Emergency Fund: হঠাৎ চাকরি গেলে বা অসুস্থ হলে কী করবেন? আর্থিক সুরক্ষার জন্য Emergency Fund কেন জরুরি, জেনে নিন
Emergency Fund: ভাবুন তো একবার, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন আপনার অফিসের তরফ থেকে একটি ইমেল এসেছে, যেখানে হঠাৎ কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা বলা হয়েছে। অথবা, এমনও হতে পারে যে, আপনার গাড়িটি হঠাৎ রাস্তায় খারাপ হয়ে গেল এবং মেরামতির খরচ আপনার বেতনের অর্ধেকেরও বেশি। জীবনে এমন অপ্রত্যাশিত খরচ যেকোনো সময় আসতে পারে এবং সেই মুহূর্তে আমাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা এক ঝটকায় শেষ হয়ে যেতে পারে।
এই ধরনের পরিস্থিতির জন্যই ‘জরুরী তহবিল’ বা ‘Emergency Fund’-এর ধারণাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি জীবনের অপ্রত্যাশিত ধাক্কা সামলানোর জন্য আপনার ব্যক্তিগত সুরক্ষাকবচ। এটি কোনো বিনিয়োগের মতো রিটার্ন দেয় না, কিন্তু তার চেয়েও অনেক বেশি মূল্যবান জিনিস দেয় – মনের শান্তি। চলুন, এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
জরুরী তহবিল (Emergency Fund) কী?
জরুরী তহবিল হলো একটি আর্থিক সুরক্ষা জাল, যা আপনাকে কোনো ঋণ বা ধার না করে অপ্রত্যাশিত খরচ সামলাতে সাহায্য করে। এটিকে আপনার ব্যক্তিগত উদ্ধার তহবিল হিসাবে ভাবতে পারেন, যা শুধুমাত্র আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য আলাদা করে রাখা হয়, কোনো ছুটি কাটানো বা শখের কেনাকাটার জন্য নয়।
এই তহবিলের মূল উদ্দেশ্য হলো, যখন জীবন আপনার সামনে কোনো অপ্রত্যাশিত সমস্যা নিয়ে আসে, যেমন – চিকিৎসার জরুরী অবস্থা, হঠাৎ চাকরি চলে যাওয়া, বাড়ির বড় কোনো মেরামত বা অন্য কোনো জরুরি খরচ যা স্থগিত করা সম্ভব নয়, তখন যেন আপনার কাছে অবিলম্বে টাকা উপলব্ধ থাকে।
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হনEmergency Fund কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
১. আপনাকে ঋণ থেকে রক্ষা করে:
যখন অপ্রত্যাশিত খরচ আসে, তখন অনেকেই ক্রেডিট কার্ড বা পার্সোনাল লোনের দিকে ঝোঁকেন। এটি সুবিধাজনক মনে হলেও, আপনাকে সুদের চক্রে আটকে ফেলতে পারে। একটি জরুরী তহবিল থাকলে আপনি ধার না করেই এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারবেন।
২. মানসিক শান্তি নিয়ে আসে:
কঠিন সময়ের জন্য টাকা জমানো আছে জানলে আর্থিক দুশ্চিন্তা কমে যায়। তখন আপনি কীভাবে বিল মেটাবেন তা নিয়ে চিন্তা না করে, সমস্যা সমাধানের উপর মনোযোগ দিতে পারবেন।
৩. আপনাকে স্বাধীন থাকতে সাহায্য করে:
আর্থিক সংকটের সময় অনেককে বন্ধু বা পরিবারের কাছ থেকে টাকা ধার করতে হয়। আপনার নিজের তহবিল থাকলে, আপনাকে অন্যের উপর নির্ভর করতে হবে না বা কঠিন সময়ে লজ্জিত হতে হবে না।
৪. দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য সুরক্ষিত রাখে:
জরুরী তহবিল না থাকলে, আপনাকে হয়তো আপনার বড় লক্ষ্যের জন্য জমানো টাকা, যেমন – সন্তানের পড়াশোনা, গাড়ি কেনা বা বাড়ি তৈরির সঞ্চয় থেকে টাকা তুলে নিতে হতে পারে। একটি আলাদা ব্যাকআপ থাকলে তা আপনার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাকে সুরক্ষিত রাখে।
আপনার কতটা টাকা সঞ্চয় করা উচিত?
এর কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই, তবে বিশেষজ্ঞরা সাধারণত আপনার ৩ থেকে ৬ মাসের মৌলিক খরচ চালানোর মতো যথেষ্ট টাকা সঞ্চয় করার পরামর্শ দেন।
কীভাবে এর পরিমাণ গণনা করবেন:
- মাসিক অপরিহার্য খরচ গণনা করুন: আপনার বাড়ি ভাড়া, মুদিখানার খরচ, যাতায়াত, ইউটিলিটি বিল, EMI এবং সাধারণ চিকিৎসার খরচ যোগ করুন।
- ৩ থেকে ৬ দিয়ে গুণ করুন: যদি আপনার মাসিক খরচ ৩০,০০০ টাকা হয়, তাহলে আপনার জরুরী তহবিলের লক্ষ্য হওয়া উচিত ৯০,০০০ টাকা থেকে ১.৮ লক্ষ টাকা।
- অল্প দিয়ে শুরু করুন, ধারাবাহিক থাকুন: আপনাকে একবারে পুরো টাকাটা জমাতে হবে না। একটি ছোট লক্ষ্য দিয়ে শুরু করুন, যেমন ১০,০০০ টাকা, এবং প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সরিয়ে রেখে ধীরে ধীরে এটি তৈরি করুন। মাসে ৫০০ বা ১,০০০ টাকাও সময়ের সাথে সাথে একটি বড় পার্থক্য তৈরি করতে পারে।
- সহজলভ্য কিন্তু আলাদা রাখুন: আপনার জরুরী তহবিলের টাকা এমন জায়গায় রাখুন যেখান থেকে সহজে তোলা যায়, কিন্তু আপনার দৈনন্দিন খরচের অ্যাকাউন্ট থেকে আলাদা রাখুন, যেমন একটি পৃথক সেভিংস অ্যাকাউন্ট। এখানে মূল বিষয় হলো টাকার তারল্য (liquidity), লাভ নয়।
Disclaimer: এই নিবন্ধটি শুধুমাত্র তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। কোনো রকম বিনিয়োগ করার আগে অনুগ্রহ করে একজন আর্থিক উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।