Joint Taxation Proposal: দম্পতিদের জন্য বড় খবর! একসঙ্গে আয়কর রিটার্ন জমার সুযোগ? বাজেটের আগেই জল্পনা তুঙ্গে
Joint Taxation Proposal: ২০২৬ সালের বাজেট পেশের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে নর্থ ব্লকে। অর্থমন্ত্রকের কাছে বিভিন্ন মহল থেকে প্রাক-বাজেট প্রস্তাবনা আসতে শুরু করেছে। এর মধ্যে ইনস্টিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অফ ইন্ডিয়া (ICAI)-এর একটি বিশেষ প্রস্তাব নজর কেড়েছে সকলের। এই প্রস্তাবে বিবাহিত দম্পতিদের জন্য ‘ঐচ্ছিক যৌথ কর ব্যবস্থা’ (Optional Joint Taxation) চালু করার কথা বলা হয়েছে। যদি অর্থমন্ত্রক এই প্রস্তাব গ্রহণ করে, তবে ভারতের ব্যক্তিগত আয়কর কাঠামো এবং পারিবারিক অর্থ ব্যবস্থাপনায় এক বড়সড় পরিবর্তন আসতে পারে।
প্রস্তাবটি আসলে কী?
বর্তমানে ভারতের আয়কর আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক ব্যক্তিকে পৃথক করদাতা হিসেবে গণ্য করা হয়। স্বামী এবং স্ত্রী, উভয়েই যদি উপার্জনক্ষম হন, তবুও তাঁদের আলাদা আলাদা আয়কর রিটার্ন (ITR) জমা করতে হয়। এমনকি তাঁদের যদি যৌথ আয় বা খরচ থাকে, তবুও করের হিসাব হয় পৃথকভাবে।
ICAI-এর প্রস্তাব অনুযায়ী, বিবাহিত দম্পতিদের একটি একক বা যৌথ রিটার্ন জমা দেওয়ার বিকল্প দেওয়া উচিত। অর্থাৎ, তাঁরা চাইলে দুটির বদলে একটি ফাইলে দুজনেই তাঁদের আয় এবং ছাড়ের হিসাব দেখাতে পারবেন। এটি বাধ্যতামূলক নয়, বরং দম্পতিরা বেছে নিতে পারবেন যে আলাদাভাবে ফাইল করা তাঁদের জন্য লাভজনক, নাকি একসঙ্গে।
কেন এই যৌথ কর ব্যবস্থার সুপারিশ?
ICAI-এর মতে, এই ব্যবস্থা চালু হলে করদাতাদের ওপর থেকে বোঝা কমবে এবং প্রক্রিয়াটি আরও সহজ হবে। এর প্রধান সুবিধাগুলি হলো:
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হন- সহজীকরণ: দম্পতিরা একসঙ্গে তাঁদের কর সংক্রান্ত বিষয়গুলি পরিচালনা করতে পারবেন, যা কাগজের কাজ কমাবে।
- কর ছাড়ের সুবিধা: বিশেষ করে যে পরিবারে মাত্র একজন উপার্জন করেন, তাঁদের জন্য এটি অত্যন্ত লাভজনক হতে পারে। যৌথ কর ব্যবস্থায় করছাড়ের সীমা এবং স্ল্যাবগুলি পরিবারের অনুকূলে থাকতে পারে।
- আন্তর্জাতিক মানদণ্ড: আমেরিকা, জার্মানি, স্পেন এবং পর্তুগালের মতো অনেক দেশেই বিবাহিত দম্পতিদের জন্য যৌথ ফাইলিং বা জয়েন্ট অ্যাসেসমেন্টের ব্যবস্থা রয়েছে। ভারতও এই পথে হাঁটলে তা আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।
প্রস্তাবিত মডেলে কর কাঠামো কেমন হতে পারে?
যদি এই প্রস্তাব গৃহীত হয়, তবে কর কাঠামোর সম্ভাব্য রূপরেখা হতে পারে নিম্নরূপ:
- দম্পতিরা ‘জয়েন্ট ফাইলিং অপশন’-এর অধীনে একটি মাত্র সংহত আয়কর রিটার্ন জমা দেবেন।
- যৌথ ফাইলিংকারীদের জন্য করের স্ল্যাব পুনর্বিন্যাস করা হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, দম্পতির মোট আয়ের ওপর ৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কোনো কর নাও থাকতে পারে। এরপর ৬-১৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ৫% কর এবং পরবর্তী ধাপে উচ্চতর স্ল্যাব প্রযোজ্য হতে পারে।
- স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন, সারচার্জের সীমা এবং অন্যান্য ছাড়ের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসতে পারে। উভয় স্বামী-স্ত্রী যদি বেতনভুক কর্মচারী হন, তবে উভয়ের জন্য পৃথক স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনের ব্যবস্থাও থাকতে পারে।
ভারতীয় পরিবারের ওপর প্রভাব: একটি বিশ্লেষণ
এই ব্যবস্থা চালু হলে বিভিন্ন ধরনের পরিবারের ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে, তা নিচের সারণীতে তুলে ধরা হলো:
| পরিবারের ধরন | সম্ভাব্য সুবিধা |
|---|---|
| একক উপার্জনকারী দম্পতি (স্বামী বা স্ত্রীর একজন কর্মহীন) | যৌথ করছাড়ের সুবিধা মিললে করের বোঝা কমবে। রিটার্ন ফাইলিং অনেক সহজ হবে। |
| স্বল্প আয়ের দ্বৈত উপার্জনকারী দম্পতি | উচ্চতর বেসিক এক্সেম্পশন এবং স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনের সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। আলাদা রিটার্ন জমার চেয়ে কম কর দিতে হতে পারে। |
| উচ্চ আয়ের দ্বৈত উপার্জনকারী দম্পতি | এক্ষেত্রে সুবিধা সীমিত হতে পারে। দুজনের আয় যোগ করলে তা উচ্চতর কর স্ল্যাবে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সাবধানী মূল্যায়ণ প্রয়োজন। |
| গৃহঋণ বা সন্তানসহ পরিবার | সঠিকভাবে কাঠামো তৈরি হলে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন, ৮০সি এবং গৃহঋণের সুবিধাগুলি আরও ভালোভাবে কাজে লাগানো যাবে। |
চ্যালেঞ্জ এবং সতর্কতা
যদিও ধারণাটি আকর্ষণীয়, কিন্তু ভারতে এটি বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বর্তমান প্যান কার্ড, টিডিএস (TDS) এবং টিসিএস (TCS) সিস্টেমগুলি ব্যক্তিগত করদাতাদের জন্য ডিজাইন করা। যৌথ ফাইলিংয়ের জন্য সম্পূর্ণ ডেটা আর্কিটেকচার নতুন করে সাজাতে হবে। এছাড়া, কর ফাঁকি বা আয়ের কৃত্রিম বিভাজন রোধে কঠোর নির্দেশিকা প্রয়োজন। বিশেষ করে, হোম লোন বা ৮০সি-র মতো ছাড়গুলি দুজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে কীভাবে প্রযোজ্য হবে, তা স্পষ্ট করা জরুরি।
ICAI-এর এই প্রস্তাব যদি ২০২৬-২৭ বাজেটে গৃহীত হয়, তবে তা শুধুমাত্র কর ব্যবস্থাকে সহজ করবে না, বরং পরিবারকে একটি অর্থনৈতিক ইউনিট হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। তবে এটি সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক হওয়ায় দম্পতিরা তাঁদের সুবিধা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা পাবেন।