থানে লেখা শেষ করবেন, ইনভিজিলেটরকে ঠিক সেখানেই স্বাক্ষর করতে হবে। এতদিন গার্ড দেওয়ার সময় শিক্ষকরা সাধারণত খাতার শুরুতে বা নির্দিষ্ট বক্সে সই করতেন। কিন্তু এবার থেকে লেখা শেষ হওয়ার স্থানেই ইনভিজিলেটরের স্বাক্ষর থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা হবে যে, পরীক্ষার্থীর লেখা ঠিক ওই জায়গাতেই শেষ হয়েছে এবং পরে কিছু জোড়া হয়নি।
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হনপুরোনো বনাম নতুন নিয়মের তুলনা
শিক্ষক ও পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে নতুন এবং পুরোনো নিয়মের একটি তুলনামূলক চিত্র নিচে দেওয়া হলো:
| বিষয় | পুরোনো নিয়ম | নতুন নিয়ম (২০২৬ থেকে) |
|---|---|---|
| অতিরিক্ত পাতা (Loose Sheet) | প্রয়োজন মতো নেওয়া যেত। | সম্পূর্ণ বন্ধ। মূল খাতার পাতা বাড়ানো হবে। |
| ইনভিজিলেটরের স্বাক্ষর | নির্দিষ্ট বক্সে সই করতেন। | উত্তর শেষ হওয়ার ঠিক জায়গায় সই করতে হবে। |
| আরটিআই জটিলতা | পাতা হারানোর অভিযোগ উঠত। | স্বচ্ছতা থাকবে, পাতা হারানোর সুযোগ নেই। |
কেন এই আমূল পরিবর্তন?
এই নতুন নিয়মগুলি চালু করার পেছনে সংসদের মূল উদ্দেশ্য হলো পরীক্ষার খাতা সংক্রান্ত আইনি জটিলতা ও বিভ্রান্তি এড়ানো। রেজাল্ট বেরোনোর পর অনেক সময় পরীক্ষার্থীরা আশানুরূপ নম্বর না পেলে খাতা চ্যালেঞ্জ করেন বা আরটিআই (RTI) করেন। সেক্ষেত্রে অনেক পরীক্ষার্থী দাবি করেন যে তারা আরও বেশি উত্তর লিখেছিলেন বা লুজ শিট খাতা থেকে হারিয়ে গেছে।
উত্তরপত্রের শেষে ইনভিজিলেটরের স্বাক্ষরের নিয়মটি চালু হলে এই ধরণের সমস্যা পুরোপুরি দূর হবে। কারণ, ওই স্বাক্ষরই প্রমাণ দেবে যে ঠিক কোন জায়গায় উত্তর লেখা শেষ হয়েছে এবং এরপর আর কোনো পাতা বা লেখা ছিল না।
কবে থেকে কার্যকর হচ্ছে এই নিয়ম?
সংসদ সূত্রে খবর, এই নতুন নিয়মটি আগামী ২০২৬ সালের উচ্চ মাধ্যমিক ফোর্থ সেমিস্টার পরীক্ষা থেকে কার্যকর হবে। যেহেতু রাজ্যের সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাকেই পর্যায়ক্রমে গার্ড বা ইনভিজিলেশনের দায়িত্ব পালন করতে হয়, তাই এই বিষয়টি সকলের জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। খুব শীঘ্রই সংসদ এ বিষয়ে বিস্তারিত গাইডলাইন বা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে, যেখানে স্বাক্ষরের পদ্ধতি সম্পর্কে আরও স্পষ্ট নির্দেশ থাকবে।